বিজয়কুমার দাস
থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম : পর্ব ২৬
থিয়েটারের অঙ্গণে ড: গৌরব দাসের অনুচিন্তন এখন চমকে দেওয়ার মত কাজ করে চলেছে থিয়েটার নিয়ে। সেই দলে গড়ে উঠছে একদল নতুন মুখ। এই দলের অন্যতম লড়াকু অভিনেতা সমর মৃধার কাছে থিয়েটারই এখন ধ্যান জ্ঞান। দশ বছরের মত থিয়েটারে যুক্ত থাকলেও প্রফেশনাল গ্রুপ থিয়েটারে সমর জড়িয়ে আছে বছর ছয়েক। এখন সে নিজেকে গড়েপিটে একজন যথার্থ থিয়েটারকর্মী হয়ে ওঠার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।এক সাক্ষাৎকারে সমর জানিয়েছে, এই লড়াইএ সে জিততে চায়। হয়ে উঠতে চায় একজন যোগ্য অভিনেতা। সে জানে, এ বড় কঠিন লড়াই।তবু লড়াইটা সে চালিয়ে যাচ্ছে।
প্রথমে ভাল লাগা থেকেই সমরের যোগ থিয়েটারের সঙ্গে। অর্থাৎ ভাল লাগা থেকেই সে থিয়েটারে এসেছিল। এখন সে বুঝতে পারে, সেই ভাল লাগার মধ্যে একটা ভালবাসা ছিলই। এখন থিয়েটারটা তার কাছে অক্সিজেনের মত বেঁচে থাকার রসদ। সে স্পষ্টই জানিয়েছে, থিয়েটারটা ছাড়া আর কোনদিন তো কিছু করতে পারিনি।পারব কিনা তাও জানি না। তাই থিয়েটারটাই সে মন দিয়ে করতে চাইছে। থিয়েটার করা ছাড়া তার কাছে আর অন্য কোন উপায় নেই। এটা সে মর্মে মর্মে বুঝেছে।

সন্তোষপুর অনুচিন্তন দলের একজন থিয়েটারকর্মী হিসাবে সে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে। থিয়েটার তার কাছে একটা লড়াই।এই লড়াইএ সে জিততে চায়। এই দলের প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই সমর যুক্ত আছে অনুচিন্তনে। দলের নির্দেশক ড: গৌরব দাস তার কাজের গুণে বাংলা থিয়েটারমহলকে চমকে দিচ্ছে। অন্যদলে থিয়েটার করতে এসে গৌরবের সাথে তার পরিচয় হয়। আর সেই সূত্রেই অনুচিন্তনের মত গ্রুপ থিয়েটারের সাথে তার লড়াই শুরু হয়েছে থিয়েটার অঙ্গণে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “রোগের চিকিৎসা” নামক ছোট্ট একটি নাটকে তার প্রথম অভিনয়। তারপর ২০১৭-২০২৫ পর্যন্ত তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই। অভিনীত নাটকের মধ্যে ঘর (Ghar) নাটকের জাফর চরিত্রটা তার প্রিয় চরিত্র। এই চরিত্রে অভিনয় যেহেতু কঠিন তাই এটাই তার প্রিয় চরিত্র। জাফর একটা সমকামী চরিত্র। এই চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে ভাঙতে ভাঙতে গড়ে উঠেছে “জাফর” হিসাবে। কোথায় যেন এই চরিত্রের সাথে নিজের একটা মিল খুঁজে পেয়েছে বলে তার মনে হয়েছে। এছাড়া “ইন সার্চ অফ গডেস শীতলা” নাটকের জগাই চরিত্রটাও তার প্রিয় চরিত্রের তালিকায়।
থিয়েটার জগৎ সমরের কাছে একটা কল্পনার জগৎ। এই জগৎটা তার কাছে সুন্দর একটা জগৎ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে সে যেন নিজেকে আবিষ্কার করেছে প্রতি মুহূর্তে। বাস্তব আর কল্পনা মিশিয়ে থিয়েটার সমরের কাছে এক মজার জগৎ। থিয়েটার করে বাঁচা যায় কিনা সে এখনও জানে না। কিন্তু এই সত্যটা সে উপলব্ধি করেছে যে, থিয়েটার না করলে সে মরে যাবে। তার কাছে এখন থিয়েটারই হল বেঁচে থাকার মাধ্যম। এই থিয়েটার করার ক্ষেত্রে তার বাবা গৌতম মৃধা ও মা লক্ষ্মী মৃধার অবদান তার কাছে অনস্বীকার্য। তার মা লোকের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালায়,আর বাবা রাজমিস্ত্রির কাজ করে। কিন্তু তাঁরা সমরের থিয়েটারে উৎসাহ জুগিয়েছেন বলেই এমন একটা পরিবারে থেকেও সে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে। এটা তার কাছে একটা বড় পাওয়া। এছাড়া অনুচিন্তন কর্ণধার ড: গৌরব দাসের ভূমিকা তার জীবনে বড় সম্পদ বলে সে জানিয়েছে। নাটক করতে করতেই নাটক শিখেছে সে। কালারি, থাঙটা, কনটেম্পোরারি ড্যান্স, পুরুলিয়া ছৌ, সরাইকেলা ছৌ, শীতলা যাত্রা, মডার্ণ এক্টিং, লোকগীতি সবই আয়ত্ত করেছে থিয়েটারের জন্য।
বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর উত্তীর্ণ সমর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্পেশাল বি এড ইন মালটিপল ডিসএবিলিটিস নিয়ে পড়াশুনোয় ব্যস্ত রেখেছে নিজেকে। পাশাপাশি থিয়েটার করে চলেছে।গড়ফা ধীরেন্দ্রনাথ হাই স্কুল ও সম্মিলনী মহাবিদ্যালয়ে তার স্কুল ও কলেজ শিক্ষা। ২০১৭-২০২৫ পর্যন্ত তার অভিনীত নাটকের সংখ্যা ৪২। তবু আরো নাটক করতে চায় সমর। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে নিজেকে আবিষ্কার করতে চায় অনুচিন্তনের সমর মৃধা।