দর্শকমনে দাগ কাটল গোবরডাঙ্গা নকসার ‘আশ্চর্য মানুষ’ 

- Advertisement -

চিত্রা দাস

সম্প্রতি গোবরডাঙ্গা নকসা তাঁদের নিজস্ব প্রেক্ষাগৃহ গোবরডাঙ্গা সংস্কৃতি কেন্দ্রে তাঁদেরই নতুন প্রযোজনা ‘আশ্চর্য মানুষ’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে। এটি এই নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়ন। এই নাটকের প্রথম অভিনয় হয়েছিল এবছরের ৩০ সেপ্টেম্বরে। বিনোদ ঘোষালের কাহিনী অবলম্বনে, ডিভাইস মেথডে প্রস্তুত এই নাটকটির নাট্যরূপ দিয়েছেন এই মুহুর্তের বলিষ্ঠ নাট্যকার মৈনাক সেনগুপ্ত।

এ নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র সুখেন। সে এমনই এক মানুষ, যে পুরনো দিনের জিনিস কিনতে বা সংগ্রহ করতে ভালোবাসে। কিন্তু এসবে বাধা হয়ে দাঁড়ায় তার স্ত্রী বিপাশা ও ছেলে গুড্ডু। দুজনের আধুনিক জীবন যাপন, যা সুখেনের দীর্ঘদিনের চেনা ঘরদোর অচিরেই অচেনা হয়ে যায়। বাপ- ঠাকুরদার জিনিসপত্র, সুখেনের সংগৃহীত পুরোনো জিনিসপত্রগুলোর সাথে    সুখেনেরও ঠাঁই হয় সেই বাড়ির একতলায়। স্ত্রী সন্তানের কাছে বাতিল মানুষ, সুখেনের সেই ঘরেই এক নতুন জগৎ সৃষ্টি হয়। সেখানে স্বপ্নের মতো আসে এক স্বপ্নের ফেরিওয়ালা ‘খোয়াবের সওদাগর’ ছলিমুল্লাহ! তার দেওয়া বিশেষ নজরানা আতরদান, গড়গড়া সুখেনকে নেশাগ্রস্ত করে তোলে। এ নেশা অতীতের, এ নেশা হারিয়ে যাওয়া স্মৃতির। পুরানো জিনিস, স্মৃতি, মূল্যবোধ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত সুখেনও ছলিমুল্লাহের দেওয়া স্বপ্নের ঝুলি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে জীবনের পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা স্বপ্ন, অতীত, হারানো স্মৃতি সংগ্রহ করার উদ্দেশ্যে। বিপাশা ও গুড্ডু বিষ্ময় ভরে দেখে যে সুখেন তার নিজের স্বপ্নকে বুকে নিয়ে মাথা উঁচু করে হাঁটে চলেছে! দর্শক হিসেবে আমরাও আবেগ বিহ্বল হয়ে পড়ি। আমাদের জীবনেও সুখেনের মতো এইরকম মানুষ অনেক আছেন যাঁরা লোকমুখে পাগল বলে চিহ্নিত হলেও তাঁরা সবাই এক একজন স্বপ্নের সংগ্রাহক, এক একজন ‘আশ্চর্য মানুষ’।

নাটকের প্রত্যেক কুশীলবদের অভিনয় দর্শকমনে দাগ কেটেছে। বিশেষ করে সুখেনের চরিত্রে নীলাদ্রি শেখর কাঞ্জিলাল অসাধারণ, সুখেনের স্ত্রীয়ের চরিত্রে আল্পনা দাসও অনবদ্য, সুখেনের ছেলে ও সূত্রধারের চরিত্রে রীতম রায় বেশ ভালো। এই নাটকের পরিচালক আশিস দাসের সুপরিচালনার গুণে নাটকটি পূর্ণতা পেয়েছে। পরিচালক নিজে এই নাটকের আলোক শিল্পীও। মঞ্চ নির্মাণে ভূমসুতা দাস, যিনি ন্যাশানল স্কুল অব ড্রামা থেকে পড়াশুনা করে উত্তীর্ণ হয়ে এই কাজে নিয়োজিত হয়েছেন। এই নাটক সম্পদ নাটকের আবহ, করেছেন, স্বপন বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন কারিগরি সহায়তায় ছিলেন জয়দেব দাস, সঞ্জয় নাথ, শ্রেয়া দেবনাথ, স্বরূপ দেবনাথ, অরুনাভ মাইতি, রনা পাল, দেবযানী মিত্র প্রমূখ। পরিচালনার কাজে সহায়তা করছেন ভূমিসুতা দাস ও দীপান্বিতা বনিক দাস।

বহুদিনের কষ্টার্জিত এই সাফল্য তাঁদের এই প্রেক্ষাগৃহে বহু মননশীল দর্শক আনতে সমর্থ হয়েছে। এইভাবেই নকশা দীর্ঘদিন ধরে ধারাবাহিকভাবে বাংলা নাট্য অঙ্গনে বেশ ভালো ভালো প্রযোজনা দিয়ে যাচ্ছেন। তাই এবারেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি, একই ভাবে এই প্রযোজনা ‘আশ্চর্য মানুষ’ উপস্থাপিত হয়েছে।     

  
- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -