বাংলা নাটক ‘লাল পিঁপড়ে’

- Advertisement -

সুব্রত কাঞ্জিলাল

চরিত্র: ডাক্তার মুখার্জি। সদানন্দ। কালীচরণ সামন্ত। লোকটা। বোরখা পরা মেয়েটা।

উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স অঞ্চলের একটি ছোট শহর।

তখন বিকেল। ডাক্তারবাবু অর্থাৎ ডঃ মুখার্জি কলকাতায় যাওয়ার জন্য বেরুচ্ছেন। ভেতরের ঘর থেকে ব্যাগ ব্যাগেজ নিয়ে বাইরে আসবেন।

ডাক্তার।। কি হলো? সদানন্দ, আর কত দেরি করবে?

ট্রেনের টাইম হয়ে গেছে। ড্রাইভার কি গাড়িটা বার করেছে? এরপর বেরোলে ট্রেনটা মিস হয়ে যাবে। তুমি মালগুলো গাড়িতে তুলে দাও।

বাড়ির বাইরে থেকে সদানন্দ আসবে।

সদানন্দ।। বেরিয়ে পড়েছেন স্যার—!

ডাক্তার।। কথা না বাড়িয়ে মালগুলো গাড়িতে তোলো

সদা।। একটা কথা ছিল–

ডাক্তার।। গাড়িতে  যেতে যেতে শুনবো-

সদা।। মানে বলছিলাম যে—

ডাক্তার।। বড্ড বাচালের মত কথা বল। ঘড়ি দেখো ক’টা বাজে। আধ ঘণ্টার মধ্যে স্টেশনে পৌঁছাতে না পারলে—ট্রেন ধরা যাবে না!

সদা।। একজন পেসেন্ট এসেছে—

ডাক্তার।। মানে!? আমি এখন পেসেন্ট দেখতে বসবো? তোমার মাথার ঠিক আছে তো!!

সদা।। এমার্জেন্সি কেস স্যার—

ডাক্তার।। আমার ট্রেন ধরাটাও মোস্ট ইমারজেন্সি।

কালকে সকালের মধ্যে কলকাতায় পৌঁছতে না পারলে—-সেমিনারে আটেন্ড করা যাবে না!

সাদা।। সিরিয়াস পেসেন্ট স্যার!!!

ডাক্তার।। এখানে আমি ছাড়া কি আর কোন ডাক্তার নেই?

সদা।। অনেক ঘাটের জল খেয়ে তারপর আপনার কাছে এসেছে। একবারের জন্য আপনি পেসেন্ট কে অ্যাটেন্ড করুন।

ডাক্তার।। তোমার কি মনে হয় আমি ছুটি এনজয় করতে কলকাতা যাচ্ছি? তুমি কি জানো না? কলকাতায় কাল থেকে শুরু হচ্ছে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল প্র্যাকটিশনারদের সেমিনার? পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে প্রতিষ্ঠিত বড় বড় ডাক্তাররা আসছেন!!

সদা।। সব জানি স্যার। তবুও বলছি, পেসেন্ট একজন ভিআইপি—

ডাক্তার।। ভিআইপি পেসেন্ট!! তাহলে আমার কাছে কেন? আমি তো সামান্য এমবিবিএস! গরিবদের চিকিৎসা করি!—–তুমি বলে দাও সাত দিন পর আসতে।

সদা।। সব কথাই খুলে বলেছি। তবুও আপনার সঙ্গে দেখা করতে চাইছেন।

এই সময় বাইরে থেকে একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি যার নাম কালীচরণ সামন্ত এগিয়ে আসবেন। চেহারায় সম্ভ্রান্ত মানুষ বলে বোঝা যাবে না।

কালিচরণ।। আপনি যত টাকা ভিজিট চান আমি দিতে প্রস্তুত। তাছাড়া কলকাতায় যাওয়াটা ক্যান্সেল হয়ে গেলে ক্ষতিপূরণ দিতেও আমি প্রস্তুত।

ডাক্তার।। তাই নাকি। আপনি তো অনেক কিছু দিতে প্রস্তুত। আমি তো গ্রহণ করতে প্রস্তুত নই। তাছাড়া আপনি কিভাবে বুঝতে পারলেন যে টাকা দিয়ে কলকাতায় না যাবার ক্ষতিপূরণ হয়ে যাবে?

কালীচরণ।। অনুগ্রহ করে ভিতরে যাবেন? এখানে এভাবে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে পারছি না!!!

ডাক্তার।। হাতে আর মাত্র ২৫ মিনিট সময় রয়েছে।

ট্রেনটা মিস হয়ে যাবে।

সদা।। স্যার, উনি এখানকার এমএলএ। তাছাড়া বেশ কয়েকটা রাইস মিল, কোল্ডস্টোর আরো নানারকম—

ডাক্তার।। আহ সদানন্দ। আমি এসব জানতে চাই না।

তুমি মালগুলো গাড়িতে তোলো।

কালীচরণ।। আপনার সঙ্গে আমি মাত্র এক ঘণ্টা কথা বলব। তারপর আমার নিজস্ব গাড়ি আপনাকে নিয়ে সোজা কলকাতা পৌঁছে যাবে। কথা দিচ্ছি সকাল-সকালই পৌঁছে যাবে। আপনি সেমিনার অ্যাটেন্ড করতে পারবেন।

সাদা।। এই কথা উনি আমাকেও বলেছেন। সেমিনার আপনার মিস হবে না।

কালিচরণ।। আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন। লোকটা আমি যত খারাপই হই, আপনি আমার কাছ থেকে কোনরকম মিস বিহেব পাবেন না।

কিছু একটা ভেবে ডাক্তার তার চেম্বারে কালীচরণকে নিয়ে ঢুকবে।

ডাক্তার।। বেশ আসুন। অনলি থার্টি মিনিটস—-। সদানন্দ তুমি আমার মালপত্র আমার গাড়িতে গিয়ে রেখে এসো।

সদানন্দ।। ঠিক আছে স্যার।

ডাক্তার।। ড্রাইভারকে চলে যেতে বল বাড়িতে। তুমি তো ড্রাইভ করতে জানো? আমার সঙ্গে কলকাতা যেতে হবে তোমাকে!

সদানন্দ।। ঠিক আছে স্যার। তাই হবে।

ডাক্তার।। ভেবেছিলাম রাত্তিরটা ঘুমাতে পারবো। সেই কারণেই ট্রেনের রিজার্ভেশন করা হয়েছিল। সদানন্দ, সারারাত তোমাকে ড্রাইভ করতে হবে না। আমিও স্টিয়ারিংয়ে বসবো।

ডাক্তারবাবুর চেম্বারে আলো এসে পড়ল।

ডাক্তার।। (কালীচরণকে) বসুন! আপনি ভিআইপি হন আর যেই হোন, ওইসব বিশেষণ দেখে আপনাকে এখানে বসতে বলছি না! আমি ডাক্তার! যেকোনো অসুস্থ মানুষকে পরিষেবা দেওয়া আমার কর্তব্য! এখন বলুন আপনার কি হয়েছে? শারীরিক সমস্যাটা কোথায়? চুপ করে না থেকে বলুন, কিসের কষ্ট? সদানন্দ বলল যে, আপনি নানা রকম ডাক্তারের কাছ থেকে নানা রকম চিকিৎসা করে সবশেষে আমার কাছে এসেছেন! ডিটেলসে বলুন তো—

সদানন্দ।। স্যার, আমাকে উনি বলেছেন যে, উনার কোন অসুখ নেই।

ডাক্তার।। অসুখ নেই মানে?

সদানন্দ।। মনে হলো যে, জ্বর সর্দি-কাশি পেটের অসু খ বা অন্য কোনো রকম বড় বড় ডিজিস ওঁনার নেই। কোনরকম পরীক্ষাতে কোন কিছু ধরা পড়েনি।

ডাক্তার।। তাহলে আমার কাছে আসবার উদ্দেশ্যটা কি? আমার সময় নষ্ট করছেন কেন?

কালীচরণ।। আপনাকে আমি কিভাবে যে বলি–কোথা থেকে শুরু করি—আসলে কোথায় যে আমার প্রবলেম—-কেন যে আমি প্রায় এক বছর ধরে কি তার কিছু বেশি সময়, কষ্ট পাচ্ছি! ঘুমোতে পারিনা! এমনকি বিছানায় শুতে পর্যন্ত পারি না! বেশিক্ষণ কোথাও বসতে পর্যন্ত পারি না—-

ডাক্তার।। আপনার কোন রকম অসুখ নেই। অথচ আপনি এক বছর ধরে বিভিন্ন ডাক্তারের কাছে যাচ্ছেন। আমাকে আজকে এইভাবে ট্রেন ফেল করালেন। কেন বলুন তো? আপনার কি আমি কোন ক্ষতি করেছি?

কালিচরণ।। না না, ক্ষতি করতে যাবেন কেন—

ডাক্তার।। তাহলে আমাকে বাধ্য করলেন কেন ট্রেন মিস করতে? দেখুন মশাই, আমি আপনাদের মত রাজনীতি বুঝি না! বুঝতে চাইও না! আপনাদের কাছে কখনো অনুগ্রহ ভিক্ষা পর্যন্ত করতে চাই না। 

সদানন্দ।। স্যার, ওর সমস্যাটা আপনি যদি শুনেন, তাহলে চমকে উঠবে ন। বেশ ক্রিটিক্যাল। কোন ডাক্তার বিশ্বাস করতে চায় না যে—

ডাক্তার।। কি বিশ্বাস করতে চায় না?

সদানন্দ।। উনাকে সবসময় পিঁপড়া কামড়ায়।

ডাক্তার।। কি কামড়ায়?

কালীচরণ।। পিপড়া। ছোট ছোট লাল লাল পিপড়া।

ডাক্তার।। আপনাকে পিঁপড়ে কামড়ায় কেন? আপনি কি রসগোল্লা? যে পিঁপড়ের পাল আপনাকে ছেকে ধরবে?

কালীচরণ।। কোন একটা জায়গায় বেশিক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকলে কি বসে থাকলে আমার শরীরে পিপড়ে উঠে বসে।

ডাক্তার।। কাল বাজার থেকে নিমপাতা কিনে খাওয়া শুরু করুন। একইসঙ্গে হাতে পায়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় নিম পাতার রস মেখে নিন। তাহলে নিশ্চয়ই পিঁপড়ে কামরবে না।

কালীচরণ।। তারপরেও কামড়েছে।

ডাক্তার।। তারপরেও কামড়েছে!!! নিমপাতা খাওয়ার পরেও আপনাকে—তাহলে ওটা আপনার মনের অসুখ। কলকাতায় গিয়ে নামকরা সাইকিয়াটিস্টকে দেখান। (ডাক্তার উঠে দাঁড়াবে) সদানন্দ আর দেরি করা যাবে না! ট্রেনটা তো মিস করলাম! চলো গাড়িটা নিয়ে বেরিয়ে পড়া যাক!

কালীচরণ।। আরেকটু বসুন ডাক্তারবাবু। আমি তো আপনাকে কথা দিয়েছি যে, আমার গাড়ি আপনাকে কলকাতায় ঠিক সময় পৌঁছে দেব। আপনি আমার অসুখ সারিয়ে দিন। টাকার জন্য চিন্তা করতে হবে না। আমি টাকা বৃষ্টি করতে প্রস্তুত।

ডাক্তার।। আপনি ভুল করছেন। টাকার বৃষ্টিতে স্নান করবার কোনও বাসনা আমার নেই। মেডিকেল সাইন্সে এরকম কোনও রোগের উল্লেখ পাওয়া যায়নি। ওটা মনের রোগ। সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম। কলকাতায় যান। ভালো হয়ে যাবেন।

সদানন্দ।। মনের ডাক্তার উনি দেখিয়েছিলেন। কোনও ফল হয়নি।

ডাক্তার।। আমার চিকিৎসাতেও কোনও ফল হবে না।

একটা কথা বারবার করে বলছি, এরকম কোনও অসুখের ইতিহাস আমার জানা নেই।

কালীচরণ।। তাহলে ডক্টর টি কে বাসু আমাকে আপনার কাছে পাঠাল কেন?

ডাক্তার।। কোন টি কে বাসু?

সদানন্দ।। আপনার মেডিকেল কলেজের শিক্ষক। আপনি যাঁকে মেডিকেল সায়েন্সের ঈশ্বর মনে করেন।

ডাক্তার।। তাই নাকি। স্যার চিরদিন আমাকে ভালোবাসেন। আমার ওপর তাঁর অগাধ বিশ্বাস। কিন্তু আমি তো মেডিকেল সাইন্সের বাইরে কোনও রকম অলৌকিক যাদু-বিদ্যায় বিশ্বাস করি না। আপনি এক কাজ করুন। ঈশ্বরে যদি বিশ্বাস করেন, দেশে হাজার হাজার মন্দির আছে। গুরুজী বাবাজিদের আখড়া আছে। সেসব জায়গায় চলে যান। আমার সময় নষ্ট করবেন না।

কালীচরণ।। সেসব জায়গাও আমার ঘোরা হয়ে গেছে।

ডাক্তার।। কি মুশকিল। তাহলে আমি কি করতে পারি!!! আপনার কথা শুনে আমি কিছুই তো বুঝতে পারছি না! দয়া করে আপনি এখন যান। (কালীচরণ উঠে দাঁড়াবে) আমার মুখের দিকে তাকিয়ে কিছু হবে না! আপনার চিকিৎসা করা আমার সাধ্য নয়!

সদানন্দ।। স্যার, আমি বলছি স্যার, একটু ধৈর্য ধরে ওর কথাগুলো শুনুন! ব্যাপারটা যদি চাক্ষুষ করেন তাহলেই বুঝতে পারবেন , আপনি হয়তো বলে ফেলবেন মিরাক্যাল।।

ডাক্তার।। মিরাক্যাল!!! কি বলতে চাও তুমি?

সদানন্দ।। আসলে ওঁনার যে কি সমস্যা, এবার আপনাকে সেটাই দেখানো হবে।

ডাক্তার।। কি ব্যাপার বলতো সদানন্দ, ওঁনার ব্যাপারে তুমি এত সব জানলে কি করে?

সদানন্দ।। কালীচরণ সামন্ত মশাই আমাকে বলেছেন বলেই জানতে পেরেছি। এবার দেখুন স্যার, কালীচরণ বাবু উঠে দাঁড়িয়েছে, মানে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছেন।

কালীচরণ।। হ্যাঁ ডাক্তার বাবু। আপনার কথায় নয়।

আমি দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি তার কারণ ওই দেখুন-

সদানন্দ।। ওঁনার পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখুন। সারি বেধে তিনটে লাইন করে লাল লাল ছোট ছোট পিঁপড়া সামন্তবাবুর দুটো পা লক্ষ্য করে এগিয়ে চলেছে।।

ডাক্তার।। সে কি-! (টর্চের আলো ফেলে দেখার চেষ্টা)

সদানন্দ।। ওই দেখুন ভালো করে দেখুন! সামন্তবাবুর জুতোর মধ্যে ঢুকে পড়ছে শত শত পিপড়া!

কালীচরণ।। এবার আমার হাতের দিকে তাকিয়ে দেখুন। আপনার টেবিলে আমি হাত দুটো রেখে বসে ছিলাম। আপনার টেবিলে নিশ্চয়ই পিঁপড়ে ছিল না।

সদানন্দ।। না না তা থাকবে কেন!  চেম্বারও যেভাবে ডেটল ফিনাইল আরও অনেক কিছু দিয়ে পরিষ্কার করা হয়, এখানেও কখনো কেউ মশা মাছি পিঁপড়ে আরশোলা এমনকি টিকটিকি পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারবে না।

কালীচরণ।। কিন্তু এই দেখুন আমার হাতে পিঁপড়ের দঙ্গল এই টেবিল থেকে উঠে এসেছে।

ডাক্তারবাবুর বিস্মিত! রীতিমত হতবাক!

তিনি টর্চ দিয়ে বারবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে দেখার চেষ্টা করেন। রোমাঞ্চকর music আসবে।

এদিকে সামন্ত বাবু হাত এবং পা থেকে পিঁপড়ে ঝেড়ে ফেলার জন্য নানারকম চেষ্টা করবেন। কিছুতেই তিনি প্রতিরোধ করতে পারছেন না। লাফাতে থাকবেন ঘর ময়। ছুটতে থাকবেন এখানে ওখানে। সে এক হুলুস্থূল কান্ড।

ধীরে ধীরে আলো নিভে আসবে।

কয়েক ঘণ্টা পরে আবার যখন আলো আসবে দেখা যাবে, ডিসপেন্সারি সংলগ্ন একটা বেডে শুইয়ে রাখা হয়েছে কালীচরণ সামন্তকে। সদানন্দ তাকে ইনজেকশন দিয়ে বেরিয়ে এলো। ডাক্তার মুখার্জি সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তোয়ালে  দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বিপরীত প্রান্ত দিয়ে ঢুকবেন।

সদানন্দ।। এবার বুঝলেন তো স্যার, কি ভয়ংকর যন্ত্রণা নিয়ে সামন্ত মশাই কয়েকটা বছর ধরে ভুগছেন।

অগাধ সম্পত্তি। সাদাকালো মিলিয়ে কত টাকা যে তিনি রোজগার করেছেন, তার সঠিক হিসেব ওঁনার কাছে নেই। অথচ কয়েক বছর ধরে সমস্ত রকম রাজনৈতিক সামাজিক ক্ষেত্র থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছেন। রাখতে বাধ্য হয়েছেন। কোথাও যে বেশিক্ষণ বসতে পারেন না। দাঁড়াতে পারেন না। এমনকি বিছানায় শুয়ে ঘুমোতে পারেন না। বারবার চাদর বদলাতে হয়। জামা কাপড় বদলাতে হয়।

ডাক্তার।। ওঁনাকে এর আগেও কি ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হতো?

সদানন্দ।। সেটাই তো জানি। সেই কারণেই আমি আপনাকে বললাম একটা পিথিড্রিন পুষ করতে। নইলে ওঁনাকে শান্ত করা যাবে না।

ডাক্তার।। এভাবে চললে তো মারা যাবেন।

সদানন্দ।। জানি। ডাক্তাররাও এটাই মনে করেন।

ডাক্তার।। এছাড়া তো কোনো উপায় আমি দেখছি না।

সদানন্দ।। নানারকম টোটকা চিকিৎসা এর আগে হয়ে গেছে। যেমন সারা গায়ে কেরোসিন তেল মেখে রাখতেন। একবার এক সাধুবাবা বলল, কাঁটা দিয়ে কাঁটা তুলতে হবে। সাধুবাবার কথায় সারা গায়ে ঝোলাগুড় মেখে ঘুমোতে যেতেন। এই ব্যবস্থাও স্থায়ী হলো না। অর্থাৎ পিপিলিকার দলকে বিভ্রান্ত করা গেল না। কিছুদিন যেতে না যেতে তারা আবার ঝাকেঝাকে এসে উপস্থিত হলো। বিছানায় শুলে বিছানার চাদর লাল পিপিলিকার রঙে রাঙিয়ে যেত। পরনের জামা কাপড়ে থক থক লাল লাল পিপীলিকা বাসা বাধত। আরো যে কত রকম কাণ্ড ঘটে গেছে!

ডাক্তার।। প্রথমে ভেবেছিলাম সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম। কিন্তু নিজের চোখে লাল লাল পিঁপড়ের মিছিল দেখে মনে হচ্ছে, আরও বড় ভয়ংকর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে।

সদানন্দ।। এইসব দেখে শুনে অনেক ডাক্তার বলেছেন, সামন্তবাবুর মৃত্যু ওইসব লাল লাল পিপিলিকার মিছিলের হাতে।

ডাক্তার।। এখন আমরও তাই মনে হচ্ছে। কি বীভৎস পরিণতি!!!

সদানন্দ।। আমার একটা কথা শুনবেন। এই লোকটা ব্যক্তিগত জীবনে যত খারাপ কাজ করে থাকুন না কেন, তবুও তো মানুষ।

ডাক্তার।। এই লোকটা যে রাজনৈতিক দলের নেতা, সেই দলটাও তো সৎ ভদ্রলোকদের নিয়ে তৈরি হয়নি।

সদানন্দ।। সে যাই হোক না কেন, আপনি ডাক্তার।

কুখ্যাত ক্রিমিনাল যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাকে সুস্থ করে তোলবার কর্তব্য আপনার। তাছাড়া আরও একটি প্রশ্ন আছে। আগামীকাল আপনি যে সম্মেলনে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন, প্রস্তুত হয়ে উঠেছিলেন। ডাক্তারদের সেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ডাক্তার বাবুরা, ডাক্তারি বিদ্যার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। নতুন দিশার খোঁজ করবেন। এইরকম একটা আশ্চর্য মানুষ এবং তার রোগ নিয়ে আপনিও গবেষণা করা শুরু করুন। আপনার সামনে সেই সুযোগ অপেক্ষা করছে। ওই লোকটাকে সুস্থ করে আবার সামাজিক জীবনে ফিরিয়ে দিতে যদি আপনি পারেন ——

ডাক্তার।। তুমি ঠিকই বলেছো  এই ধরনের চ্যালেঞ্জিং সুযোগ খুব বেশি আসে না। তবে আমি অন্য কথা ভাবছি।

সদানন্দ।। বলুন কি কথা—

ডাক্তার।। কিছুতেই বুঝতে পারছি না, লাল পিঁপড়ের রহস্য কিভাবে ভেদ করা যাবে? কোথা দিয়ে শুরু করা যায়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এই ধরনের সমস্যার সমাধান আদৌ কি সম্ভব?

সদানন্দ।। আপনার মুখে আমি একজন রোগীর কথা শুনেছিলাম। ডাক্তারি জীবনের শুরুতে আপনি তার চিকিৎসা করেছিলেন।

ডাক্তার।। তুমি কার কথা বলছো বল তো?

সদানন্দ।। আমাদের এই সামন্তমশাইয়ের মত তিনিও ছিলেন অত্যন্ত প্রভাবশালী মানুষ। তার শরীরের চামড়া গন্ডারের চামড়ার মতো হয়ে উঠেছিল। ইনজেকশনের নিডল পুশ করতে গেলে ভেঙে যাচ্ছিল।

ডাক্তার।। হ্যাঁ হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে। তোমার দেখছি সব কথাই মনে আছে। তবে তাকে তো আমি সুস্থ করতে পারিনি। আফটার অল তিনি নিজে সুস্থ হতে চাননি।

সদানন্দ।। তবে সেই লোকটার চিকিৎসা করতে গিয়ে আপনি যে মেথড বেছে নিয়েছিলেন, ওই একই পদ্ধতিতে যদি আপনি এখানেও—–মানে আমি বলতে চাইছি, সেদিন যেভাবে একটা মানুষের গন্ডারে রূপান্তরিত হবার রহস্য ভেদ করেছিলেন। সেই ভাবে আপনাকে এবারও—-

ডাক্তার।। That’s right, তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

তাহলে তো এই লোকটার জীবনের ইতিহাস আমাকে জানতে হবে। একজন গোয়েন্দা যেমন করে অপরাধীকে কালটিভেট করে, অপরাধের উৎস সন্ধান করে, সেই ভাবে আমাকে এগোতে হবে। তাইতো?

সদানন্দ।। তাহলে সেই চেষ্টাই করতে হবে।

ডাক্তার।। কিন্তু সামন্ত বাবু কি আমাকে সাহায্য করবে? তিনি কি আমাকে বলবেন, তার জীবনের নানা রকম ঘটনার ইতিবৃত্ত?

সদানন্দ।। হয়তো বলবেন। আর যদি না বলেন, আমাদের খুঁজে বার করতে হবে।

এমন সময় বাইরে থেকে বিচিত্র কন্ঠস্বরে কে যেন বলে উঠলো—-

কন্ঠ।। কিছুই খুঁজে পাওয়া যাবে না! (হাসি)

সদানন্দ।।(চমকে উঠে) কে—কে ওখানে?

কন্ঠ।। যদিবা খুঁজে পাওয়া যায়, কিছুই প্রমাণ করা যাবে না।

ডাক্তার।। বাইরে কে? কে কথা বলে?

কন্ঠ।। ভূত আর ভগবান এসব নিয়ে বছরের পর বছর ধরে তর্ক-বিতর্ক চলে আসছে। কেউ কি প্রমাণ করতে পেরেছে ভূত আর ভগবানের অস্তিত্ব?

ডাক্তার।। আপনি যেই হোন না কেন ভেতরে আসুন—

কন্ঠ।। আসতে পারি। তাড়িয়ে দেবেন না তো?

সদানন্দ।। এটা ডাক্তার-খানা। এখানে সবার প্রবেশের অধিকার আছে। ভেতরে আসুন —-(টর্চের আলো ফেলবে)

লোকটা ভেতরে এলো। গ্রামের কৃষক সম্প্রদায়ের মানুষ বলে মনে হবে। তবে বড় বড় চুল দাড়ি আর ময়লা পোশাকে চেহারাটা যেন বীভৎস হয়ে আছে।

(টর্চের আলো হাত দিয়ে আড়াল করে)

লোকটা।। আলোটা সরিয়ে দিন। চোখে পড়লে জ্বালা করে। তাছাড়া আমি দিনের বেলা তো বেরুতে পারি না। রাতের অন্ধকারে ঘোরাফেরা করি।

সদানন্দ।। আপনি কি ভূত? দিনের আলো সহ্য হয় না?

লোকটা।। কি জানি আমি কি। তবে আমার মুখটা দেখলে রাতের অন্ধকারেও অনেকে ভয় পায়।

ডাক্তার।। এখানে এসেছ কেন? বাইরে থেকে কি সব বলছিলে—-তার অর্থ কি?

সদানন্দ।। তোমার শরীরে কি কোন সমস্যা আছে? রোগ ব্যাধিতে কষ্ট পাচ্ছ?

লোকটা।। সে তো অনেককাল ধরে পাচ্ছি। বেশ কয়েক বছর আগে আমাদের বাড়িতে আগুন লেগেছিল তো। আগুন নেভাতে গিয়ে আমারও শরীরের অনেকটা অংশ ঝলসে গিয়েছিল।

ডাক্তার।। তখন চিকিৎসা করাও নি কেন?

সদানন্দ।। আজ এতদিন পরে কি মতলব নিয়ে এসেছো?

লোকটা।। আগুন তো লেগেছিল আমাদের গ্রামে

আরো অনেকগুলো বাড়িতে। বলা যায় যে গ্রামের আরো অনেকে জ্যান্ত পুড়ে মরেছিল।

সদানন্দ।। তুমি কোন গ্রামের কথা বলছো? মন্ডল গ্রামের পাশে যে মুসলমান সম্প্রদায়ের গ্রাম—

লোকটা।। ঠিক ধরেছেন। গ্রামের জ্যান্ত মানুষেরা মানে যারা বেঁচে গেছিল তারা সবাই এদিকে ওদিকে পালিয়ে বেঁচেছে। ওটা এখন শ্মশানের মত।

সদানন্দ।। সেতো বছর পাঁচ ছয়ের আগের কথা। তা তুমি এই সময় এত রাতে কি মনে করে?

লোকটা।। জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে একটা সময় আসে যখন আর তেমন অনুভূতি থাকে না।

কিন্তু বেঁচে উঠতে লোভ তো থাকে।

সদানন্দ।। বেঁচে উঠতে মানে? আপনি কি মরে গেছেন?

লোকটা (আবার সেই অদ্ভুত হাসি)

সদানন্দ।। হাসছেন যে? আমি কি হাসির কথা বললাম? দেখুন, ডাক্তারবাবু খুব ব্যস্ত আছেন। আমাদের সময় নষ্ট করবেন না।

লোকটা।। কি কারনে ব্যস্ত আছেন এটা জানি। সেই জন্যই তো এলাম।

ডাক্তার।। কিভাবে জানলেন? সেই কারণে এলাম মানে কি কি?

লোকটা।। আপনাদের সাহায্য করতে।

সদানন্দ।। কে চেয়েছে আপনার সাহায্য? আপনি এখন আসুন। যান বলছি। কি হলো কথা কানে যাচ্ছে না?

লোকটা।। আমি চলে গেলে, ওই ঘরে যে লোকটাকে শুইয়ে রেখেছেন, তার চিকিৎসা কি করে করবেন?

সদানন্দ।। বাজে কথা না বলে, আপনি যাবেন নাকি অন্য ব্যবস্থা দিতে হবে—

লোকটা।। আপনারা ক্ষমতাবান লোক। সমাজের মাথা। আপনারা অনেক কিছুই করতে পারেন। তবে আর একবার ভেবে দেখুন, আমি কিন্তু আপনাদের সাহায্য করবার জন্যই আবির্ভূত হয়েছি। আমার কথা শুনুন। আখেরে আপনাদের লাভ হবে।

ডাক্তার।। সত্যি কথা বলুন তো কি চান আপনি?

লোকটা।। ওই ঘরের লোকটার লাল পিঁপড়ে রহস্যের সমাধান করতে।

ডাক্তার।। আশ্চর্য। লোকটাকে আপনি চেনেন?

লোকটা।। এই অঞ্চলের সবাই তাকে চেনে।

সদানন্দ।। অন্যসকলের চেনার সঙ্গে আপনার চেনার বিশেষ পার্থক্য আছে নাকি?

লোকটা।। আমার কথা শুনে এতক্ষণ তাহলে কি বুঝলেন? লাল পিঁপড়ের রহস্য নিয়ে আপনারা যে বেশ অথৈ জলে ভাসছেন এটাও আমি বুঝতে পারছি!

সদানন্দ।। ডাক্তারবাবু, আমি বুঝতে পারছি না কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই ডিসপেন্সারির খবর বাইরে কিভাবে চলে গেল।

লোকটা।। যদি বলি এই লোকটাকে যেভাবে লাল পিঁপড়ের মিছিল সকাল সন্ধ্যা তাড়া করে বেড়াচ্ছে,

সেই একইভাবে এই লোকটার সকাল সন্ধ্যার গতিবিধি চারিদিকে প্রচার হয়ে যাচ্ছে।

লোকটা আবার সেই বিচ্ছিরি হাসি হাসবে।

ডাক্তার এবং সদানন্দ দৃষ্টি বিনিময় করবে। নিচু গলায় কিছু কথাবার্তা বলবে।

লোকটা।। এখন ভাবুন, আমাকে রাখবেন নাকি তাড়িয়ে দেবেন।

ডাক্তার।। বেশ । আপনি যদি আমাদের সাহায্য করতে এসে থাকেন, তাহলে বলুন, ওই লোকটার বিষয়ে আপনি কি কি জানেন?

লোকটা।। বললাম তো। লাল পিঁপড়ের রহস্য জানি।

ডাক্তার।। তাহলে বলুন। ওই লোকটা কে লাল পিঁপড়ে তাড়া করে কেন?

লোকটা।। একটা শর্ত আছে।

সদানন্দ।। আবার শর্ত কেন?

লোকটা।। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড র সবকিছু শর্তের নিয়মে চলছে। নিঃস্বার্থ কথাটা একেবারেই বাজে কথা।

ডাক্তার।। বলুন কি শর্ত?

লোকটা।। ওই লোকটাকে লাল পিঁপড়ের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে দেবার আগে, আমার মেয়েটাকে জ্বালা যন্ত্রণা মুক্ত করতে হবে।

সদানন্দ।। আপনার মেয়ে—-কি হয়েছে তার?

ডাক্তার।। এবার বলুন তো সঠিকভাবে, কে আপনি? কোথা থেকে এসেছেন? কেন এসেছেন? ওই ঘরে যে ভদ্রলোক শুয়ে আছে তার সঙ্গে আপনার কি সম্পর্ক? আর আপনার মেয়ে কোথায় সে? কি হয়েছে তার?

লোকটা।। বলবো বলবো। বলবার জন্যই তো এসেছি।

তবে, একটা কাজ করুন। গোয়েন্দারা যেমন অপরাধীদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করে, সেই রকম কিছু করুন।

ডাক্তার।। আপনি ভুলে যাচ্ছেন, আমি গোয়েন্দা নই। ডাক্তার।

লোকটা।। কিছুক্ষণ আগে আপনি তো বলছিলেন, ডাক্তারকে ও রোগের কারণ জানতে গেলে খুঁজতে গেলে গোয়েন্দা হতে হয়। আমাদের চারিদিকে মারাত্মক সব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া ঘুরে বেড়াচ্ছে।

কিলবিল কিলবিল করছে। সুযোগ পেলেই আপনার আমার শরীরে ঢুকে পড়ছে। মানুষের মতো জীবজন্তুদের শরীর ছাড়া ওইসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া বাঁচতে পারে না।

ডাক্তার।। এতসব কথা জানলেন কি করে? আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে-

লোকটা।। অশিক্ষিত চাষাভসো। (হাসি) অজ পাড়াগাঁয়েতে চৌদ্দ পুরুষের বাস! এককালে জমি টমি ছিল।

হাঙ্গর কুমিরদের সৌজন্যে সবই গেছে। তবে আমাদের বংশের একটা অন্যরকম পেশা ছিল। কবিরাজি। কলকাতায় গিয়ে একটা সময় আয়ুর্বেদিক কলেজে ভর্তি হয়েছিলাম।

সদানন্দ।। তাই নাকি!

ডাক্তার।। তাহলে আপনিও ডাক্তার?

লোকটা।। না না সে সবকিছু না। আপনারা হলেন আমাদের কাছে ভগবানের মত। আমরা হলাম গ্রামের গরীব গুর্বদের অতি সাধারণ রোগব্যাধির টোটকা চিকিৎসক।

সদানন্দ।। সে যাই হোক। আপনার কথাবার্তা শুনে কিন্তু—–যদি কিছু খারাপ ব্যবহার করে থাকি আপনার সঙ্গে, ক্ষমা করে দেবেন!

লোকটা।। আরে মশাই, আমার চেহারা দেখে সবাই ভুল করে। সেটাই স্বাভাবিক।

সদানন্দ।। আপনি তাহলে বলছেন যে, সামন্ত মশায়ের মুখোমুখি হতে চান?

লোক টা।। বিলক্ষণ। তবে তার আগে আমার মেয়েটাকে দেখতে হবে।

ডাক্তার।। মেয়েটাকে সঙ্গে এনেছেন? কোথায় কোথায় সে? ভেতরে ডাকুন! কি আশ্চর্য!! একটা মেয়েকে বাইরে দাঁড় করে রেখেছেন!!

লোকটা।। আমার মত ওই মেয়েটাও দিনের বেলা ঘরের বাইরে আসতে পারে না। রাতের অন্ধকারেই তো আমাদের চলাফেরা। তাছাড়া ওকে দেখলে অনেকেই ভয় পায়।

সদানন্দ।। ভয় পায় মানে? খুব খারাপ দেখতে?

লোকটা।। খারাপ কুৎসিত দর্শন মেয়েরাও দিনের আলোতে ঘোরাফেরা করে। কাজকর্ম করে। বিয়েথা করে সংসার ধর্ম করে। কিন্তু আমার মেয়ে যে–

ডাক্তার।। থামলেন কেন বলুন। আপনার মেয়ে কি?

লোকটা এবার বাইরে গিয়ে নিজের মেয়েকে নিয়ে আসবে। বোরখা পরা মেয়ে। মেয়েটা আসতেই একটা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়লো চারিদিকে। ডাক্তার এবং সদানন্দ নাকে রুমাল দেবে।

লোকটা।। এইবার বুঝতে পারলেন তো, কেন বাইরে দাঁড় করে রেখেছিলাম।

ডাক্তার।। কি হয়েছে ওর? কুষ্ঠ? নাকি আরও ভয়ংকর কিছু?

সদানন্দ।। মাংস পচা গন্ধ।

লোকটা।। ওর মুখের কাপড়টা সরিয়ে দেখুন—-দেখুন দেখুন! আপনারা তো ডাক্তার—-মর্গের পচা দুর্গন্ধের মধ্যে ও আপনাদের কাজ করতে হয়। মেয়ের শরীরের আবরণ সরিয়ে না দেখলে, কিভাবে বুঝবেন ওর কি হয়েছে?

অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্বের পর ডাক্তার এবং সদানন্দ মেয়েটার মুখের কাপড় সরিয়ে দেখবে। এবং ছিটকে বেরিয়ে আসবে।

সদানন্দ।। কি ভয়ংকর! (বমি পাচ্ছে) কি বীভৎস!!

ডাক্তার।। ওর এই অবস্থা কি করে হলো?

সদানন্দ।। ওর মুখে চোখ নাক কিছুই তো নেই। মানুষের কঙ্কাল এর মত—-

লোকটা।। হ্যাঁ। মানুষের কঙ্কাল। শরীর থেকে রক্ত-মেদ -মজ্জা-মাংস সব গলে পচে গেছে।

ডাক্তার।। একে কি করে সুস্থ করা যাবে!!!০ তাছাড়া এভাবে চলে ফিরে কি করে বেড়াচ্ছে!!!? ওর শরীরে ইনজেকশন দেবার মত ভেন বা মাসল কিছুই নেই!

লোকটা।। (হাসি)

সদানন্দ।। আপনি হাসছেন!!!

লোকটা।। এখানেও লাল পিঁপড়ের রহস্য ঘনিভূত হয়ে আছে।

সদানন্দ।। নাটকবাজি না করে খোলাখুলি বলুন–

লোকটা।। খোলাখুলি বলবার চেষ্টা করছি। আমার মেয়েটাকেও ঝাঁক ঝাঁক লাল পিঁপড়ে আক্রমণ করেছিল।

ডাক্তার।। সে কি!!! কেন? কি করেছিল? কি হয়েছিল সব কথা খুলে বলুন!!

লোকটা।। একটা লোকের কথায় বুদ্ধি হারিয়ে ফেলেছিল। একটা দুষ্ট লোককে ভালোলোক ভেবে সম্পর্কে জড়িয়ে ছিল। শরীর এবং মন দিয়ে বিশ্বাস করেছিল।

ডাক্তার।। নাটকের ডায়লগ বন্ধ করুন। এরকম চেনা গল্প চেনা সংলাপ দিয়ে ডাক্তারদের কোন কাজ হয় না। আমি জানতে চাই এই মেয়েটাকে লাল পিঁপড়ে আক্রমণ করলো কেন?

সদানন্দ।। সামন্তবাবু ঘটনার সঙ্গে আপনার মেয়ের ঘটনার সম্পর্কটা কি?

লোকটা।। সহজ কথায় বললে বিশ্বাস করবেন কি?

আপনারা লজিক খুঁজবেন। রাজনীতি খুঁজবেন। আরও নানারকম এদিক-ওদিক বিতর্ক তুলবেন।

ডাক্তার।। ফালতু কথা ছাড়ুন। যা জানতে চায় বলুন।

এই মেয়েটা কথা বলতে পারে? কানে শুনতে পারে? খাওয়া দাওয়া করে কিছু?

সদানন্দ।। চুপ করে আছেন কেন? ডাক্তারবাবু যা জানতে চায় বলছেন না কেন? ঠিক কবে থেকে শরীরের এই অবস্থা হয়েছে?

লোকটা।। আমাদের গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু যেটা জানেন না সেটা হচ্ছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ কি?

সদানন্দ।। আজকের দিনে ঐরকম ঘটনা যত্রতত্র যখন তখন ঘটছে। আর ওইসব ঘটনার একটাই কারণ রাজনীতি। ভোট নীতি। ক্ষমতা দখল করে লুটপাট কর। আমাদের ওসব জানবার দরকার নেই।

লোকটা।। নিশ্চয়ই জানবার দরকার নেই। আপনারা চিকিৎসক। নামকরা ডাক্তার। আন্তর্জাতিক সেমিনারে বক্তৃতা করেন। ভাইরাস ব্যাকটেরিয়া নিয়ে নানা রকম রিসার্চ করেন। কিন্তু ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার জন্ম কাহিনী নিয়ে আপনাদের কোন আগ্রহ নেই। পৃথিবী সূর্যের চারিদিকে ঘোরে। কিছু কেন ঘোরে এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার কোন আগ্রহ নেই আপনাদের। চন্দ্র সূর্য পৃথিবী যখন একটা সরলরেখায় চলে আসে তখন চন্দ্রগ্রহণ সূর্যগ্রহণ হয়। কিন্তু কেন হয়, কেন একটা সরলরেখায় চলে আসে তার উত্তর খোঁজার দায় আপনাদের নেই।

ডাক্তার।। বেশ বলুন। আপনাদের গ্রামের অগ্নিকাণ্ডের কারণ কি ছিল?

লোকটা। আমার এই মেয়ে।

সদানন্দ।। আপনার মেয়ে!!!! কি বলছেন আপনি?

ডাক্তার।। ব্যাখ্যা করুন ব্যাখ্যা করুন। কি করেছিল আপনার মেয়ে?

লোকটা।। আগেই তো বললাম, একটা লোককে বিশ্বাস করেছিল। বিশ্বাস করে তার বিছানায় উঠেছিল। এবং তারপর খুন হয়েছিল।

সদানন্দ।। খুন।!!!!

ডাক্তার।। খুন হয়েছিল মানে? কে খুন করেছিল?

সদানন্দ।। আপনার মেয়ে যদি খুন হয়ে থাকে তাহলে এই মেয়েটা কে?

ডাক্তার।। দেখুন, আপনাকে দেখে আমি প্রথমে আপনাকে বুঝতে পারিনি। তারপর যখন বুঝতে শুরু করেছি, তারপরেও মনে হচ্ছে আপনি সোজা পথে কথা বলছেন না। জটিল করে দিচ্ছেন। ডাক্তারকে সমাজবিজ্ঞান, রাজনৈতিক বিজ্ঞান বুঝতে হবে না এটা আমি বলি না। মানুষের অ্যানাটমি আমাদের যেমন শিখতে হয়। ঠিক একইভাবে আমরা যদি মানুষের সাইকোলজি ফিজিওলজি বুঝতে না পারি তাহলে রোগের কারণ জানতে পারবো না। এসব বিষয়ে আমি আপনার সঙ্গে একমত। কিন্তু আপনি যখন বলছেন, আপনার মেয়ে খুন হয়েছে, আবার সেই খুন হয়ে যাওয়া মেয়েটাকে সামনে এনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছেন, তখন আপনাকে বুঝতে গিয়ে আমি বিভ্রান্তির শিকার হয়ে পড়ছি।

লোকটা।। সেটাই স্বাভাবিক। আমিও মানছি। এইখানে এসে ব্যাপারটা খুব নাটকীয় হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমি কি করবো বলুন তো? আজকের সমাজের গঠনের মধ্যেই তো জটিল নাটকীয় অসঙ্গতি রন্ধে রন্ধে ঢুকে পড়েছে।

সদানন্দ।। দেখুন মশাই, রাত প্রায় শেষের পথে। আজকের সন্ধ্যের গাড়িতে ডাক্তারবাবুর কলকাতা যাবার কথা ছিল। সেটা ভেস্তে গেছে। তারপর আমরা ঠিক করেছিলাম ডাক্তারবাবুর মোটর গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়বো। এখন দেখছি সেটাও ভেস্তে যেতে বসেছে।

ডাক্তার।। তাই বলে লাল পিঁপড়ের রহস্য উদঘাটন না করে আমি চেম্বার থেকে বেরোতে পারব না সদানন্দ।

সদানন্দ।। স্যার আমি বলছি, লোকটা জাল। ফালতু লোক। মাঝরাতে আমাদের সময় নষ্ট করতে ঢুকে পড়েছে। এটা কে আর পাত্তা দেওয়া যাবে না। আপনি আমার সঙ্গে চলুন। এখনো সময় আছে। বিকেলের আগে আমরা পৌঁছে যেতে পারবো। সেমিনারটা এটেন্ড করা দরকার।

ডাক্তার।। আমার মনে হচ্ছে, সেমিনার অ্যাটেন্ড করার থেকেও যে নাটকটা শুরু হয়েছে সন্ধ্যের সময় তার অন্তিম দৃশ্য আমাকে দেখতেই হবে। (লোকটাকে) আপনি বলুন তো, আপনার এই মেয়ের এই অবস্থাটা কিভাবে হলো?

লোকটা।। তাহলে তো ওই লোকটাকে ডাকতে হয়।

সদানন্দ।। লোকটাকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। ওকে ডাকা যাবে না। আপনি বলুন। সময় নষ্ট না করে, যা বলতে এসেছেন, সেটা শেষ করুন।

এমন সময় দেখা যাবে ভেতর থেকে কালীচরণ সামন্ত ধীরে ধীরে বেরিয়ে এসেছে।

সদানন্দ।। একি আপনি উঠে এলেন কেন?

কালীচরণ।। ইনজেকশন এর প্রভাব ছিল অল্প কিছুক্ষণ। তবে শরীরটা এখনো অবশ্ হয়ে আছে।

লাল পিঁপড়ের ঝাঁক সেই কারণেই হয়তো দূরে ওত পেতে বসে আছে। কেন জানি না এখন আমার মনে হচ্ছে, আর কোনোভাবে ও আমার নিস্তার নেই। অনেক তো চেষ্টা করে দেখলাম। সাত সাতটা দিন একটা বজরা ভাড়া করে নদীর মধ্যে ভেসেছিলাম।

৮ দিনের দিন জল সাঁতরে সাঁতরে সাঁতরে ওই লাল পিঁপড়ের ঝাঁক আমার বজরায় উঠে পড়েছিল।

সদানন্দ।। আপনি বসুন সামন্ত মশাই। নইলে পড়ে যাবেন।

কালীচরণ।। আমাকে বলতে দিন। জন্মেছিলাম নিম্নবিত্ত পরিবারে। তারপর কেমন করে যে কি সব হয়ে গেল। রাজনৈতিক ক্ষমতার অলিন্দে নিজেকে আবিষ্কার করে ফেললাম। সেই থেকে সব পরিবর্তন ঘটতে লাগলো। মনে হল চারদিকের যা কিছু সম্পদ ভোগ করবার জন্য রয়েছে সেগুলো আমার চাই।

আমার হাতের নখ গুলো ধারালো হয়ে উঠলো। মুখের ৩২ পাটি দাঁত ক্রমাগত বেড়ে উঠতে শুরু করল।

বাঘের মত থাবা দিয়ে লুটপাট শুরু করে দিলাম।

কোন প্রতিদ্বন্দী সামনে ছিল না। শুরু  করে দিয়েছিলাম লাল পিঁপড়ে গুলোকে পায়ের তলায় পিষে মারতে।

কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি কিশোরী মেয়ের কাছে হেরে গেলাম।

ডাক্তার।। কিশোরী মেয়ে!! কে সে? কার মেয়ে? তার পরিচয় কি?

কালীচরণ।। জানিনা। জানবার চেষ্টাও করিনি। মেয়েটা কে শিকার করে রক্ত মাংস খাবার পরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে ছিলাম।

লোকটা।।(হেসে উঠবে) বেচারা! একটা ছোট্ট কিশোরী মেয়েকে হজম করতে পারল না!!! ধরা পড়ে গেল!

কালীচরণ।।। দুর্ভাগ্য। দুর্ভাগ্য। পচা শামুখে আমার পা কেটে গেল।

লোকটা।। সামনেই ছিল রাজনৈতিক যুদ্ধ।

মানে ভোটের যুদ্ধ। ভোটের উৎসব। মেয়েটার লাশ গুম করতে গিয়ে, দলের ভেতরের লোকজন বিট্রে করল।

কালীচরণ।। মাঝরাতে আমি আমার বিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিয়ে ফিরে এসেছিলাম জঙ্গলে। ঠিক যেখানে মেয়েটার লাশ পড়ে ছিল। ভেবেছিলাম মাটির তলায় পুতে ফেলবো।

লোকটা।। (আবার হাসি) কিন্তু কোথায় লাশ? তন্ন তন্ন করে লাশটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।

কালীচরণ।। না না। তা ঠিক না। লাশটা পড়েছিল একটা বট গাছের নিচে। হাতের টর্চ জ্বালিয়ে দেখলাম

লোকটা।। কোটি কোটি লাল পিঁপড়ের ঝাঁক লাশটাকে ঢেকে রেখেছিল।

কালীচরণ।। প্রথমে চমকে উঠেছিলাম। ভয় পেয়েছিলাম। এই লাশটাকে আমি কি করে মাটির তলায় পুতে ফেলব!!! লাল পিঁপড়ে গুলো যদি আমাকে আক্রমণ করে বসে!

লোকটা।। তখন সঙ্গের লোকজন বলল, লাশটাকে গুম করতে না পারলে, আপনি ধরা পড়ে যাবেন। ভোটে জেতা যাবে না।

কালীচরণ।। ঠিক তাই। একজন বলল, স্যার, মাটি খোঁড়াকড়ি করার দরকার নেই। লাশটাকে এখানে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিই।

লোকটা।। মাথা ঠিক ছিল না। এমন অবস্থায় কারোর মাথা ঠিক থাকে না। বোকার মত লাশটাকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হলো।

কালীচরণ।। চোখের সামনে দেখলাম কোটি কোটি লাল পিঁপড়ার সঙ্গে লাশ জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।

লোকটা।। তারপরে বাড়ি ফিরে আসা। পরের দিন থেকে ভোটের প্রচারে নামতে হবে। মাথা ঠান্ডা রাখা দরকার। মিটিং এর পর মিটিংয়ে ভাষণ দিতে হবে।

ইলেকশন মেশিনারি ঠিক করতে হবে।

কালীচরণ।। সব বরবাদ হয়ে গেল। সকালে ঘুম ভাঙলো। কিন্তু এ কি!!! আমার ঘরের দরজা দিয়ে লাল পিঁপড়ের শাড়ি বিছানায় উঠে এসেছে!!!

আমি হাত দিয়ে পা দিয়ে হাতের সামনে যা কিছু পেয়েছি সেই সব দিয়ে লাল পিঁপড়েগুলোকে মারতে শুরু করলাম।

লোকটা।। যতই মারি, রক্তবীজের মত মাটি থেকে দলে দলে উঠে আসতে থাকে। ছড়িয়ে পড়তে থাকে শরীরের এখানে ওখানে।

কালীচরণ।। সেই থেকে ওরা আমার পিছু ছাড়ছে না।

যেখানে যাই, ওরা আমাকে তাড়া করে। আমাকে যন্ত্রণা দেয়। আমাকে বসতে দেয় না। শুতে দেয় না।

ঘুমোতে দেয় না। খেতে দেয় না। (কাঁদতে থাকে)

বলতে বলতে কালীচরণ আবার উন্মাদের মতো আচরণ করতে শুরু করে। তার গায়ে হাজার হাজার লাল লাল পিপড়ে উঠতে শুরু করেছে।

লোকটা হাসতে থাকে।

বোরখা পরা মেয়েটা কালীচরণকে জাপটে ধরতে চেষ্টা করে। কালীচরণ বোরখা পরা মেয়েটাকে দেখে আর্তনাদ করে ওঠে।

ডাক্তার এবং সদানন্দ এই মুহূর্তে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে।

তারপর দেখা গেল কালীচরণ লাল লাল পিঁপড়ে আগুনে পুড়তে শুরু করেছে। সেই লোকটা এবং মেয়েটা অদৃশ্য হয়ে গেছে।

ডাক্তার এবং সদানন্দ লোকটা এবং মেয়েটাকে খুঁজতে থাকবে।

সদানন্দ।। স্যার, স্যার লোকটা কোথায় গেল বলুন তো?

ডাক্তার।। মেয়েটাই বা কোথায় গেল?

সদানন্দ।। এসব কি হচ্ছে স্যার?

ডাক্তার।। আমিও তো কিছুই বুঝতে পারছি না!!

লাল আগুনে কালিচরণ পুড়ে যাচ্ছে।

আলো নিভে যাবে। আবার আমরা ফিরে আসবো প্রথম দৃশ্য তে।

ডাক্তার।। হল কি, সদানন্দ, কোথায় তুমি? এরপর বেরোলে ট্রেন ধরা যাবে না!

বাইরে থেকে সদানন্দ আসবে।

সদানন্দ।। কোন চিন্তা নেই স্যার। ট্রেন তিন ঘন্টা লে ট রান করছে।

ডাক্তার।। তাতে হয়েছেটা কি? তুমি আর দেরি না করে মালগুলো গাড়িতে নিয়ে তোল। মাঝে মাঝে তুমি আমাকে এমন ভাবে টেনশনে ফেলে দাও না। কোথায় গিয়ে বসেছিলে—?

সদানন্দ।। আজকে যাচ্ছে তাই কান্ড ঘটে গেছে।

ডাক্তার।। ওসব তো রোজই ঘটছে এখানে ওখানে।

সদানন্দ।। এটা অন্যরকম ঘটনা স্যার। এই অঞ্চলের এক দাপুটে নেতা গোছের লোক বটগাছে গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে।

ডাক্তার।। এ আবার কি কথা! ওইসব লোকেরা গলায় দড়ি দেয় নাকি!!

সদানন্দ।। হ্যাঁ স্যার। সবাই বলাবলি করছিল। অনেকদিন থেকে কি একটা রোগে মরতে বসেছিল।

ডাক্তার ।। তাই বলে গলায় দড়ি!! ওদের তো অনেক টাকা! চিকিৎসা করাতে পারেনি?

সদানন্দ।। ওই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই স্যার।

লোকটাকে নাকি লাল লাল পিঁপড়ে সব সময় তাড়া করতো।

ডাক্তার।। কি বললে? লাল পিঁপড়ে?

সদানন্দ।। হ্যাঁ স্যার। লাল পিঁপড়ে। লোকটা যখন যেখানে যেত, লাল পিঁপড়েরা মাটি থেকে লোকটার সারা গায়ে ছড়িয়ে পড়ত।

ডাক্তার।। (চমকে ওঠে) তাই নাকি!!!

ধীরে ধীরে পর্দা নেমে আসে।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -