Tuesday, January 14, 2025
Tuesday, January 14, 2025
Homeখবরবরিশালের ‘নাট্যম’-এর নাটক ‘ফেইড্রা’ যেন এক বিয়োগান্তক এক জীবন

বরিশালের ‘নাট্যম’-এর নাটক ‘ফেইড্রা’ যেন এক বিয়োগান্তক এক জীবন

সম্প্রতি ঢাকার শিল্পকলা আকাডেমির পরীক্ষণ থিয়েটার হল-এ ‘ফেইড্রা’ নাটকের ৫০তম মঞ্চায়ণ করল বরিশালের ‘নাট্যম’। নাটকটি রচনা করেছেন জ্যঁ রাসিন এবং নির্দেশনা দিয়েছেন অপূর্ব গোমস্তা ঋক। নাটকটি নারী মনস্তত্ত্বের এক কালজয়ী ফরাসি ট্র্যাজেডি নাটক। ফ্রেইডা এক পৌরাণিক নারী চরিত্র। 

গ্রিক পুরাণে গল্পটা অনেকটা এই রকম, ফ্রেইডার স্বামী রাজা থিসিয়াস হঠাৎ নিরুদ্দেশ হয়ে যান। এক পর্যায়ে রানী ফ্রেইডা বুঝতে পারেন রাজা থিসিয়াসের ফিরে আসার আর কোনো সম্ভাবনা নেই। ফ্রেইডা ছিলেন অত্যন্ত আবেগী নারী। কামনা-বাসনায় বিভোর ফ্রেইডা এক পর্যায়ে নিজের সৎপুত্র হিপোলিটাসের সঙ্গে প্রেম ও যৌনসংসর্গে জড়িয়ে পড়েন। এমনই সম্পর্কে ঘনিষ্ঠতর এক পর্যায়ে রাজা থিসিয়াস ফেরত আসেন। কিন্তু ফ্রেইডা স্বামীকেও আর গ্রহণ করেননি। মানসিক দ্বন্দ্বে ফ্রেইডা আত্মহননের পথে হাঁটেন। এভাবেই কাহিনি এগিয়ে চলে।

বলতে দ্বিধা নেই, ঢাকার বাইরের নাট্যচর্চার মান যে ঢাকার চেয়ে কোনো অংশে কম নয়, তা আবার স্মরণ করিয়ে দিয়ে গেল বরিশালের ‘নাট্যম’। প্রাচীন গ্রিসে নাটকগুলো নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, নতুন ব্যাখ্যায়, নতুন রচনায় একসময় ফরাসি সাহিত্যধারা নানাভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। গ্রিক পুরাণের ইউরিডাইস, আন্তিগোনে, মেডিয়া, ফেইড্রা প্রমুখ চরিত্রগুলো নতুনভাবে উঠে এসেছিল। 

ফরাসি নাট্যকার জ্যঁ রাসিনের ‘ফ্রেইডা’ নাটকের প্রাধান্য পেয়েছে পৌরাণিক বাস্তবতার চেয়ে মানবীয় রক্তক্ষরণ। যেখানে একটি চরিত্র একদিকে রানী, অন্যদিকে তিনি একজন নারী। যে নারী ভালোবাসা-হৃদয়ের চাওয়া-পাওয়া, আবেগ-আবেদনের কাছে অন্ধ। যে চরিত্রটি নীতি-নৈতিকতার চেয়ে আবেগ দ্বারা প্রভাবিত।

গ্রিকদের দেবতানির্ভর নিয়তির বিপরীতে যেখানে অবদমনই মুখ্য। নির্দেশক ঋক নাট্য নির্মাণে সময়কে প্রধান করে মানবীয় রক্তক্ষরণকেই প্রতিপাদ্য করে তুলেছেন। তাঁর নাটকে রানী ফ্রেইডা চরিত্রে ম্যানামে তালুকদার একজন পরিপূর্ণ নারী। রানীত্বের ক্ষমতার চেয়ে যে প্রেম-ভালোবাসা-কামনা-বাসনাকেইে বড় করে দেখেছে। কিন্তু নৈতিকতার দ্বন্দ্বে সে পরাজিত। অপরদিকে রাজা থিসিয়াসের চরিত্রের রাসুদেব ঘোসের অভিনয় নানা বৈচিত্র্যই প্রকাশ করেছে।

চরিত্রাভিনয়ে রফিকুল ইসলাম লিংকন, অর্পিতা রায়, উর্মি হালদার কাকন, ইমরান শাকিল, মুহাম্মদ নাজমুল ইসলাম রুম্মান, পলাশ ঘোষম আল মামুন রাব্বির। সকলেই চরিত্রাভিনয়, সংলাপ, চলনে প্রাচীন সেই রোমান সময়কালে বাস্তবতাকেই তুলে ধরতে প্রয়াসী হয়ে উঠেছে।

তবে যে কথাটি না বললেই নয়, নাটকের মধ্যে ঘটনা প্রবাহের যে গতিশীলতা প্রয়োজন ছিল, তা অনেকাশেংই ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে চলেছে। সেট নির্মাণে প্রাচীন রোমীয় রাজকীয় সাজেশন, বৈচিত্র্যপূর্ণ নাটকীয় মুহূর্ত তৈরিতে আলোর প্রক্ষেপণ ও আবেগিক সংগীতের নিনাদে নাটকটি উপস্থাপিত।  

কৃতজ্ঞতা স্বীকার – আবু সাঈদ তুলু (সমকাল)

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular