মোশারফ করিম ও তানজিন তিশার জুটিতে অনবদ্য প্রেমগাথা ‘শিউলি ফুল”

- Advertisement -

নৈতিক রায়   

‘ভ্যালেন্টাইন নাটক ২০২৪’ শীর্ষক বাংলা নাটক ‘শিউলি ফুল’ রোমান্টিকতার চূড়ান্ত চিত্রায়ন। একসময়ের বাংলা ঘরে ভালোবাসার এক মধুর প্রেক্ষাপট। যেন যে খুব সহজে তিন বা চার দশক আগে নিয়ে ফেলে। অথচ বর্তমানের প্রজন্মের কাছে হয়ে ওঠে একটি সরল প্রেমের গল্প। বাস্তব জীবনের ঘটেচলা নিত্য নৈমিত্তিক বাজারি সভ্যতাকে উপেক্ষা করে দীপ্ত টিভি টেলিভিশন চ্যানেলের প্রযোজনা শিউলি ফুল। যার নির্দেশনায় এল আর সোহেল। নাম ভূমিকায় এই মুহুর্তে বাংলাদেশের দুই তারকা মোশারফ করিম ও তানজিন তিশা।

প্রায় ৪২ মিনিটের এই বাংলা নাটক প্রিমিয়ার হয় দীপ্ত টিভি নিজস্ব ইউ টিউব চ্যানেল ‘দীপ্ত নাটক’ চ্যানেলে গর ১৫ ফেব্রুয়ারি। মোশারফ করিমের সাথে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করলেন অভিনেত্রী তানজিন তিশা। তাঁর অভিব্যক্তি আর ব্যক্তিত্ব স্ক্রিনজুড়ে দখল করে থাকে।

একটি টিভি চ্যানেলের একটি প্রোগামের নাম ‘একজন মানুষের অন্তর্গত গল্পের অনুসন্ধান’। এননই একটি প্রোগ্রামের কাজে নেমে একটি ছেলে মেয়ে রিসার্চ করে বের করলেন এমন এক মানুষের গল্প, যিনি ২৬ বছর ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে থাকার পর, একদিন হঠাতই তার স্মৃতি শক্তি ফিরে আসে। আর সেই সন্ধিক্ষণে সেই দুই টিভি প্রোগ্রামার ছুটে যায় সেই ব্যক্তির কাছে। যে ব্যক্তি তাদের কাছে তুলে ধরে তার ২৬ বছরের ফেলে আসা ঢাকা শহরের ইতিহাস। উন্মুক্ত করে তার জীবনের সেই মধুর মুহুর্ত কথা।

নাটকটি দেখতে ক্লিক করুন

এই মানুষের চরিত্রেই অভিনয় করেন মোশারফ করিম। একজন মানসিক রোগী থেকে আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসে প্রায় অসুস্থ অবস্থা তার বাচন পরিস্কার করে দেয় তার মনে জমে থাকা ভয়াবহ বেদনার কথা। ২৬ বছর আগে সে তিরিশ বছরের যুবক। সেই যুবক অবস্থানের স্মৃতি ফিরে আসা মানে সেখানে কোনো খামতি থাকার কথা নয়, কারণ এই মানুষের জীবনের ২৬ বছরের কোনো স্মৃতিই মস্তিস্কে নেই, সে বর্তমানে ৫৬ বছরের একজন মানুষ, কিন্তু স্মৃতি ও মননে সে সেই ৩০ বছরের যুবকই আছেন।    

ফ্ল্যাসব্যাকের সাহায্যে গল্পের পাতা উল্টে উল্টে পিছোতে থাকে, আর যত পিছতে থাকে তত গল্পের গভীরতা বাধন তীব্র হতে থাকে। কোনোভাবেই এই কাহিনীর চিত্রায়ণকে কখনও অবাস্তব মনে হয়নি। মোশারফ করিমের, ধীরে ধীরে অসাধারণ কায়দায় স্মৃতিমন্থন যেন আমাদের তার জীবনের ছন্দে প্রবেশ করিয়েছে একটু একটু করে। অতীতের তানজিন তিশা যিনি এক উচ্ছলতার ও সৌন্দর্যতার প্রতীক, সেই ভালোবাসার দুটি মানুষ যখন একে অপরের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যায়, তখন ট্রাজেডিকেই ধরে নিতে বাধ্য থাকে দর্শক। চেনা গল্পের  মোড়কে এক ধনী লোকের বাবা তার সুন্দরী তনয়ার বিয়ে যে অপেক্ষাকৃত কম স্ট্যাটাসের পাত্রের কাছে দেবেন না, দিতে পারেন না এরকমটা ধরে নিয়েই গল্প যেন এগিয়ে চলে।

এই কাহিনীর একটি বিশেষ দিক, টিনএজ প্রেমের চিঠি আদান প্রদান। আজ এই ডিজিটাল সংস্কৃতিতে টিন এজারদের কাছে যা বোকা বোকা একটা ব্যপার। দুজন প্রেমে পড়া মানুষের অন্তর্গত পাগলামো, দুজন দুজনকে চোখে হারাবার আশঙ্কা যেন দুটি প্রেমিক মানুষকে আচ্ছন্ন করে রাখে, এই সময় মানসিক অবস্থান কি হওয়া দরকার তা অসম্ভব দক্ষতা সাথে ফুটিয়ে তুলেছেন মোশারফ-তানজিন জুটি। যদিও এই নাটকের স্ক্রিপ্ট খুব ভালো। সংলাপ খুব  পরিমিত। এবং অবশ্যই এডিটিং। বেশ কিছু মুহুর্তকে ক্যামেরা বন্দী করা হয়েছে বেশ দক্ষতার সাথে।   

নাটকের শুরুতে এক ফোটা বৃষ্টি তানজিন তিশার গাল ছুঁয়ে যখন গড়াতে থাকে, তখন অভিনেত্রীর রি-একশন, দর্শক মনে বিশেষ ভালো লাগার জন্ম দেয়। এবার বৃষ্টি নেমে আসে। সেই বৃষ্টিতে ভেজা নিয়েই পরবর্তীতে গল্পকে বোনা হয়েছে।

রুমমেট আলাউলের সাথে সে থাকতো ঢাকার একটি মেসে। এই আলাউলের মাধ্যমেই চিঠি আদাপ্রদান হত সেই যুগলের। অর্থাৎ তার বর্ণরা ১৯৯৬ সালের প্রেক্ষাপট যেখানে ডিজিটাল সংস্কৃতির ঘটেনি। আর তাই আজ দাঁড়িয়ে একস্ময় নায়ক বলেনও তিনি এই মোবাইল, মেট্রো দেখে বিস্মিত হন। আজ দুই প্রেমিক প্রেমিকার কাছে এই যোগাযোগ যা সহজ করে দিয়েছে। দূরকে নিকট করেছে। কারণ এই গল্পের মোড় একটি ভুল বোঝাবুঝির অপরেই দাঁড়িয়ে আছে।

একসময় দুইজনের কাছে একটি প্রশ্ন উঠে আসে, প্রেমের জন্য জীবন নাকি জীবনের জন্য প্রেম? এই জিজ্ঞাসার দিক নির্ণয় করতে করতে অবসন্ন নায়ক ধীরে ধীরে প্রেমিকা শিউলিকে হারাবার আশঙ্কায় বাস করতে শুরু করে। কলেজ করিডোরে হাটতে হাটতে প্রেমের সাময়িক ছাড়াছাড়ি আজ সেই ভাবে মনে দোলা দেয় না। এক সময় না দেখা হওয়া, খবর নিয়মিত না পাওয়া সবই স্বাভাবিক প্রেমের লক্ষণ ছিল।

আর এই স্মৃতি মেদুরতাই যেন আজ একটা গোটা সমাজের কথা মনে করিয়ে দেয় আমাদের মতো মধ্যবয়সী মানুষদের। আজকের ভ্যালেন্টাইন কপোত কপোতি কি এই ভাবে অপেক্ষার যন্ত্রণা ভোগ করে? তাদের কাছে ডিজিটাল মাধ্যম যখইন খুশী কাছে এনে দেয়।

আর এই অপেক্ষাই এই নাটকের অন্যতম স্তম্ভ। নাটকের শেষ পরিণতিতে যেখানে মানুষ ধরে নিয়ে নিয়েছে শিউলি মুন্তাসিরের জীবন থেকে চলেই গেছে। কারণ তার বাবা তাকে পুলিস দিয়ে ধরিয়েছে, অপমানিত নায়পক বৃষ্টিতে ভিজেম জেলে বন্দী থেকে সেখানেই জ্বর ও তার অব্যবহিত পড়েই তার বিস্মরণ।  

২৬ বছর পরে ঘুম থেকে উঠে কি নায়ক ফিরে পাবে তার প্রেমিকাকে এই প্রশ্ন থেকে গিয়েছে ছবির লাস্ট ফ্রেম পর্যন্ত। এরপর অপেক্ষার সেই প্রেমিকা তারও যৌবনের অতিক্রান্ত ২৬ টা বছরের নির্ঘুম যাপন তাকে এনে ফেলে নায়কের কাছে। সেই সূত্র করিয়েছে টিভি প্রোগ্রাম।

এই নাটক সম্পর্কে নেটিজানদের ভীষণ পজিটিভ রি-একশন। সকলেই একবাক্যে দুজনের অনবদ্য অভিনয়ের কথা মেনে নিচ্ছেন। তাই যে গল্পের দিক ট্রাজেডি থেকে ঘুরে মিলনান্তক বা কমেডির দিকে দিক পরিবর্তন করে তার রহস্য জানতে এই নাটক সকলেরই দেখা উচিত।   

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -