নিজস্ব প্রতিনিধি
পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমি আয়োজিত ২৩তম নাট্যমেলার প্রচারপত্রে বাদ দেওয়া হয়েছে নাট্যকারদের নাম। যা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেল নাট্যকারদের একাংশকে। এনিয়ে প্রতিবাদের মঞ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছে সোশাল মিডিয়া। তাতেই নিজেদের ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন নাট্যকাররা।
নাট্যকারদের দাবি, এটা আসলে ইচ্ছাকৃত। ইচ্ছে করেই প্রচারপত্রে নাট্যকারদের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। নাট্যকাররা নাটক লেখেন। সেই নাটক নিয়ে বিভিন্ন দল পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমির নাট্যমেলায় নাটকও করছে। সেই নাটকের নাম মেলার প্রাচরপত্রে দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু নাটকটি যাঁর লেখা – সেটাই দেওয়া হয়নি। এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে তা নিয়ে এখন উত্তাল সোশাল মিডিয়া।
নাট্যকারদের একাংশের যুক্তি, প্রচারপত্রে এমনটা নয় যে শুধু নাটকের নাম রয়েছে। নাটকের পাশাপাশি দলের নাম আর পরিচালকেরও নাম আছে। কিন্তু বাদ পড়েছেন নাট্যকারেরা। দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রবণতা সরকারি নাট্যমেলার প্রচারপত্রের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ, প্রচারপত্রে নাট্যকারদের নাম বাদ রাখাটা একটা অভ্যাস কিংবা নিয়মের মতো হয়ে গিয়েছে। একই ভুলের এই পুনরাবৃত্তিকে নাট্যকারদের একাংশ ‘অন্যায়’ বলে মনে করছেন। তাঁরা বলছেন, প্রচারপত্রে নাট্যকারদের নাম দেওয়ার যে কোনও প্রয়োজন নেই – সেটাই এবার সরকারি সিলমোহর পেয়ে গেল।
তবে, যে নাট্যকারদের নাটক এবার পশ্চিমবঙ্গ নাট্য আকাডেমিতে জায়গা পেয়েছে, তাঁরা এনিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করছেন না। আর এখানেই নাট্যজগতেও তৈরি হয়েছে ‘আমরা ওরা’। সোশাল মিডিয়ায় এনিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অনেকেই দাবি করছেন, আসলে সরকারি অনুদান পেতেই ওই নাট্যকারেরা তাঁদের মুখ বন্ধ রেখেছেন। ‘অন্যায়’কে মেনে নিয়েছেন।
অথচ বেশ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়ে নানা সেমিনার, সভা সংগঠিত হয়েছে, এর জন্য একদল নাট্যকার একযোগে সম্মিলিত হয়েছেন, আলোচনায় বসেছেন। সেখানে নাট্যকারদের তরফ থেকে নানা অভিযোগ উঠে এসেছে, যা নাট্য চর্চার ক্ষেত্রে ভীষণ বেদনার। একজন নাট্যকারের নাটক প্রযোজনা করা হয় কিন্তু তাঁর অনুমতি তো দূর অস্ত, তাঁকে জানানোই হয় না। যদি জানাজানি হয়ে যায়, তাহলে তারা বলেন, তাঁরা নাট্যকারের যোগাযোগ নাম্বার জানতেন না। এতে কি প্রমাণিত হয়? প্রশ্ন তুলছেন বিক্ষুব্ধ নাট্যকারেরা।
সিনেমা শিল্পে স্ক্রিপ্ট রাইটারের অনুমতি ছাড়া শুটিং শুরু হবে না। কিন্তু নাট্য মহলে এই চর্চা ভীষণ ভাবে জাঁকিয়ে বসেছে। দীর্ঘদিনের এই কু-অভ্যাস আজ নাট্য আকাদেমির মতো সরকারি নাট্যমেলার প্রচারপত্রে দেখা যাওয়ায়, সেটা আরও অস্বস্তি বাড়িয়েছে নাট্যমহলে। কেউ কিছু বলতে পারছেন না, যাঁরা একসময় গলা ফাটিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা অন্যায়’, আজ তাঁরাই নাট্যমেলায় চান্স পেয়ে চুপ থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।
অর্থাৎ রাতারাতি এরকম একটা অন্যায় বা কু-অভ্যাসকে সরকারীভাবে সীলমোহর দেওয়ার ফলে এই নিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে মানুষের মনে আর কোনও অস্বস্তি রইল না। আজ থেকে যেন এটা মনেই হতে পারে, এই তো নাট্য আকাডেমি যদি এরকম করে তাহলে এটাই নিয়ম।
এখন অপেক্ষা এই নাট্য আকাডেমিআবার না বলে বসে, নাট্যকারদের ‘নাম দেবার জায়গা ছিল না’। বড় অনাদরের এই কথাটি, যেখানে মাননীয়ার অনুপ্রেরণা বা উদ্যোগে এতো কিছু, সেখানে সামগ্রিক ব্যাবস্থাপনায় এত বড় ত্রুটি ঘটে কিভাবে? প্রশ্ন তুলছেন বিক্ষুব্ধ নাট্যকারেরা।
আবার নাট্যকারদের একাংশ এটাও বলছেন, এটা কোনো ভুলই নয়। দল খেটেখুটে নাট্য নির্মাণ করে। সেখানে যদি প্রয়োজনে নাট্যকারদের নাম বাদ যাবে। একসময় বাংলা গ্রুপ থিয়েটারে অভিনেতার নাম না দেওয়া নিয়ে বেশ তর্কের ঝড় উঠেছিল। সেই আড় ভেঙ্গেছিল ব্রাত্য বসুর নাটক ‘উইংকল টুইঙ্কল’ নাটকে। সেখানে দেবেশ চট্টোপাধ্যায় মুল অভিনেতার নাম ব্যবহার করেছিলেন। আজ যেটা অভ্যাস বা বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। একটি সাক্ষাৎকারে বর্তমান নাট্য আকাদেমির সভাপতি দেবশঙ্কর হালদার এমনটাই বলেছিলেন।
কিন্তু নাট্যকাদের নাম সরকারকারি নাট্যমেলার প্রচারপত্রে, না থাকা নিয়ে প্রথম সারির নাট্য ব্যাক্তিত্বদের থেকে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।