বহরমপুর প্রান্তিকের ‘বিরহের অন্তরালে’ মানবিক প্রতিক্রিয়ায় উজ্জ্বল নাটক

- Advertisement -

দুলাল চক্রবর্ত্তী

মানুষের জীবনে এমন কিছু সত্যি স্বীকার থাকে, যা একান্তই নিজের। সেই বিষয়কে অন্য কাউকে বোঝানো যায় না। এমন কিছু অন্তরের সাড়া ভেতর থেকে আপনিই আসে। কেউই পাশে দাঁড়িয়ে তা বুঝতে পারে না। তা-ই এর সমর্থন বাস্তবে কোথাও মেলে না। যেখানে হৃদয় দেবতার সাড়াই একমাত্র। জাগতিক জীবনের কোন যুক্তি তক্কো সেখানে খাটে না। সে এক কল্পিত জীবন। যার জন্ম মনে। মননে লালিত এক হৃদয় বৃত্তিতেই যার উৎপত্তি। তাই শুধু মনই জানে সেসব। তেমনই ঘটনা প্রেমে পড়া পুরুষ নারীর ভালবাসাময় জীবনে থাকে। কোন কৈশোরে একেবারে ছেলে মানুষের মত কিছু না বুঝেই, শুধু চোখ চাওয়া ভাললাগা থেকে ভালবেসে ফেলার তেমনই এক ইতিবৃত্তের প্রেম মাধুর্যতা, প্রান্তিক প্রযোজিত বিরহের অন্তরালে নাটকে এসেছে।

এই নাটকের গল্পে উঠে এসেছে, চোখ চাওয়া-চাওয়ি ভাললাগা ভালবাসায় মজেছিল দুই তরুণ তরুণী, আশুতোষ ও সুশীলার হৃদয়। অস্পষ্ট প্রেমপত্র বিনিময় অর্থহীন হয়েছিল। কেননা সেই চার চোখের মিলন বাস্তব জীবনে মিলনাত্মক হয়নি। নানা কারণে এই কাঙ্ক্ষিত ভালবাসা কোন পরিণতি পায় নি বলেই কি-না, নাকি বাস্তবতা মানিয়ে ওঠা যায় নি। তাই এক অবরুদ্ধতায় কেঁদেছে দুটি হৃদয়। অস্ফুট ভালবাসা অঙ্কুরেই সমাপ্ত। তাই সুশীলার কৈশোরেই বিয়ে হয়ে গিয়েছিল। তাতে কি সময়ের চাপেরই তাপ ছিল। নাটকে তা বোঝা যায় না। যাই হোক, বিয়ের পর অল্প বয়সেই সুশীলা বিধবা হয়। আত্মীয়েরা তাকে গলগ্রহ বিবেচনা করে। তাই তাকে দীর্ঘদিন কাশী/ বৃন্দাবনে নির্বাসিত হতে হয়। জীবনের ষাটটি বছর এক ভিক্ষুক জীবিকায় জীবিত থাকতে হয়েছিল। সম্বল ছিল ঈশ্বর উপলব্ধি। গল্প লেখক বেড়াতে গিয়ে ঘটনাচক্রে গোপাল/কৃষ্ণ পুজারিনী এই বৃদ্ধাকে দেখেন। তার দুর্দশায় সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। বৃদ্ধার নাম ইত্যাদি অবগতিতে আসে। এই জীবন থেকে তাকে গৃহস্থ জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার উদ্যোগে নামেন লেখক।

বৃদ্ধার অনিচ্ছায় তাকে কলকাতায় নিজের আবাসে এনে তোলেন। এরপর লেখক সচেষ্ট হন, এই বৃদ্ধাকে তার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজে বের করে, তাদের কাছে পৌঁছে দিতে। অজ্ঞাত এই বৃদ্ধা সুশীলার বিবরণ দিয়ে খবরের কাগজে সন্ধান চাই কলামে, বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। কিছু আভাসিত অতীত ঘটনার উল্লেখে সংবাদপত্র প্রকাশিত সেই বিবৃতিতে সাড়াও মেলে। কিন্তু অনেকেই এই বৃদ্ধাকে চিনতে পারে নি। নাকি চিনতে চায়নি, তা যদিও বোঝা যায় নি। কিন্তু এই গন্তব্যে যাওয়ার পথেই মহিলাকে চিনে নেওয়ার ঘটনায় সুশীলাকে চেনেন বলে সনাক্ত করতে চলে আসে এক বৃদ্ধ। তার নাম আশুতোষ। চির কুমার সে। এই প্রৌঢ আশুতোষ, খিটখিটে, অশক্ত, ভঙ্গুর। সে বর্তমানে আত্মীদের দয়ায় বেঁচে আছে। স্বজন ব্যাতিত একাকী চিলে কোঠার সেপাই জীবন যাপন করে।

সুশীলাকে দেখে আদলে চেনা লাগে তার। একটি প্রেমপত্রের মতো সুশীলার কাছ থেকে পাওয়া চিরকুট এতটা কাল সে বুকে বয়ে বেরিয়েছে। সুশীলাকে চিনে তার সরূপ জানতে  এই চিরকুটটি চরিত্র হয়ে সামনে আসে। সময়কে ব্যবহার করতে না পারায় এক দুর্ঘটনার মর্মান্তিক পরিণতিও সামনে এসে দাঁড়ায়। এই দু’জন কী সেই দুজন? একটি অর্থহীন ছেলে মানুষী লাল হয়ে যাওয়া প্রেম প্রকাশক চিরকুট, আজ দুই নাবলা কথার প্রেম কাহিনীতে, পরস্পরকে চিনে নেবার একমাত্র অধীশ্বর হয়ে ওঠে। আর তাতেই আছে সংকোচ-জট। বাড়ে জটিলতা। কিন্তু মলিনতা নেই। কে কাকে কীভাবে মনে রেখেছে, না রেখেছে, তার ভিন্ন প্রতিক্রিয়ায় এই নাটক এভাবেই অন্য প্রেম বোধে উদ্ভাসিত হয়ে যায়।

এই নাটকে আছে প্রেমের জয়গান। আছে অনুপম ভালবাসার সুগন্ধ। যৌনতার বাইরে এসে নারী পুরুষের প্রেম প্রীতির সম্পর্ককে প্রতিষ্ঠা করে বিশালত্বে। মিলন হীন ব্যর্থ প্রেমও গভীরতা পায়। এই বাস্তবে এক বৃদ্ধাকে চিনতে কাছের আত্নীয় কেউ আসেনি। এসেছে—-বলতে না পারা অস্পষ্ট প্রেমের পড়া এক তরুণের বলতে যাওয়ার চূড়ান্ত অপরাহ্ন বেলা। এসেছে বার্দ্ধক্য সময়। পাওয়ার সময় চলে গেলেও চাওয়ার সময় কিন্তু এই বয়সেও দিব্যি পড়ে আছে অবহেলায়। এই অদেখা অচেনা সম্পর্ক, অতীতের পাতা থেকে উঠে এসে এই সময়ের বাস্তবে, মস্ত বড় মূল্যবোধেই ধরা পড়ে ভাবায়।

তাই সব মিলিয়ে একটি বৈষ্ণব প্রেমের মানবিক প্রতিফলন পাওয়া গেলেও, বড় বার্তাও মিলেছে এই উপস্থাপনায়। তাই নাটকের মর্ম বার্তা যেমন হৃদয় অন্তর্ভুক্ত, তেমনই কিছুটা অলীক। ভুলেও না ভুলতে পারা দশার সম্পর্ক। শুধুই মনে পড়ে… প্রেমের এমনই এক শক্তিশালী সঙ্গীত। যা বেঁচে থাকার জন্যেই অনির্বাণ শক্তি। যে প্রদীপ বুকেই জ্বলে। আর নিভে যাওয়ার পরেও ধেয়ে আসা সলতে পোড়া ধোঁয়া কাকে যেন খুঁজে বেড়ায়। প্রেমের অন্তর্গত ছাই চাপা ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা আগুনের এই তাপ দিয়েই হৃদয়ের তাপমাত্রা মাপার চেষ্টা করেছে প্রান্তিক নাট্যদল। প্রযোজনার চলনের সরলতায়। কেননা সবভাবেই নিরাভরণ এই প্রযোজনা। গল্পের চলনেও নেই বিশেষ সম্পাদনা। সাহিত্য নাটকটিকে সরাসরি মঞ্চে আনা হয়েছে।

সময়ের জলছবির চলমান জীবন সাপেক্ষে এই ভালবাসার বাস্তব রূপ এখন আর নেই। তাই সময়ের চোখে অচেনা আর প্রেমাবেগের নমুনা বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করবেন সময়ের দর্শক। কিন্তু তাকিয়ে দেখা যাবে, ক্রমেই সুতীব্র হতে চলা বিবাহ বিচ্ছেদ, লিভ টুগেদার, অবৈধ সহবাস, এই প্রবাহের বিরুদ্ধে প্রেম যে একটি প্রতিষ্ঠান, তা ক্রমেই মুছে যাচ্ছে। এই নাটক অনাবিল চলায় ভালবাসার গন্তব্য দিশা বলে যায়। যদিও সে সাজেশন প্রযোজিত নাটকে নেই। থাকা উচিত কিনা, তুলনামূলক প্রেম ভালবাসা দেখাতে চাওয়া উচিত কিনা, ইত্যাদি ভাবা যেতে পারে। জীবনে যে যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, সেখানেই, নিজের নিজের চলমানতায় এক হারিয়ে যাওয়া ছেলেবেলার না বুঝে কাউকে ভালবেসে ফেলা, বলতে না পারা, লুকানো স্মৃতি, প্রেম পরিণতি না পেলে নিশ্চিতই তা অবান্তর। অবাস্তব সব অর্থেই।

তবু চাওয়া থেকে পাওয়ায় না যেতে পারার নীরব এই আর্তনাদ প্রমাণ করে দেয় নারী পুরুষের কামনা জগতে শুধু বিবাহ নামক যৌন সম্পর্কের নিয়ামক কখনোই শুধু শক্তিধর নয়। ভোগবাদী বিশ্বায়নের প্রভাবে নিচু উঁচু মধ্য সব বিত্তেই অবাদ সেক্স সম্পর্কিত চর্চায়, উল্লাস বাড়ছে। যা পরিবার ও সমাজের মূল বন্ধনকে ক্রমে শিথিল করে দিচ্ছে। পাশ্চাত্য কালচারের অংশীদার হয়ে পড়া বাংলার জল মাটি হাওয়ার প্রেমাবেগকে কিলিয়ে কাঁঠাল পাকা করছে। তাই অনাদি প্রেম এই দেহ সর্বস্ব উচ্ছলিত সম্পর্ক ভাঙ্গা প্রেমের বিরুদ্ধেই থাকে। প্রকৃত সম্পর্ক যে মরেও তো মরে না। চরম বার্ধক্যেও সেই কল্পনার অলীক সুখ-মাহাত্ম কথা, আলোকিত হয়েছে এই বিরহের অন্তরালে নাটকে। এই সময়ের জন্য এই গল্পের বা নাটকের যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। এ নাটক বোঝায় যে বিবাহ একটা প্রতিষ্ঠান। সেই প্রতিষ্ঠানে না যেতে পারার মর্ম কান্নাও হৃদয় জারিত প্রাণান্তকর সম্পর্ক পতাকা তুলে ধরারই অন্তর মথিত চেষ্টা। তাই তো আমাদের বিবাহিত জীবন ৪০/৫০ এ গিয়ে মহার্ঘতা পায়। মিলন বিরহ এমন দুই শব্দ বাংলা সংকীর্তনের ভাবাবেগের দুই প্রান্ত। যা কাঁধে নিয়েই নুয়ে পড়ে পরিবারের দুঃসহ বোঝা বইতে শশব্যস্ত আছে কতশত পরিবার। কত কত মরিয়া দম্পতি।

এই নাটকটি সরাসরি লিখেছেন সাহিত্যিক সমরেশ মজুমদার। তিনি প্রথিতযশা গল্পকার এবং ঔপন্যাসিক। কাজেই ওনার রচনায় গল্পের স্বাদ তীব্র। ঘটনা ক্রমে একটা কৈশর-প্রেম-পরিনতি নীরবে ভালবাসার মাহাত্ম্যে অনায়াসেই চলে গেছে। নিশ্চয়ই এটি সুখ পাঠ্য নাটক। কিন্তু এই সাহিত্যের হুবহু মঞ্চরূপ আনা বেশ কঠিন। প্রতিপাদ্যের বৈষ্ণব প্রেম এই সময়ের অভিজ্ঞতায় অনুভব হবে না। সম্পাদনা বিহীন প্রান্তিক প্রযোজিত বিরহের অন্তরালে নাটকে সেই অর্থে, যথাযথ প্রতিপাদ্য কী, তা নিরূপণে উদাসীনতা এসেছে। উদ্দেশ্য ছিল গল্পটা বিবৃত করা। কিন্তু সেই আবেগে নাটকের গঠনে ছেদ পড়েছে। পাশাপাশি এখনকার ভালবাসা-বাসির তুলনা ধরাতে পারলে একটা উদ্দেশ্যে চলা হতে পারে। নতুন শিল্পী কুশীলবদের যোগদান হেতুতে রূপারোপ প্রসঙ্গে খামতি রয়ে গেছে। অবশ্যই এসব আমার ব্যক্তিগত অনুমান। অনেকেই মানেন যে, নাটকের প্রাণ দ্বন্দ্ব। কিন্তু গল্পে সেই দ্বন্দ্বের অভাব আছে। সামাজিক রাজনৈতিক কোন চাপিয়ে দেওয়া বার্তা যেমন নেই। নেই তথাকথিত নাটুকে ব্যাকরণও। তবুও থাকতে হবেই এই ভালবাসা আমাদের কোন মঙ্গলালোকে নিয়ে যেতে চায়। বিরহের অন্তরালের বার্তা কী সম্পর্কের আবেগকে বর্ধিত করা? না সময়কে চেনানো, এটা পরিস্কার হওয়া উচিত।

তবে এই টেক্সটে আকস্মিকতা আছে। কি হয় না হয় ঘিরে কৌতুহলও আছে। আছে ঘটনা যত্রতত্র চলে যাওয়ার পেছনের কল্পনা-বাঙ্ময়তা। যে কোন দলের সামগ্রিক বলিষ্ঠ আন্তরিক অভিনয়ই পারে তা পরিস্ফুট করতে। এখানে তা কম কার্যকরী হয়েছে। এই ধরনের সাহিত্যধর্মী নাটককে মূর্ত করতে মিডিয়ামের সীমাবদ্ধতা টপকে যেতে হবে। সৃজনাত্মক কৌশল অবলম্বন  করতে হবেই। এখানে চলতি সিস্টেম ব্যবহার হয়েছে। যা ভাঙ্গার চেষ্টা করা জরুরি ছিল। এই গল্প অনুসারে নিয়মিত বৈচিত্র্য সরবরাহ করে এগিয়ে যেতে হতে পারে। গল্পের আয়রনি’কে, তার কহতব্য কথাকে, মঞ্চ আলো আবহের নিখুঁত বৈচিত্র্যময় চলনে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। এভাবেই ক্লাইম্যাক্স গ্র‍্যাফের চরম শীর্ষ প্রাপ্তিতে পৌঁছাতে ভাবনার বিপুল সামর্থ্য লাগবেই। কারণ মঞ্চ নাটকের শর্ত মোতাবেক এটি লিখিত নয়। বরং চলচ্চিত্র হবার কিছু সহজ গন্তব্য এই গল্পের ধারাবাহিকতায় আছে।

এখন ট্রেনে ভিখারিরা স্পিকারে গান বাজিয়ে ভিক্ষা করে। সময়টা টেকনোলজিকে বগলদাবা করে সব সুবিধা চেটে পুটে খাচ্ছে। কাজেই বহরমপুর প্রান্তিকের এই প্রযোজনাকে দর্শকদের কাছে মনোগ্রাহী করতে হলে, প্রচলিত নাটকের কিছুটা বাইরে আসতে হতে পারে। যেমন চলমান মঞ্চ পরিবর্তন ব্যবস্থা দরকার। সারা মঞ্চ ভূমির বিভিন্ন স্থানে অনেক দ্রুতিতে চমৎকার অভিনবত্বে কিছু সামান্য সাজেশন দিয়েই তা করা যেতে পারে। সাথে আরো উদ্দীপক আবহ, শব্দ, কালক্রমের ধারাপাত থেকে অতীত, বর্তমানের পার্থক্য জনিত ধ্বনি, সাবেকি আর এই সময়ের, দুই বিহেভ প্যাটার্নের মধ্যে চরিত্রের বিশষত্ব নির্ণীত হতে পারে। এ সবই কিন্তু প্রান্তিক দলের সমৃদ্ধি সাপেক্ষে চাওয়া। কারণ এ-ই দলই, ইতিমধ্যেই সারা বাংলায়, আমার পুতুল, মাই নেম ইজ গওহরজান, বালুকা বেলায় @ ডট কমের মতো নাটকের মঞ্চায়নে আমাদের চমকে দিয়েছিল। সেই রকমই উদ্ভাবনী শক্তি এখানেও দরকার। যদিও এই প্রিমিয়ার শো দেখেই এমন মন্তব্য হয়তো সঠিক নয়। এসব কথা বাড়তি চাওয়া বটেই।

