বাংলা নাটক ‘অপেক্ষার দশ বছর’ যেন ভ্যালেন্টাইন ডে’তে তানজিন তিশার মাস্টার স্ট্রোক

- Advertisement -

নৈতিক রায়

বাংলাদেশের এই মুহুর্তের আর এক সু-অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব’র অভিনয়ে গত ১৪ই ফেব্রুয়ারি হৈ হুল্লোর চ্যানেলে প্রযোজনায় ও পরিবেশনায় দেখা গেল ‘অপেক্ষার দশ বছর’। নাটকের গল্প ও পরিচালনা সোহেল আরমান। এই নাটকে অপূর্ব’র বিপরীতে দেখা গেছে অভিনেত্রী তানজিন তিশাকে। এই দুজনের অভিনয় রসায়ন দর্শকের কাছে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে।

টিনএজ গল্পের আঙ্গিকে মাত্র দশটি বছরকে ধরে রেখে গল্পের বাঁধন। ফ্ল্যাসব্যাকের পথ ধরে একটু একটু করে প্রকাশিত হয় তানজিন তিশা চরিত্রের … ১০ বছর জেলে থাকার কারণ। একজন নায়িকা হয়ে সে জেল থেকে দশ বছর পর ছাড়া পাচ্ছে এই প্রেক্ষাপটে ছবির শুরু, যেখানে নায়ক তাকে রিসিভ করার জন্য অপেক্ষা করে আছে।

মানবিক জেলার বয়ানে উন্মোচিত হয় নায়ক নায়িকার প্রেম কাহিনী আর সেই অসফল প্রেমের মর্মকথা। তিশা এই সকল চরিত্রে ভীষণ ভালো অভিনয় করে। নায়ক সুজন আর নায়িকা রেহেনুমা দুজনে এই ছবির একে অপরের চাহনেবালা নয়। সুজনে নিভৃতে ভালোবেসে ফেলে  রেহেনুমাকে। কিন্তু রেহেনুমার হৃদয়ে আসে অন্য পুরুষ। সে তাকেই ভালোবাসে।

(নাটকটি দেখতে শুধু ক্লিক করুন)

সুজনের বাবার বাল্যবন্ধুর বাড়ির চিলেও কোঠার একটি ঘরে ভাড়া নিয়ে আসে সুজন রূপী অপূর্ব। ধীরে সেই পরিবারের সকলের কাছে সুনজরে পড়ে সুজন। কিন্তু রেহেনুমা তাকে সহ্য করতে পারে না যেন। কারোন প্রথম সাক্ষাতে অপূর্বর বেয়াদপি মার্কা কথাবার্তা শুনে ফেলে রেহেনুমা। প্রথম যেদিন ছাদের চিলেকোঠায় সুজন দরজা খুলে ঢুকতে যায়, সে চাবি দিয়ে তালা না খুলতে পেরে সেই মালিককে বাপ বাপান্ত করে, সেই কথা আড়ালে থাকা রেহেনুমা অর্থাৎ তিশা শুনতে পায়। বাবার সম্পর্কে এহেন মন্তব্য তাকে আঘাত করে। সে যখন তার বাবাকে বলে দেবার কথা সুজনকে জানায়, তখন সুজন তাকে অনুরোধ করে, সেই কথাটা না বলতে।

রেহেনুমাও সেই কথা চেপে যায়, আর পরবর্তীতে সেই কথাটা বলে দেবার হুমকি দিয়ে রেহেনুমা তারই চিলেকোঠার ঘরে বা ছাদে প্রেমিককে এনে প্রেম করার সুযোগ নেয়। একসময় জীবনের একটি বড় সিদ্ধান্ত বিয়ের মতো একটা কাজ সে সেই চিলেকোঠায় বাবা ও মা অমতে করতে চায়। অপুর্বর সারল্য ও রেহেনুমাকে অব্যক্ত প্রেমের আকর্ষণ তাকে না বলতে পারে না।  সেইদিন সে তার চিলের কোঠার রুমে দেরী করে আসে, আর ঘরে ঢুকে দেখে সেই প্রেমিককে কে যেন খুন করে গেছে। স্বাভাবিকভাবে থানাপুলিশ হয়। প্রাথমিকভাবে খুন এর অভিযোগ পড়ে সুজনের কাঁধে। এক্সময় রেহেনুমা সব স্বীকার করে নেয়, সেই তার প্রেমিককে খুন করেছে, কারণ সেই প্রেমিক তাকে সেদিন বিয়ে করতে আসেনি, বরং তাকে একে পেয়ে ভোগ বা বলাৎকার করতে এসেছিল। রেহেনুমার প্রেমের এই পরিণতি গিয়ে দাঁড়ালো দশ বছরের হাজতবাস।

এরমধ্যে সুজনের ব্যক্তিগত ডায়েরী থেকে প্রমাণিত হয়ে গেছে, যে সুজন রেহেনুমাকে ভালোবাসতো। জেলার যখন জানলেন এই খুনের পেছনে সুজনের কোনো হাত ছিল না, সেই জেলার তার প্রতি হৃদয়বান হয়ে পড়েন। এই দশ বছএ জেলে তার সাথে তার অত্মীয় স্বজন কেউ আসেনি। এসেছিলেন সুজন। তাই সেইদিনের জেল থেকে ছাড়া পাবার কথাটা তিনি সুজনকে ফ|োন করে জানান। অপূর্ব ছুটে আসে। কিন্তু জানাযায় রেহেনুমাকে তা নির্ধারিত সময়ের আগেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। একজন পথে ফিরছে, দশ বছর পর আর একজন তাকে দেখার জন্য আসছেন সেই রাস্তাদিয়ে। দুজনের গন্তব্য যেহেতু বিপরীতমুখী, খুব স্বাভাবিকভাবেই দেখা হয়ে যায় পথেই, একোটি বাসে উঠতে যাবার মুহুর্তে। চূড়ান্ত এই রোমান্টিক মুহুর্ত এই ছবির সেরা মুহুর্তকাব্য।

এই নাটকের পরিণতি প্রাথমিকভাবে ট্রাজেডি ধর্মী মনে হলেও এটি অবশ্যই মিলনাত্মক বা কমেডি। দুজনের অসাধারণ অভিনয় আর গল্পের বাধন ছাড়া এই নাটকের আর কিছুই নেই। নায়ক নায়িকার পারস্পরিক ব্যালান্সড অভিনয় নাটকটিকে অন্য মায়তা দান করেছে। এই নাটক যেরা এখনো দেখেন নি, তাহলে অবশ্যই দেখে নিন।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -