প্রয়াত আমিন সায়ানি, চিরতরে থেমে গেল রেডিওর ‘বহেনো অউর ভাইয়োঁ’র আইকনিক কণ্ঠ

- Advertisement -

নিজস্ব প্রতিনিধি

প্রয়াত হলেন বেতার শিল্পী আমিন সায়ানি। “নমস্কার বহেনো অউর ভাইয়োঁ, ম্যায় আপকা দোস্ত আমিন সায়ানি বোল রাহা হুঁ।” ‘বিবিধ ভারতী’র এক সময়ের জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘গীতমালা’র সেই রাশভারী কণ্ঠ – নিশ্চয় আজও অনেকে ভুলতে পারেননি। টেলিভিশন যুগের ঠিক আগের পর্বে রেডিও-ই ছিল বিনোদনের মূল রসদ। সেই রসদে ‘চার চাঁদ’ লাগিয়েছিল আমিন সায়ানির আইকনিক কণ্ঠ। তাঁর ‘বহেনো অউর ভাইয়োঁ’র আহ্বানে সব কাজ ফেলে রেডিয়ো সেটের সামনে বসাই ছিল শ্রোতাদের প্রথা। অল ইন্ডিয়া রেডিয়োতে সম্প্রচারিত আইকনিক অনুষ্ঠান গীতমালার উপস্থাপক ছিলেন আমিন। রেডিয়ো শোটিকে জনপ্রিয়তার উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার পিছনে আমিনের অবদান ভোলার নয়।

মঙ্গলবার মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমিন সায়ানি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। দীর্ঘ দিন বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন শিল্পী। আমিনের পুত্র রাজিল সাহনি সংবাদমাধ্যমকে এই খবর জানিয়েছেন।

জানা গিয়েছে, মুম্বইয়ে তাঁর বাসভবনেই হার্ট অ্যাটাক হয় আমিনের। হাসপাতালে গিয়ে যাওয়া হয়। তখনই মৃত্যু হয় কিংবদন্তি রেডিয়ো উপস্থাপকের। পরিবার থেকে জানানো হয়েছে, বৃহস্পতিবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে আমিনের। কিছু আত্মীয়ের জন্য অপেক্ষা করছে পরিবার। তাঁরা এলেই শেষ বিদায় জানানো হবে আমিনকে।

আমিন সায়ানির পুত্র রাজিল সায়ানি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, “বাবার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে মঙ্গলবার রাতে। তাঁকে আমরা মুম্বইয়ের এইচএন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখানেই তিনি মারা গিয়েছেন। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও আমার বাবাকে বাঁচাতে পারেননি। তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।”

১৯৩২ সালের ২১ ডিসেম্বর মুম্বইয়ে জন্মগ্রহণ করেন আমিন। বেতার জগতে তাঁর সফর শুরু হয় মূলত ইংরেজি উপস্থাপক হিসেবে। কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে তিনি হিন্দি উপস্থাপনার উপর বেশি জোর দেন। নিজস্ব ব্যারিটোন কণ্ঠস্বরের জন্য শ্রোতাদের মধ্যে অল্প সময়ের মধ্যেই আমিন পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে ১৯৫২ সালে আমিনকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসে জনপ্রিয় বেতার সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘গীতমালা’।

১৯৫২ সাল থেকে ‘গীতমালা’ সম্প্রচার শুরু করে রেডিয়োতে। তখন থেকেই আমিনের কণ্ঠের সঙ্গে পরিচয় শ্রোতাদের। ৪২ বছর অনুষ্ঠানটিকে সন্তানের মতো লালন করেছিলেন আমিন। কেরিয়ারে ৫৪,০০০টি রেডিয়ো শো করেছেন এই কিংবদন্তি। কিছু সিনেমার সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন, যেমন – ‘ভূত বাংলা’, ‘তিন দেবীয়াঁ’, ‘বক্সার’, ‘কাতল’…।

সেই সময়ে বলিউডের জনপ্রিয় গানের সঙ্গে তাঁর কণ্ঠস্বরের যুগলবন্দি দেশের মানুষের মন জয় করে নেয়। এই অনুষ্ঠানের জনপ্রিয়তা এতটাই ছড়িয়ে পড়ে যে, ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত রেডিয়োতে তা নিয়মিত সম্প্রচারিত হয়। পরবর্তী সময়ে ২০০০ ও ২০০১ সালে কিছু পরিবর্তন করে পুনরায় অনুষ্ঠানটিকে ফিরিয়ে আনা হয়।

কেরিয়ারে প্রায় ৫৪ হাজার রেডিয়ো অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন আমিন। বিজ্ঞাপনের জগতেও তাঁর ভয়েসওভারের সংখ্যা ১৯ হাজারেরও বেশি। আমিনের প্রয়াণে দেশের বেতার জগতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনুরাগীরা সমাজমাধ্যমে প্রয়াত উপস্থাপককে শোকবার্তায় স্মরণ করেছেন।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -