রাজডাঙ্গা দ্যোতকের নাটক ‘মৃত্যুর জন্মদিন’ শুধু প্রতিবেদন নয় অনুভব

- Advertisement -

সুপর্ণা ভট্টাচার্য

‘আমরা এই আকালেও স্বপ্ন দেখি, কার তাতে কী?’

এখন আমরা এক ‘অদ্ভুত আঁধারের’ মধ্যে দিয়ে চলেছি। রাষ্ট্র অথবা রাজ্য সাধারণ মানুষকে কোথায়, কীভাবে দাবার বোড়ে বানিয়ে চলেছে, আমরা জানিনা। অকস্মাৎ জানতে পেরে যাই, আমাদের অরণ্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে, বিক্রি হয়ে যাচ্ছে পাহাড়, নদী। চোরাবালিতে ডুবে যাচ্ছে প্রান্তিক সম্প্রদায়। আমরা, যারা নাগরিক সভ্যতায় গর্বিত, তারা বুঝতেও পারছি না, ওই চোরাবালি একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে এগিয়ে আসছে, নগরের প্রতিটি অলিগলিতে।  

গত ১৯ মে ২০২৪ অঙ্গন নাট্য সংস্থা আয়োজিত এক নাট্য সন্ধ্যায় ‘রাজডাঙা দ্যোতকের’ প্রযোজনা, অনির্বাণ সেনের নাটক ’মৃত্যুর জন্মদিন’ অভিনীত হল তপন থিয়েটারে। এ যেন এক শীতল অনুভূতি, বুকের মধ্যে এক উত্তল অনুরণন তুলে দেয় এই প্রযোজনা। ধামার সম্প্রদায়ের জন্য লড়ে যান যে অনমনীয় মহিলা, তাঁকে দেখে শ্রদ্ধায় আনত হয় মাথা। যিনি গোটা নাট্য জুড়ে থেকে যান তীব্রভাবে, তিনি ডঃ অভিরাম শর্মা। যাঁকে পরিকল্পিত ভাবে নীরব করিয়ে দেওয়া হয়েছিল চিরতরে। তিনি যে আওয়াজ তুলেছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। মৃত্যুর পরেও তাঁর কন্ঠরোধ করা যায়নি কিন্তু, তা আমরা শুনতে পাই গোটা সময় ধরে। তাঁর স্ত্রীর দৃপ্ত কন্ঠস্বর, ঋজু শিড়দাঁড়া, ক্ষুরধার বুদ্ধি, ধামার সম্প্রদায়ের ভূমি পুত্র-কন্যাদের শক্ত হাত আমাদের প্রতি মুহূর্তে তাঁর উপস্থিতি মনে করায়। ছবির মুখটি প্রতিবাদের মুখ হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক ক্ষমতা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়েও আতঙ্কিত করতে পারে না সাধারণ মানুষকে। লোভকে জয় করে তারা তাদের ঝুমরা পাহাড় বিক্রি হতে দেয়না। আশ্চর্য লাগে শেষটি। লড়াই করে যেতে হবে এমন ইঙ্গিত থাকে। আমাদের হাতের মুঠি শক্ত হয়। আমরা জেগে থাকি।

অত্যন্ত সমসাময়িক,প্রাসঙ্গিক,ক্ষমতার চোখে চোখ রেখে ‘এই আকালেও স্বপ্ন’ দেখার নাটক ‘মৃত্যুর জন্মদিন’। এই নাটকের টিম ওয়ার্ক অনন্য।

ডঃ অভিরাম শর্মার অসমাপ্ত কাজকে যিনি জীবনের ব্রত করেছেন সেই স্ত্রীর ভূমিকায় সুপর্ণা দাসের কন্ঠস্বর, স্বরক্ষেপন, খুব সহজ অথচ ব্যক্তিত্বপূর্ণ হাঁটাচলা, তার বেদনা, যন্ত্রণা, একদম উচ্চকিত নয়, অথচ অন্যায়ের চোখে চোখ রেখে কথা বলা, মুগ্ধ করেছে। সায়নী মজুমদার ধামার সম্প্রদায়ের প্রতিভূ রূপে বেশ স্বতস্ফূর্ত ও দক্ষ। সুমন সিংহ রায় এই মুহুর্তে একজন দক্ষ অভিনেতা। চরিত্রটি উনি যথাযথ ভাবে চরিত্রায়ন করেছেন। এখানেও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব রূপে প্রশংসনীয়। জয়েশ ল অনুগত এবং বিকিয়ে যাওয়া পুলিশ চরিত্রে ভালো। একটি ছোট চরিত্র প্রধান শিক্ষক অথচ নজরে পড়ার মতো অভিনয়ে সুমন লাহিড়ি। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে দেবজিৎ ব্যানার্জি, সুপর্ণা সাহা, সৌম কর্মকার, সৌরজিৎ বাসু, মৌ দাস সকলের অভিনয়ই ভালো।   

সৌমেন চক্রবর্তীর আলো বেশ ভালো। অজিত রায়ের মঞ্চ বেশ ছিমছাম, বাহুল্যবর্জিত। আবহে সন্দীপ মুখার্জী যথাযথ। কোরিওগ্রাফি করেছেন বুদ্ধদেব দাস। রূপসজ্জায় শেখ ইব্রাহিম।     

এখনও নাট্য নির্মাণ করতে গেলে, তার বিষয় এবং টিম ওয়ার্ক প্রধান হওয়া সবচেয়ে বেশী জরুরী। এই প্রযোজনা সেইদিক থেকে সফল। এ নাটক আগামীতে দর্শকধন্য হবে এরকমটা প্রেক্ষাগৃহের উপস্থিতি ও প্রতিক্রিয়ায় স্পষ্ট ছিল।   

এই নাটকের পরিচালনা করছেন শুভাশিস ভট্টাচার্য এবং শান্তনু দিক্ষিত। নাট্য নির্মানের কৌশল ভালো লাগার প্রশংসা অনেকটাই নির্দেশকদ্বয় দাবী রাখেন। এই নাটক আমাদের মাথার ভিতর প্রশ্ন জাগিয়ে রাখে, আমরা ফিরতি পথে স্বপ্ন দেখি। এখানে নাটকের বিষয় ও লেখনী শক্তির উৎকর্ষতার জন্য সার্থক অনির্বাণ সেনের কলম।      

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -