Tuesday, May 20, 2025
Tuesday, May 20, 2025
Homeআলোচনা'টালিগঞ্জ সপ্তর্ষির' নবতম প্রযোজনা ‘হানিবুশ’ 

‘টালিগঞ্জ সপ্তর্ষির’ নবতম প্রযোজনা ‘হানিবুশ’ 

সুপর্ণা ভট্টাচার্য

“পথ না চিনেই চেনা শহরেতে আমরা হেঁটেছি কত,

হাতে হাত ধরে রূপকথারাও হেঁটে গেছে অনন্ত। 

হঠাৎ বৃষ্টি, ভিজেছি দুজনে শহরের কোনোখানে –

চেনা অচেনার রূপকথারাও ভিজেছিল অকারণে। 

এ শহর জানে শহরের কথা আমাদের কথা গুলো। 

লুকানো বিষাদ, প্রেম, অভিমান কিংবা স্মৃতির ধুলো”…

               – শুভঙ্কর গুহ

হানিবুশ। মৌতাত আর সৌরভের নাম। কবিতা আর দৃশ্য কাব্যের নাম।

হানিবুশ,’টালিগঞ্জ সপ্তর্ষির’ নবতম প্রযোজনা। সাত্যকি সরকার রচিত এবং পরিচালিত অনু নাটক। অনু নাটক ঠিক ছোট গল্পের মত। শেষ হয়েও শেষ হয়না। রেশ রেখে যায়। এ অনু নাটকও ঠিক তাই। আমরা হঠাৎ করেই চলতে বলতে কোনো এক জায়গায় বন্ধু-মুখ খুঁজে পাই। তার সঙ্গে হয়ত হাঁটা হয়না এক পা’ও, তার সঙ্গে হয়ত সময় কাটান হয়না দীর্ঘ দীর্ঘ দিন। ক্ষণিকের দেখা, মুহূর্তের আলাপচারিতা এলোমেলো করে দেয় সবকিছুই। আদিত্য আর মধুজার দেখা হয় সেভাবেই, একটি ক্যাফেতে। নেপথ্যে বৃষ্টির সঙ্গত নিয়ে, সিক্ত মন নিয়ে। আলো আঁধারির আলিঙ্গনে।

ক্যাফের নাম ‘বনলতা সেন’। নামেই বোঝা যায় নাটিকাটি কাব্যিক হয়ে উঠবে। মধুজার ফোনের রিংটোন ‘বন্ধু তোর লাইগ্যা রে’ শুনে মনে হবে,আহা,আমরাও যে অপেক্ষায় থাকি এমন বন্ধুর জন্য। স্বীকার করি না নিজের কাছেই।

খুব সাধারণ মঞ্চ। ক্যাফে যেমন হয় তেমনই আন্তরিক, কোজি। বৃষ্টি রাতে আলোর সংযোগ কেটে গেছে। আবছা আলোয় দুটি চরিত্র। একাকী মধুজার হাতে গরম কফি।পাশের টেবিলে একাকী আদিত্য। পাশাপাশি টেবিলে চলে কথোপকথন। নিঃসন্দেহে খুব কঠিন ব্যাপার। ‘হানিবুশ’ -এ তথাকথিত উচ্চকিত সংলাপ বা মুহূর্তের সাহায্য পায় না কুশীলব দুজন। তবু,কী আশ্চর্যজনক ভাবে আমরা চোখ বা কান কিছুই সরাতে পারিনা তাদের থেকে। ‘হানিবুশ’ সুগন্ধি চায়ের নাম। সোনালী,উষ্ণ পানীয় আসলে যাপনের ভিজে পথকে ওম দেয়। আদিত্য তাই ‘হানিবুশ’ এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় মধুজাকে। জীবনকে উপভোগ করতে শিখিয়ে দেয়। বন্ধুর পথ অতিক্রম করার সহজ পথ দেখিয়ে দিয়ে যায় সুরের মায়ায়।

প্রশান্ত দত্ত আর আভেরী নাথ। আদিত্য আর মধুজা। দুজনেরই অনন্য দখল অভিনয়ে। প্রশান্তর কন্ঠস্বর ভরাট। আদিত্য চরিত্রর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যা মিশে গেছে। আভেরীকে সবসময় অসম্ভব বুদ্ধিমতী অভিনেত্রী মনে হয়, এ নাটকেও তার ব্যতিক্রম হয় নি। অত্যন্ত ঝকঝকে, স্মার্ট অথচ ভীষণ ভাবে সংবেদনশীল চরিত্র মধুজাকে ফুটিয়ে তুলেছে সার্থক ভাবে।

আলো দু এক জায়গায় আলোকিত হলে ভালো হত। যেমন ‘বনলতা সেন’ লেখা প্ল্যাকার্ডটিতে আলো পড়েনি একটুও। শেষ দৃশ্যে আভেরী নাথের মুখ পুরো অন্ধকারে,একটু অসুবিধা হচ্ছিল মানিয়ে নিতে। আবহ সুন্দর, শেষ দৃশ্যে সামান্য দেরী হয়েছে সম্ভবত আবহ আসতে। পরবর্তী প্রযোজনায় এই সামান্য ত্রুটি থাকবে না, নিশ্চিত।

এই নাটকের আলোক সম্পাতে অভিজিৎ গুহ ও আবহে দীপঙ্কর ঘোষ। যারা দক্ষতার সাথে নির্মানের কাজে সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন। 

সাত্যকি সরকারের নাটক ক্রমাগত আমাদের আশা জাগাচ্ছে। নতুন প্রতিভা, নতুন চিন্তা ভাবনা, নতুন প্রয়োগ সবসময় স্বাগত। সাত্যকি সরকারের ডিজাইনও বেশ ভালো। অভিনয়েও একটি ছোটো চরিত্রেও যথাযথ। আমরা ‘পিওর সোল’, পবিত্র আত্মার সন্ধানে থাকব সাগ্রহে।  

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular