মনোজ দেব রায়
শিল্প তীর্থ আয়োজিত নবউন্মেষ ২ নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম তথা সপ্তম নাটক ছিল বিলোনিয়ার ত্রিবেনী নাট্য সংস্থার নাটক “কোজাগরি” রচনা অমল রায় (সম্ভবত কোলকাতার গ্রুপ থিয়েটারের লেখক) নির্দেশনায় পিনাক দত্ত। কোজাগরী নামকরণেই বোঝা যায় লক্ষ্মীপূর্ণিমার ওপর উদ্দেশ্য করেই এই নাটক। নাটকের বিষয়বস্তু মূলত হিন্দু মুসলিম সম্প্রীতি।
গৃহস্ব বাড়ির লক্ষ্মীপুজোর ভোগ খেয়ে থাকেন প্রতিবেশী মুসলিম ঘরামি, যে এই বাড়ির ঘর ছাউনি থেকে অন্যান্য কাজের নিত্য সঙ্গী। গৃহকত্রীর সঙ্গে তার ভাই বোনের সম্পর্ক। এই দিনে প্রসাদ পাওয়া তার কাছে এক বিরাট প্রাপ্তি এবং আনন্দের।
কিন্তু সমাজের ভাসমান বিষবাষ্পে সম্প্রীতির বাতাবরণ বিনষ্ট হতে শুরু করে। বিজাতীয় লোক হিন্দু বাড়ির প্রসাদ খাবে এবং উপস্থিত থাকবে এ নিয়ে পরিবারের বড় ছেলের সঙ্গে অশান্তি, ফলস্বরূপ গোড়া ধর্মীয় পন্ডিতের তরফ থেকে বাঁধা আসে, পরিণামে সংঘাত।
অন্যদিকে, পরিবারের গৃহকত্রীর কনিষ্ঠ সন্তান এসবের ঊর্ধে উঠে সম্প্রীতির বাতাবরণ বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর এবং সেই আশায় বুক বাঁধে, এ নিয়েই নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যেই নাটক এগিয়ে চলে। অভিনয়ে মায়ের ভূমিকা ছিল সাবলীল ও স্বচ্ছন্দ।
দু’ভাইয়ের অভিনয় ছিল চরিত্র অনুযায়ী সাবলীল, তবে ছোট ভাই অভিনয়ে যথেষ্ট যত্নশীল তেমনি বড় ভাই তার রূঢ় আচরণের মাধ্যমে কুটিল রূপ ফুটিয়ে তুলে চরিত্রটিকে প্রাণবন্ত করে তুলেছে। অন্যদিকে গোরা ধর্ম ধ্বজাধারী চরিত্রটিও তার স্বীয় অভিনয় দক্ষতায় ফুটিয়ে তুলতে চেষ্টা করেছেন। তবে হিজড়ার অভিনয় যে একটু কষ্টসাধ্য ব্যাপার দেখলে বোঝা যায়।
যদিও নাটকটি কিছুটা মন্থর গতিতে এগিয়ে গেছে, তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে নাটকের শেষ কম্পোজিশনে। দারুন একটা কম্পোজিশন দেখা গেল নাটকের অন্তিম লগ্নে। ব্যবহার করা হয়েছে বিখ্যাত গায়ক নচিকেতা চক্রবর্তীর কালজয়ী সংগীত “একদিন ঝড় থেমে যাবে পৃথিবী আবার শান্ত হবে, বসতি আবার উঠবে গড়ে…”
ফলে এক লহমায় নাটকটি অনেক উচ্চমার্গে পৌঁছে গেছে। এতে নির্দেশক পিনাক দত্তের মুন্সিয়ানার পরিচয় পাওয়া যায়। ত্রিবেনী নাট্য সংস্থার এত সুন্দর একটি নাটক পরিবেশন দর্শক মনে দাগ রেখে গেছে।