চাকদহ নাট্যজনের ইন্টিমেট স্পেসে কলকাতা সংযোগসূত্রের নাটক জ্যাজামশাই

- Advertisement -

দুলাল চক্রবর্ত্তী, ফরাক্কা

চাকদহ নাট্যজন সংস্থার পরিচালনায় নির্মিত স্বপ্নমাখা নাট্য আঙিনা বা ইন্টিমেট স্পেসে এই প্রথম গেলাম। অভিনয় স্পেস এবং নাটকাভিনয় প্রসঙ্গের সংশ্লিষ্ট টেকনোলজির সংযোজনে অন্ধকারাচ্ছন্ন কালো দেওয়ালে ঘেরা এক নিশ্চিন্তমনে যেন গবেষণা করার আদর্শ স্থান। এমনটাই মনে হলো। কথা, নাটক পাঠ এবং অভিনয় দেখে নাট্যজনদের প্রতি শ্রদ্ধায় অবনত হলাম। বলা যায় সব দেখে মুগ্ধ হলাম। অনেকেই ইচ্ছা স্বত্বেও যা করে উঠতে পারেন নি। চাকদহ নাট্যজন তা পেরেছে। খুব বেশি বেশি নাটককে ভালবেসে আর প্রচুর অর্থ খরচ করে।

নিজেরা নিজেদেরকে বিকশিত করে, নিজেদের কথা, নিজেদের ভাবনা, নিজেদের নাটকের জন্যে শিল্পীদের দায়দায়িত্ব বুঝে নিতে আর নিজের মাটিতে দাঁড়িয়ে বা বসে সংলাপ বলার অধিকার করার আনন্দ কি, তাও জানলাম। শিল্পিত নাটকের কাজের অংশীদার হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করার স্পর্ধাও দেখে এলাম। নাটক বাঁচানোর জন্যে একেবারে একান্তের একটি পরিসর যে কতটা দরকার, তার প্রমাণ পেলাম। তাই অল্প কিছু মানুষজন নিয়ে, আন্তরিকতা ও অন্তরঙ্গতার সাথে শিল্পীর অন্তর প্রকাশে,  তার একান্তের ইচ্ছা পূরণে অনবদ্য এক মন্দির যেন এই আঙ্গিনা বা পরিসর। মাত্র কয়েক বছরে নিজেদের মতো কিছু নাটকের জরুরি কিছু কাজ করার এই অনুপম ভূমি নাট্যজন কায়েম করেছে, যা অভিনয়ের কাজে আরো বহু শিল্পীকে একাত্মতা দিচ্ছে। মুগ্ধ করেছে আমায়। প্রতি মাসের নিয়মিত নাটক পাঠের আসরে উপস্থিত হতে পেরে নিজেই  উপকৃত হয়েছি। খুবই সমৃদ্ধ হয়েছি নাটকে নিবেদিত এইসব শিল্পীদের কাছে পৌঁছতে পেরে।

এই আয়োজনে সুমিত্র বন্দোপাধ্যায়ের রচনা, পরিকল্পনা, প্রায় একক অভিনয় এবং নির্দেশনায়, ‘জ্যাজামশাই’ নামের এক ঘন্টা কুড়ি মিনিটের একটি নাটক দেখলাম। কলকাতার সংযোগসূত্র দলের প্রযোজনায় একটি অন্তরঙ্গ নাটক। যে নাটকে সুমিত্র বন্দোপাধ্যায় নিজেকে স্পেসেই চরিত্রের মধ্যে আবিস্কার করছেন। নিছকই এক গোপালের সাদামাটা গল্প। গোপাল বা গুপি এক আত্মকথনে তার দেখা, এবং তার জীবনের সাথে জড়িয়ে থাকা যৌথ পরিবারের আভ্যন্তরীণ বার্তা লেনদেন করেছে। যার পরতে পরতে আছে প্রায় ষাট বছরের ঘটে যাওয়া নস্টালজিক ইতিহাস। রাজনৈতিক পটভূমি। যেখানে এক জ্যাঠামশাইকে সামনে রেখে অপরূপ কথন প্রক্রিয়ায়, প্রচুর শৈল্পিক অভিব্যক্তিতে মন, মানুষ ও মনুষ্যত্বের অন্দরে থাকা জটিল মানসিকতার সন্ধান মিলেছে। এক জীবনের শৈশব কৈশোর যৌবনের নানা বার্তায় যে সাহিত্যের প্রকাশ থাকে। তার বিবিধ, বিচিত্র খবরে উদ্ভাসিত এই নাটক। গল্পের মোচড়ে আছে সময়, সমাজ এবং রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিত। সুমিত্র বন্দোপাধ্যায় খুব ভাল নাটককার। ২০১১ সালে অল্প কদিন কাছাকাছি এসেছিলাম। উনি অনেক বড় অভিনেতা তাও কিন্তু জানলাম, এই ‘জ্যাজামশাই’ নাটক দেখেই। ওনার অভিনয়ে এং জ্যাজামশাইয়ের ভূমিকায় থাকা প্রবীণ অভিনেতার চমৎকার প্রকাশ মন কাড়ে।
এই নাটক সংযোগসূত্রের ব্যবস্থাপনায় আগামী ২৪শে মে তৃপ্তি মিত্র নাট্যগৃহে অভিনীত হবে। কলকাতার বা আশেপাশের নাট্যকর্মীরা দেখে নিয়ে এ-ই মুগ্ধতার সংবাদ অনুভব করলে আনন্দিত হবো।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -