নৈতিক রায়
ছবির শুরুতেই তিস্তা ব্রিজ থেকে এক অবসরপ্রাপ্ত প্রৌঢ়কে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে দেখা যায়। অনতিবিলম্বেই এক অপরিচিত ব্যক্তি তাকে রুখে দেয়। ছবির শুরুর সংলাপ ‘এতো তাড়া কিসের’ উচ্চারিত হবার সাথে একটা বড় ক্যানভাস আমাদের সামনে হাজির হয়, অর্থাৎ এই মৃত্যুর সিদ্ধান্ত নেবার জন্য এতো তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই। অপরিচিত সেই ব্যক্তির কথায় আত্মহননকারী নিজেকে সংযত করে।
সম্প্রতি ইউ টিউব চ্যানেলে রেশ ভট্টাচার্যের ‘ডার্করুম’ মুক্তি পায়। মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্যের গল্পের ওপর নির্ভর নির্মিত এই ছবির দৃশ্যপট ও তার সম্পাদনা বেশ চোখে পড়ার মতো। বাংলা নাটক ডট ইন এর ইউ টিউব চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে পরিচালক রেশ ভট্টাচার্য তুলে ধরেছেন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য। ক্রমে সমাজ বাস্তবতার নানান টানাপড়েনে অধিকাংশ মানুষ এই অসুস্থতার শিকার। তাই পরিচালক এই গল্প বেছে নেন এবং নির্মান করেন। রেশ এই প্রজন্মের কনিষ্ঠ পরিচালকদের একজন। তার ভাবনা ও মানসিকতা অবশ্যই বাংলা চলচ্চিত্র নির্মানের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত বহন করে।
দুই ব্যক্তির গল্পের মধ্য দিয়ে ছবি এগিয়ে চলে ধীরে ধীরে, জানা যাত এই প্রৌঢ়ের একাকীত্বের কারণ। আগন্তুক ব্যক্তি যেন তার জীবনে চাতক হয়ে এসে তাকে সেই শুস্ক অন্তরে বিন্দু বিন্দু জলদান করে। ফিরে দেখা জীবনের নানা কীর্তির মধ্যে থেকে তার ফোটোগ্রাফির জীবন ও নানা কথা।
ছবির বয়ানে আগন্তুককে নিয়ে এক টেনশন তৈরি করা হয়েছে, যার কৃতিত্ব ফোটোগ্রাফির। এই ছবির সিনেমাটোগ্রাফার রুবেল সরকারের। টুকরো টুকরো ছবির মুহুর্তকথায় অসাধারণ সব ফ্রেমকে এক সাথে মিলিয়ে যে গল্প উপস্থাপিত হয়েছে, তা আগামী প্রজন্ম হিসেবে তাদের থেকে আশার আলো এসেই যায়।
বিষয় ও উপস্থাপনা বেশ ব্যালান্সড। গত চারদিনে ২.৪কে ভিউ খুব খারাপ নয়, নতুন কাজ হিসেবে। এই গল্পের গল্পকার মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য এই বিষয়কে নিয়ে গল্প রচনাকে সামাজিক দায়বদ্ধতা মনে করেন।
এই ছবির মুখ্য চরিত্র চিত্রায়ণ করেছে জলাপাইগুড়ির থিয়েটারে অভিনেতা অভ্র সরকার। আর অপর এক চরিত্রে ছিলেন জিষ্ণু সেন। অভ্র সরকারের অভিনয় দক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে না। কারণ তার বাচন ও সংলাপ প্রক্ষেপণ ভীষণ গভীর থেকে উচ্চারিত হয়েছে। সেরিব্রাল এক্টিং এর ব্যবহার বেশ ভালো করে প্রয়োগ করেছেন। অনেকটাই সফল হয়েছেন। তবে অপর পক্ষের চরিত্রের সংলাপ উচ্চারণ ও প্রয়োগের দিকে আর একটু যত্নবান হবার দরকার ছিল। সিনেমায় থিয়েট্রিক ভয়েসটা বিষয় ও নির্মানের সাথে অনেক জায়গায় সাবলীল লাগেনি।
তবু এই কাজ প্রথম প্রয়াস হিসেবে টীম দ্যা সিনেম্যান ক্রিয়েটিভ স্টুডিও -র একটি ভালো এবং সৎ প্রচেষ্টা বলা যেতে পারে।