চন্দ্রদীপ নাট্যদলের নতুন নাটক চোর কাঁটারা

- Advertisement -

শুভশ্রী দত্ত

শিশির মঞ্চে আগামী ১৯ নভেম্বর, রবিবার ২০২৩ সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় বসন্ত ভট্টাচার্য রচিত নাটক ‘চোর কাঁটারা’ মঞ্চস্থ হতে চলেছে৷ নাটকটি পরিচালনা করেছেন অশোক দে চন্দ্রদীপ নাট্যদলকে সাথে নিয়ে, সমগ্র টীম নিয়ে নাটকের মহড়ায় জোরদার ব্যস্ত তাঁরা, প্রথম অভিনয় মঞ্চস্থ হবার বাড়তি একটা চাপ বা উত্তেজনা তো থাকেই৷

কালীপূজার প্রাক্কালে গিয়েছিলাম মহড়া কক্ষে৷ রিহার্সালে আলো ও আবহের কাজ দেখার সুযোগও হল৷ মহড়া শুরুর আগে পরিচালক নাটকের গল্পের মূল পটভূমি সম্বন্ধে খানিক তথ্য তুলে ধরলেন। গল্পের মূখ্য চরিত্র বটকেষ্ট পেশায় চোর৷ তার স্ত্রী সাবিত্রী এবং ভাগ্নে হুলো, এই তিনজনকে নিয়ে তাদের ছোট্ট সংসার৷ চুরি করাই ছিল তাদের রোজগারের একমাত্র পথ৷ এমনকি ছোট্ট হুলোও এই পেশাতেই হাত পাকায় মামা বটকেষ্টর অভিভাবকত্বে৷ গাছের ফল, থালা বাসন, এই সব চুরি করে তা  নিজেদের জীবন নির্বাহ করত, চুরির মাল বিক্রীই তাদের অর্থ উপার্জনে পথ ৷ এমনি এক সন্ধিক্ষণে চটপটে ভাগ্নে হুলো পঞ্চায়েতের বাড়ি থেকে, তাম্রপত্র চুরি করে তা অতি সন্তর্পনে মামিমার কাছে এনে দিল৷

এই পেশায় প্রথম পরীক্ষাতেই ছোট্ট  ছেলেটি এতবড় কাজটা করতে সক্ষম হল৷ এদিকে ঘটনার পরে, চুরি যাওয়া দামী জিনিসের খোঁজ পড়ল৷ বটকেষ্ট তখন সেটা পঞ্চায়েতের কাছে মোটা টাকার  বিনিময়ে বিক্রী করে দেয়৷ এদিকে থানার  মেজবাবু এই চুরির মাল উদ্ধারের জন্য বটকেষ্টকে টোপ দিল। সবদিকে থেকে সেই তাম্রপত্র নিয়ে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা আয়ের সুযোগ ঘটলো চোর বটর। একদিকে অনেক টাকার হাতছানি আর অপর দিকে চুরির পেশায় ভয়, অপমান এইসব থেকে মুক্তি, সব মিলিয়ে এক ধন্দে পড়লো বট। এবং অবশেষে এই চৌর্যবৃত্তির যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে তারা তিনজনে একদিন সব টাকা কড়ি নিয়ে, রাতের অন্ধকারে এক অজানার পথে পাড়ি দিল বা সামাজিকভাবে পালিয়ে গেল। 

নাট্যকার বসন্ত ভট্টাচার্য চোরের উত্তরণের এক দিশা দিলেন এই নাটকে। কারণ এই টাকাই তাকে পুরো সংসার নিয়ে সৎভাবে জীবনযাপন শুরুঙ্করতে শেখালো, অবশ্যই চুরি ছেড়ে দিয়ে৷  জীবন জীবিকায় তাদের উত্তরণ এবং সমসসাময়িক চুরি কেলেঙ্কারির সাথে তুলনে টেনে পরিচালক বলেন, যে সমাযে মানুষ চুরি ছেড়ে নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকলে সমাজের কল্যানই হয়৷ অর্থাৎ তাদের জীবনের এই উত্তরণ, সমাজ ও রাজনীতিকে প্রকান্তরে এই বার্তাই দিল৷ শিক্ষিত অশিক্ষিত উভয় শ্রেণীই ভিন্ন পথে চৌর্য্যবিত্তি অবলম্বন করে৷ যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ, সামাজিক পটভূমির সাথে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটেও এই পথ অবলম্বন করা উচিত নয় এটাই এই নাট্যের উপপাদ্য।

অসৎ উপায়ে চুরির মধ্য দিয়ে টাকা উপার্জন ৷ সব পরিস্থিতিতে, মানুষ নিজের শ্রমের উপর ভরসা করে জীবনের পথ বেছে নেয় সেটাই নেয়া উচিত৷ তবেই ঘটবে পৃথিবী সকলের বাসযোগ্য হবে।   

এই নাটকের দল কিছু সরকারী অনুদান পেলেও, মূলতঃ দলের সদস্যদের আর্থিক সাহায্যেই দল এগিয়ে চলেছে৷ সরাকারী অনুদান এনারা নেন। ইতিমধ্যে তাঁরা রাজ্যসরকারের তরফ থেকে নাট্য কর্মশালার জন্য পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছেন। আর উৎসব আয়োজনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থ সাহায্য মঞ্জুর হয়েছে, তবে টাকা এখনো তাঁরা হাতে পান নি, এমনটাই জানালেন দলের অন্যতম কর্ণধার প্রদীপ গুহঠাকুরতা।   

এই নাটকের আলো করেছেন সুমিত দাশগুপ্ত ও দেবাশিস পাল। বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ে করেছেন, সাবিত্রী- সুস্মিতা পোরেল, বটকেষ্ট- সোমনাথ রাউল, হুলো- দেবস্মিতা ঘোষ, নন্দঘোষ- সুজিত দাস, মোক্ষদা- রুচিস্মিতা, সেন  পুলিশ- রূপক মজুমদার।  

এখন সময়ের অপেক্ষা বাংলা রঙ্গমঞ্চে আরো একটি নাট্যাভিনয়ের।   

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -