Tuesday, July 8, 2025
Tuesday, July 8, 2025
Homeনাটকনান্দীকারে থিয়েটারের পাঠ শুরু করে ইউটোপিয়ার দিশারী এখন থিয়েটারের লড়াকু অভিনেত্রী

নান্দীকারে থিয়েটারের পাঠ শুরু করে ইউটোপিয়ার দিশারী এখন থিয়েটারের লড়াকু অভিনেত্রী

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম: পর্ব ২৭

১০ বছর বয়স থেকে থিয়েটারে যুক্ত আছে দিশারী মুখার্জী। মা – বাবার একমাত্র মেয়ে দিশারী থিয়েটারের অঙ্গণেই খুজে পেয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ। বাবা অর্ণব মুখার্জী অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনীয়ার,মা সোমা মুখার্জী স্কুল শিক্ষিকা। ছোট থেকেই থিয়েটারে আগ্রহ দিশারীর।দিশারী জানিয়েছে, ১০ বছর বয়স থেকেই থিয়েটারে আগ্রহ তৈরি হয় তার। তারপর থেকে ১৫ বছর সে থিয়েটারে জড়িয়ে আছে। থিয়েটারে আগ্রহের সূত্রেই ছোটবেলায় সে যুক্ত হয়েছিল  নান্দীকার দলের বাচ্চাদের ক্লাসে। থিয়েটারের প্রথম পাঠ সেখানেই। নান্দীকারে ছোটদের পাঠশালায় থিয়েটারের ক্লাস করতে করতে থিয়েটারকে  ভালবাসতে শেখে দিশারী। লেখাপড়ার পাশাপাশি থিয়েটারচর্চাও চালিয়ে এসেছে জোরকদমে। পরবর্তীতে মাণিকতলা পারিজাত, যোগেশ মাইম একাদেমি, ইউথোপিয়া, বিরাটি সমূহ, মধ্যমগ্রাম থিয়েটার মার্জিনাল, বিডন স্ট্রিট শুভম দলে থিয়েটার করেছে।

থিয়েটারকে দিশারী দুভাবে দেখে বলে জানিয়েছে। প্রথমটা হল বিনোদনের মাধ্যম এবং দ্বিতীয়টা হল থেরাপি হিসাবে।তার মতে, থিয়েটার যখন বিনোদনের মাধ্যম, তখন সেখানে দর্শক আসে থিয়েটার দেখার জন্য। আর থিয়েটার যখন থেরাপি তখন সেটা কাউকে দেখানোর জন্য নয়। সেখানে থিয়েটার হিলিং এর কাজ করে।দিশারী এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে, দ্বিতীয়টার জন্য সে থিয়েটারে এসেছে। থিয়েটার করে সে মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকে বলেই সে থিয়েটার করে।

এ পর্যন্ত অভিনীত নাটকের মধ্যে অথ: হিড়িম্বা কথা নাটকের হিড়িম্ব চরিত্র তার কাছে প্রিয় কারণ এই চরিত্রটা তাকে ভাবায়।ভেঙে গড়ে নতুন কোন ভাবনার কাছে তাকে পৌঁছে দেয় এই চরিত্র।তাই এই চরিত্রটি এখনও পর্যন্ত তার প্রিয় চরিত্রের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে। এই হিড়িম্ব জঙ্গলের কথা বলে, একসাথে বাঁচার কথা বলে- তাই চরিত্রটিকে সে ভালবেসে ফেলেছে। এইসব  বিষয়গুলো তার কাছেও খুব জরুরি মনে হয়। শুধু তাই নয়, বৃহৎ প্রেক্ষাপটে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে মানুষের আত্মকেন্দ্রিক হয়ে যাওয়া ও প্রকৃতিকে ভুলে যাওয়া যেন একজন মানুষ হিসাবে তাকেও সতর্ক করে।

থিয়েটার জগৎ সম্পর্কে দিশারীর ধারণাটা একটু অন্যরকম। তার মতে, থিয়েটার জগৎ শুনলেই সবার যেটা মাথায় আসে, সেটা হল কমার্শিয়াল থিয়েটারের কথা। সেই কমার্শিয়াল থিয়েটার যে কোন ফরম্যাটেই হোক। যেখানে একটা কম্যুনেটিভ ভাষা থাকে দর্শকদের জন্য। আর এক রকমের থিয়েটারে অংশ নিয়ে কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট হয়।এই থিয়েটারটা থেরাপির মত কাজ করে মানুষকে সুস্থ করে তোলার জন্য। যেটাকে ড্রামা থেরাপি বলা হয়। দিশারীর আক্ষেপ,এ দেশে এই ফরম্যাটের বিষয়ে খুব একটা সচেতনতা লক্ষ করা যায় না।এই ব্যাপারটা, অর্থাৎ এই উদাসীনতাটা দিশারীকে গভীরভাবে ভাবায়।

থিয়েটার করে কি আদৌ বেঁচে থাকা যায়?… এই প্রশ্নের উত্তরে দিশারী জানিয়েছে,থিয়েটার করে মানে যদি শুধু অভিনেতা হয়ে  বাঁচার কথা বলা হয়ে থাকে তাহলে হয়তো বেঁচে থাকা কঠিন। তার মতে,শুধু অভিনয় নয় থিয়েটারের অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় যেমন লাইট, সেট, মিউজিক ও অফিসিয়াল কাজকর্ম আয়ত্ত করা যায়, তাহলে বাঁচা যায় বলে তার ধারণা। থিয়েটারে পড়াশুনো করে অনেক ফেলোশিপ পাওয়া যায়, সেটাও তার কাছে থিয়েটার করে বেঁচে থাকার একটা মাধ্যম।

দিশারীর বাড়িতে,পরিবারে কেউ কখনো থিয়েটার করেনি।কিন্তু তাকে থিয়েটারে যুক্ত হতে মা বাবা কখনো আপত্তি করেননি।বরং তাঁদের উৎসাহেই থিয়েটারে যুক্ত হয়েছে দিশারী। থিয়েটারে আসার ক্ষেত্রে তার মা বাবা অবশ্যই তার কাছে উৎসাহের উৎস। এটাকে সে অবশ্যই বিশেষ প্রাপ্তি বলে মনে করে।

নান্দীকার দলে বাচ্চাদের ক্লাসে অমল এন্ড দ্য লিটল প্রিন্স সহ তাসের দেশ নাটক ছাড়াও তার অভিনীত নাটকগুলি হল : মধ্যমগ্রাম থিয়েটার মার্জিনালে ” আমি”, বিডন স্ট্রিট শুভম দলে ” মাস্টারদা”, মাণিকতলা পারিজাত দলে ” ইচ্ছেডানা”, বেহালা ইউথোপিয়াতে “সাড়ে তিন”, “গোগো মোমো”, বিরাটি সমুহতে “অথ: হিড়িম্বা কথা”। বিভিন্ন দলে বিভিন্ন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করে এভাবেই নিজেকে গড়ে তুলছে নতুন প্রজন্মের দিশারী। পড়াশুনোতেও পিছিয়ে নেই সে। কলকাতা গার্লস হাই স্কুল থেকে আই  এস সি,কলকাতা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক, রবীন্দ্র ভারতী থেকে মাস্টার্স অফ ড্রামা ( এপ্লায়েড থিয়েটার)।

নান্দীকারে থিয়েটারের পাঠ শুরু করে যোগেশ মাইম একাদেমিতে মাইম এর প্রশিক্ষণ ছাড়াও রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এপ্লায়েড থিয়েটার নিয়ে স্নাতকোত্তর। এভাবেই থিয়েটারে আছে, থিয়েটারে থাকতে চায় নতুন প্রজন্মের অভিনেত্রী দিশারী মুখার্জী।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular