এনএসডির মঞ্চে নাটক করা মানেই একটা মাইলস্টোন

- Advertisement -

দিল্লি থেকে বাংলা নাটক ডট ইন-এর জন্য কলম ধরলেন

রাতুল চন্দ রায়

ডিসেম্বরে যখন প্রথম খবরটা পেয়েছিলাম, চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠেছিলাম। মনে হয়েছিল – ঠিক এই খবরটার জন্যেই তো অপেক্ষাই করছিলাম। দলের কর্ণধার কৌশিকদা (কৌশিক সরখেল) একদিন আমাকে হঠাৎই বলল, ‘ভাই দিল্লি যেতে হবে।’ আমি বললাম, ‘কি জন্য? এনএসডি?’ কৌশিক সরখেল বলল, ‘হ্যাঁ, হয়ে গেছে ভাই।’ আমি তখন অফিসে। অফিসের মধ্যেই একটা জোরে চিৎকার করে উঠলাম।

আসলে দিল্লির কথা শুনেই বুঝেছিলাম – অশোকনগর ‘অভিযাত্রী’র প্রযোজনা ‘রক্তকরবী’ ভারত রঙ্গ মহোৎসবের আমন্ত্রণটা বাগিয়ে ফেলেছে। একটি নাট্যদলের কাছে এই আমন্ত্রণ কতটা আনন্দের সেটা একজন নাট্যকর্মী ছাড়া অনুভব করা মুশকিল। দিল্লিতে এনএসডিতে শো করব। একটা অন্য ধরনের এক্সসাইটমেন্ট। তাই দিল্লির কথা শুনেই মনটা আনন্দে নেচে উঠেছিল। তারপর দেখতে দেখতে মাঝের ক’টা দিন কী করে উবে গেল বোঝাই গেল না।

আর আজ আমরা, মানে অশোকনগর অভিযাত্রী নাট্যসংস্থার ৩৫ জন সদস্য-সদস্যা দিল্লির বুকে। আজ, সোমবারই সন্ধ্যাবেলায় দিল্লির শ্রীরাম সেন্টার ফর আর্ট অ্যান্ড কালচার-এ আমাদের নাটক ‘রক্তকরবী’র মঞ্চায়ন। একটু আগেই একপ্রস্থ রিহার্সাল হয়ে গেল। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কালোত্তীর্ণ নাটক রক্তকরবীর শতবর্ষ।

নাটকটির সম্পাদনা ও নির্দেশনা করেছেন কৌশিক চট্টোপাধ্যায়। কৌশিক চট্টোপাধ্যায় নিজেও এই নাটকে অভিনয় করছেন। এছাড়া অভিযাত্রীর আরও অন্য সদস্য-সদস্যারাও এই নাটকে অভিনয় করছে। নন্দিনীর চরিত্রে আনন্দী বসু। আমি করছি বিশু পাগল। অনুজয় চট্টোপাধ্যায় করছে সর্দার। সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী করছেন অধ্যাপক। কৌশিক সরোখেল করছেন গোঁসাই এর চরিত্র। নাটকের মঞ্চ ভাবনা সঞ্চয়ন ঘোষের। আলোর দায়িত্বে রয়েছেন শুভঙ্কর।

এমনিতে ভারত রঙ্গ মহোৎসবে আমন্ত্রণ পাওয়া দলগুলির জন্য এনএসডির তরফে ২৫ জনের খরচা পাওয়া যায়। কিন্তু আমরা এসেছি ৩৫ জন মানুষ। কিছু পয়সা অন্তত যাতে বাঁচানো যায় সেজন্য রাজধানীর টিকিটে আমরা খাওয়ারও বাদ দিয়েছি। কিন্তু তারপরেও বাড়তি খরচাও দলকে করতে হয়েছে। সবাই যে একসঙ্গে আসতে পেরেছি – তেমনটা নয়। যেমন আনন্দী বসু এসেছেন গোয়া থেকে। তাঁকে ফ্লাইটে করে দিল্লি পৌঁছতে হয়েছে। আবার কৌশিকদা (নির্দেশক) পরের দিন কলকাতা থেকে ফ্লাইটেই দিল্লি পৌঁছেছেন। বড় দল। বড় মঞ্চ। বড় আমন্ত্রণ। সব মিলিয়ে খরচ বাঁচানোর কথাটা মাথায় আছে বটে, কিন্তু খরচ আটকানো সত্যিই কতটা সম্ভব?

এতদিনের পরিশ্রমের পর প্রথমবার ভারত রঙ্গ মহোৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছে অশোকনগর অভিযাত্রী নাট্যসংস্থা। সেই আনন্দ তো আর পকেট বাঁচাতে গিয়ে মাটি করে দেওয়া যায় না! সারা ভারতবর্ষ থেকে এবছর সম্ভবত ৬২টা নাটক এই ভারত রঙ্গ মহোৎসবে আমন্ত্রণ পেয়েছে। সারা ভারতবর্ষে এই সংখ্যাটার অন্তত ৫০গুণ বেশি নাটক প্রতিবছর মঞ্চস্থ হয়। তার থেকে বেছে বেছে ৬২টি নাটকের আমন্ত্রণ পাওয়া, এটা কতটা চ্যালেঞ্জের যাঁরা নাট্যকর্মী তাঁরা ভালোমতই জানেন। এনএসডি’র শো করলাম – এটা প্রত্যেকটি নাট্যদল এবং নাট্যকর্মীর কাছে মাইলস্টোন বলা যায়।

নির্দেশক কৌশিক চট্টোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দলের সবাই দীর্ঘদিন ধরে প্রোডাকশনের জন্য যে হাড়ভাঙা খাটুনি খেটেছেন, সেই পরিশ্রমের সফলতা আজ অশোকনগর অভিযাত্রী নাট্যসংস্থা পেয়েছে। আজ দিল্লি আসতে গিয়ে রাজধানীতে আমরা টিকিট থেকে খাবার বাদ দিয়েছি দু’টো পায়সা বাঁচানোর জন্য। কিন্তু এই রক্তকরবী প্রোডাকশনের জন্য এতদিন দলের তরফে কিন্তু কোনও কার্পণ্যই করা হয়নি। সবাই নিজেরটা উজার করে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।
এবং সামগ্রিক চেষ্টার ফলেই হয়তো ট্রেনে খাবার বাদ দেওয়ার ব্যাপারটা উলটে আনন্দের ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।

আমি নিজে কোনও খাবার নিয়ে ট্রেনে উঠতে পারিনি। ট্রেনের টিকট থেকে যে খাবার বাদ দেওয়া হয়েছে – ব্যাপারটা আমার জানা ছিল না। কিন্তু রাতে সবাই মিলে খেতে গিয়ে দেখলাম – একটু বেশিমাত্রাতেই খাওয়া হয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে মজা করতে করতে আসা, এটাও একটা আনন্দের অভিজ্ঞতা। সবাই মিলে এমন একটা হৈহৈ আনন্দের জন্যেই তো দল করা। নাটক করা।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -