নিজস্ব প্রতিনিধি
গত ২৩ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত, এক আবাসিক নুক্কড় নাটক কর্মশালা শেষ হল। TRCSC (টেকনোলজি রিসোর্স কমিউনিকেশন এন্ড সার্ভিস সেন্টার) আয়োজিত এই কর্মশালা হয়েছিল IDSRT ট্রেনিং সেন্টারে। এই কর্মশালায় প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন কলকাতার নাট্যকর্মী দেবাশিস রায়। তাঁরই তত্ত্ববধানে পাঁচটি পঞ্চায়েতের মোট ৪৭ জন আদিবাসী ছাত্রছাত্রী নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন। যেখান থেকে নাট্য বিষয়ে নানান পাঠ নেওয়ার সাথে সাথে, তারা একটি নাটক ও আটটি গান শিখে নিতে পেরেছে।
অংশগ্রহণকারী সব ছাত্রছাত্রীর বয়স ১৪-২০ বছর। যাদের মধ্যে ষষ্ঠ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত লেখাপড়া করা ছাত্রছাত্রী। এই কর্মশালার মূল উদ্দেশ্য ছিল শিশু অধিকার সম্বন্ধে ওদের সচেতন করা এবং নাট্যকর্মে তাদের পারদর্শী করে তোলা, যাতে ভবিষ্যতে ওরা তাদের নিজ নিজ পঞ্চায়েত অন্তর্গত গ্রামে গিয়ে সেই নুক্কড় নাটক প্রদর্শনের মধ্যে দিয়ে সেই অঞ্চলের গ্রামবাসীদের সেবিষয়ে সচেতন করে তুলতে পারে।
এই কর্মশালায় মোট পাঁচটি পঞ্চায়েত হল কুকড়ু (৪ জন), মারাংহাতু (১৩ জন), তিলোপদা (১১জন), ছোটা সেগোই (১২ জন), এবং আরুয়াঁ (৭জন)। এদের অধিকাংশই হো ভাষী। এরা হিন্দী ভাষায় নাটক নির্মান করেছে। কিন্তু ওরা সংশ্লিষ্ট দিদিমনিদের সহায়তায় গ্রামে গিয়ে তাদের নিজস্ব ভাষা, হো ভাষার মাধ্যমে নাটকটি অভিনয় করার কথা। যা ইতিমধ্যে তারা বেশ কিছু অঞ্চলে করে বেশ সাড়া ফেলেছে।
দীর্ঘদিন ধরে এইসব অঞ্চলে সংস্থাটি কাজ করে চলেছে। ‘স্বয়ং’ প্রকল্পের অন্তর্গত এই নাট্য কর্মশালার আয়োজন। যার মূল লক্ষ্য, শিশু অধিকার সম্পর্কে নানা তথ্য দিয়ে তাদেরকে অবহিত করা এবং তাদেরই অঞ্চলে বা কমিউনিটিতে সেই বার্তা পৌছে দেওয়া। শিশু অধিকারের মূল যে বিষয়গুলি নাটকে উঠে এসেছে সেগুলি হল, শিশু শিক্ষা, শিশু শ্রম, শিশু ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিভেদকামী মনোভাব না রাখা আর বিশেষ করে বাল্যবিবাহ। সাথে সাথে নেশা যা সামাজিক ও পারিবারিক অবস্থানে বিঘ্ন ঘটায়।

কর্মশালায় উপস্থিত ছেলে-মেয়েরা অত্যন্ত মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করেছে। বলা ভালো তাদের একাগ্রতার কোনও অভাব ছিল না। সংস্থাও এই কর্মশালা সম্পর্কে ভীষণ আশাবাদী এবং এই কর্মশালা যে একজন যোগ্য কারিগরের হাতে সম্পন্ন হয়েছে, সেই বিষয়েও বেশ খুশী।
এই কর্মশালা শিবিরে এই পাঁচ পঞ্চায়েতে যে সি আর সি এফ (CRCF) দিদিরা বাচ্চাদের সাথে থেকে কাজ করেছেন, তারা হলেন সুমন্তি সোয়, আরতি কুমারি মুণ্ডা, পূর্ণিমা লোয়াদা, লক্ষী তাঁতি, সীতামনি হাঁসদা, সুনিতা গাগ্রাই, চাঁদমুনি হাঁসদা।
কর্মশালার শিক্ষক দেবাশিস রায় মনে করেন, এই সকল শিশুমনকে যদি ঠিকভাবে লালন (নার্চার) করা হয় তাহলে এরাও ভবিষ্যত এই দেশের নাম উজ্জ্বল করতে পারে। বিশেষ করে, এই কর্মশালায় তাঁরই তত্ত্বাবধানে নাটকের মধ্যে সৃজনশীলতাকে উজ্জীবিত করার জন্য চারুকলা ব্যবহার করা শেখানো হয়েছিল, যেখানে বাচ্চারা অনবদ্য সব ছবি জল ও আঙ্গুলের মাধ্যমে এঁকেছে। এছাড়াও স্বরক্ষেপন, শারিরীক ভাষা, বিভিন্ন থিয়েটার গেম-এর মাধ্যমে মনোযোগ নির্মানের কাজ, শব্দ ও সঙ্গীত নিয়ে চর্চা, এককথায় বাচ্চারা এই কদিনে একটা নাট্য নির্মানের অধিকাংশ প্রকৌশল আয়ত্ব করতে পেরেছে।