বিরহের অন্তরালে নাটকের অভিনয় প্রসেসিং এ নতুন তরুণ তরুণীদের আরো পেশাদারি বলিষ্ঠতায় সচকিত করতে হবে। লেখক চরিত্রে নীলাঞ্জন পান্ডে এবং নীলার ভূমিকায় ঋত্বিকা ভট্টাচার্য ভাল দুই উপস্থিতি। এঁরা দুজনেই পাশাপাশি স্বামী এবং স্ত্রী হয়ে থেকেছেন নাটকে।  চারিত্রিক দক্ষতায় দু’জন, দুই টানাপোড়েন হয়ে নাটকের পক্ষেই ছিলেন। একইভাবে বিদুৎ বরণ মহাজন ও তপন জ্যোতি দাস যথাক্রমে রতন নামের চাকর ও বইয়ের প্রকাশক এই দুই চরিত্রে সফল ভূমিকা। তবে বড্ড সংক্ষিপ্ত। এই ভূমিকা দুটির মঞ্চ দৈর্ঘ্যতা বাড়াতে পারলে এই নাটক অন্য মোড়ে চরিত্র দুটির সাথে চলে যেতে পারে। অন্য ভূমিকায়, দালাল / ঋষু চৌধুরী, ডাক্তার / অরূপ চক্রবর্তী, ছোকড়া / বিশ্বজিৎ পাল, প্রমুখেরা একেবারে নতুন মঞ্চ শিল্পী বলেই, তাঁরা যতটা করেছেন তাতে তাদের ধন্যবাদ দিতেই হবে। তবে গল্পে সবাই গুরুত্বপূর্ণ বলে, নিজের এনার্জিতে নাট্য মুহুর্তে অনেক প্রাণবন্ত হতে হবেই। সুশীলা বৃদ্ধা, কেন্দ্রীয় চরিত্রের এই ভূমিকায় সৌমাশ্রী সরকার অভিনয় করেছেন। অল্প বয়সী মেয়ে। বার্ধক্য কী জানেন না। তাই আত্মিক যোগ বিচ্ছিন্ন ও পুরোপুরি অস্পষ্ট হয়ে থেকেছেন সব দৃশ্যেই। তাঁর এই অক্ষমতা বা দুর্বলতা নাটকের বিরুদ্ধে যাচ্ছে বলেই, চরিত্র নির্মাণে যথেষ্ট অনুশীলন প্রয়োজন। সব সময় মুখ ঢেকে থেকেছে এই মুখ্য চরিত্রটি। কিন্তু কেন? তাই এই চরিত্রের প্রকাশ মহিমা অস্বচ্ছন্দ থেকে যাচ্ছে।

আশুতোষ চরিত্রে,নির্দেশক প্রীতেশ লাহিড়ী খুব মানানসই চরিত্রায়ন। তবে এতগুলি আন্ডার এ্যাক্টিং কে ব্যালেন্স করতে, অভিনীত এ্যভারেজ এ্যাক্টিং রেঞ্জ অতিক্রম করে বিচিত্রতর হতে হবে। আরও ভিন্ন এবং অন্য চরিত্রের তুলনায় স্বতন্ত্র অথচ গভীর অনুভবে উজ্জ্বল হতে হবে। যাতে সল্প চারিত্রিক অভিক্ষেপে অনেক যন্ত্রণা দগ্ধতায় আশুতোষ একাকী জীবন নিয়ে নতুন কথার জন্ম দিতে পারে। অর্থাৎ, তাঁকে খুব অল্প সময়ে পিচে এসে ব্যাটিং এ ছক্কা পিটিয়ে টিম প্রান্তিককে জেতাতেই হবে। কারণ তিনি বহরমপুরের অন্যতম বিশিষ্ট মঞ্চ শিল্পী এবং অভিজ্ঞ নাট্যজন। এই নাটকের নির্দেশক। আশুতোষ চরিত্রটি গড়পড়তা অভিনয়ে উল্লেখযোগ্য না হলে নাটকের হয়ে ওঠার কষ্ট থাকে। আলো আবহ মঞ্চ সবই সাধারণ। কিন্তু হয়ে ওঠার জন্যে প্রয়োজনীয়, তবে সামান্য উপকরণ মাত্র। আঙ্গিক ভাবনায় গল্পের সাবেক ধরনের বিপক্ষে অনেক জোর দরকার। তবে এই নাটকের ক্রম অনুশীলন প্রযোজনাকে উত্তোরিত করতে পারে। ডাইরেক্টরিয়াল স্ক্রিপ্ট মুল লিখিত নাটকের পরিবর্তে ব্যবহৃত হলে প্রযোজনাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যেতে সুবিধা হতে পারে।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -