রানাঘাট সৃজকের নাটক খর-তামাশা 

- Advertisement -

দেবা রায়

তীর্থঙ্কর চন্দের লেখা নাটক প্রযোজনা করেছে রাণাঘাট সৃজক। পরিচালনা করেছেন নিরুপম ভট্টাচার্য। সম্প্রতি অনীক আয়োজিত ‘সদরে মফস্বল’ শীর্ষক নাট্য সন্ধ্যা কর্মসূচীতে নাটকটি অভিনীত হল। নাটকটি অবশ্যই একটি পলিটিক্যাল স্যাটায়ার। যা চিরকালীন বাংলার রাজনৈতিক সংস্কৃতি, যার সাথে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক টানা -হ্যাচড়া। গোটা সংসদীয় রাজনীতির হাস্যকর অবস্থানের উপস্থাপনা নাটকের বাঁধনকে টান টান করেছেন। নিঃসন্দেহে নাট্যকার তীর্থঙ্কর চন্দের মুন্সিয়ানা নাটকের সংলাপকে সঠিক ছন্দে সাজাতে সক্ষম হয়েছে। তার প্রমাণ আমি লেকার সাথে সাথে বলছি। এই নাটক কতটা সমসাময়িক তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি চিরকালীন। নাটকের টেক্সট ও সংলাপ  অবশ্যই তার সাথে দৃশ্যের বিন্যাস ভীষণভাবে নাটক হিসেবে পূর্ণতা পেয়েছে।  

এহেন নাটকের মঞ্চায়ন খুব সহজ কাজ নয়। সেই ব্যাপারে রানাঘাট সৃজক যেন একটা টীম ওয়ার্ক। গ্রুপ থিয়েটারের সবকটি গুণই তাদের বর্তমান। তারা নিজেরাই মঞ্চ সাজিয়েছেন, নিজেরাই আবহ করেছেন, নিজেরাই শব্দ প্রক্ষেপণে থেকেছেন। আলো  করেছেন। আর এই এত বড় একটি কাজকে এক সূত্রে বেঁধেছেন পরিচালক নিরুপম ভট্টাচার্য।

নাটকের প্রারম্ভিক সংলাপে জনার্দন এক ব্যক্তি যিনি তার একটি লিফলেট ছাপাবার উদ্দ্যেশ্যে ছাপাখানায় এসেছেন। তার সাথী রাজু নামের এক গাধাকে নিয়ে। গাধার সাথে জনার্দনের সম্পর্কের মধ্যে ভালোবাসা আর মনুষ্যত্বের দিকটি সুন্দর করে চিত্রিত হয়েছে এই নাটকে। আর তারই পাশাপাশি সেই একই কাজে অর্থাৎ লিফলেট ছাপাতে আসেন অন্যান্য রাজনৈতিক দলের কর্মীরা। ছাপাখানার মালিকের সাথে জনার্দনের কথোপকথনের মধ্য দিয়ে বোঝা যায়, রাজু নামের গাধাটা যখন তখন বিকট শব্দে হেসে ওঠে। গাধা কেন হাসে এই কারণ অনুসন্ধানেই জনার্দনের লিফলেট ছাপানোর অভিপ্রায়। এদিকে একে একে মঞ্চে আসেন রুলিং পার্টির ক্যাডার, বিরোধী পক্ষ, এমনকি নির্দল। এসবই  সংসদীয় রাজনীতির নির্ভেজাল সহজ প্রকাশ। যা সরল ও  সহজভাবে প্রতিভাত।

এইসকল রাজনৈতিক ক্যাডারদের বিপন্নতা, অসহায়তা, দর্প যখন মঞ্চের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়, ঠিক তখনি অদূরে দাঁড়িয়ে থাকা রাজু সেই বিকট শব্দে হেসে ওঠে। সেই হাসি একসময় গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোর প্রতি যেন এক জোড়ালো প্রতিবাদ বা ধিক্কার হয়ে ওঠে। জনার্দন চরিত্র রূপদানকারি অভিনেতা বিকাশ ঘোষ চরিত্র নির্মানে সফল, সাবলীল অভিনয়ে তার চরিত্র যথাযথ ফুটে উঠেছে। প্রেস মালিকরূপে গিরি রূপে নিরুপম ভট্টাচার্য, চরিত্রে ভীষণভাবে মানানসই। তারা ভাঙ্গাচোরা চেহারা যা এক প্রেস কর্মীকে নির্দেশ করে, এবং সেই যে ছাপতে আসা ক্যাডারদের মুহুর্মুহু বায়নাক্কা যা তাকে সইতে হয় গিরিকে, সেই অসহায়তার অভিনয় সুস্পষ্ট। এছাড়া গৌর চরিত্রে বাপি প্রামাণিক, নিবারণ পাল চরিত্রে মলয় চক্রবর্তী, সমর চরিত্রে গোপাল পাল সকলেই নাটকের মুহুর্ত নির্মাণে যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। এবং অনেকাংশেই সফল হয়েছেন। এই দিনের নাটকে একটি বিশেষ দিক আবহ প্রক্ষেপণ করেছেন নির্বাণ ভট্টাচার্য। যিনি সপ্তম শ্রেণীতে পড়েন। নাট্য শিল্পে এই যোগদান আগামীকে রক্ষা করার দিক নির্দেশ করে।

এই নাটকের মুহুর্ত নির্মানে আরও যত্ন নেবার অবকাশ আছে। বেশ কিছু সংলাপ উচ্চারণের ত্রুটি নাটকের মুহুর্তমাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়নি। যদিও এটা খুব বেশী কিছু নয়, কিনতু এই নাটকের যে জোড়াল দিকটি আছে সেটা সব দিক সামঞ্জস্যপুর্ণ হলে সেই উচ্চতাকে ছুঁতে পারবে। আশা করা যায় আগামী বহু অভিনয়ের মধ্যে দিয়ে এই নাটক আরও বলিষ্ঠ হবে। নাটকের শেষে বর্তমান সরকারের কন্ঠের ব্যবহার খুব বেশী দরকার ছিল বলে মনে হয় না। কারণ নাটকটি নিজেই সেই সমসাময়িকতাকেই নির্দেশ করে। গাধার হাসিই সেই প্রতিবাদের বলিষ্ঠ স্বর। সেটাই শেষকথা।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -