শ্রুতি নাটক – কেন অন্ধকার

- Advertisement -

অনুপ চক্রবর্তী

(মধ্যরজনী। প্রবল কলিংবেলের আওয়াজ।)

নেপথ্যে কাতর চিৎকার- দরজা খুলুন। দরজা খুলুন। প্লিজ। প্লিজ। দরজা খুলুন। আমার ভীষণ বিপদ। ভীষণ বিপদ আমার। আমাকে একটু শেল্টার দিন। প্লিজ।প্লিজ। আমাকে বাঁচান। আমাকে বাঁচান।

নীলিমা।। (ঘুম ভেঙে) স্বরূপ! স্বরূপ!এই স্বরূপ! স্বরূপ শুনছ? ওঠো ওঠো। শুনতে পাচ্ছো?

স্বরূপ।। (ধড়ফড় করে ঘুম থেকে ওঠে) অ্যাঁ। কী হল? কী হল?

(নেপথ্যে একইরকম কাতর চিৎকার ও আবেদন চলতে থাকে)  

স্বরূপ।। হ্যাঁ।শুনছি তো। কি ব্যাপার বলো তো নীলিমা! কে ডাকছে এত রাতে এভাবে!

নীলিমা।। যেই ডাকুক। বোঝাই যাচ্ছে তার ভীষণ বিপদ।

স্বরূপ।। হ্যাঁ। তাইতো মনে হচ্ছে।

নীলিমা।। দরজা খুলে দাও ।

স্বরূপ।। কী বলছ তুমি?

নীলিমা।। হ্যাঁ। লোকটা বাঁচতে চাইছে। কেউ মনে হয় ওকে মারবে বলে তাড়া করেছে। খুলে দাও দরজাটা।

স্বরূপ।। কিন্তু যদি কোন খারাপ লোক হয়? গুন্ডা ডাকাত ক্রিমিনাল হয়? একটা মিথ্যে অজুহাতে হয়ত ঢুকতে চাইছে। তাহলে তো আমরা নিজেরাই বিপদে পড়ে যাব। আমাদের ডাকাতি করবে। মেরে ফেলবে।

নেপথ্যে থেকে তীব্র কাতর আবেদন শোনা যায়-

না না। আমি গুন্ডা ডাকাত ক্রিমিনাল নয়। বরং ক্রিমিনালরা এই হাউসিং কমপ্লেক্সে ঢুকে পড়ে আমাকে খুঁজছে আমাকে মারবে বলে। আমাকে শেল্টার দিন। প্লিজ। ওরা আমাকে দেখতে পেলেই অ্যাটাক করবে। আমি ভোর হলেই চলে যাব। আপনাদের ফ্ল্যাট থেকে পুলিশকে ফোন করে হেল্প চাইবো। সাহায্য চাইবো। ততক্ষণ আমাকে শেল্টার দিন।

(ভয়ংকরভাবে ভয় পেয়ে লোকটা কেঁদে ফেলে)

নীলিমা।। স্বরূপ, দরজা খুলে দাও। যত ঝুঁকিই থাকুক, আমাদের উচিত লোকটাকে বাঁচানো। ওর আবেদনটা বিশ্বাস না করে ওকে এভাবে মরে যেতে দিলে সেটা আমাদের ক্রাইম হবে। আমরা সেটা করতে পারি না। তাহলে কীসের আদর্শ নিয়ে আমরা সমাজসেবা করি? যদি মানুষকে বাঁচাতে না পারি? বাঁচাতে গিয়ে যদি মরতে হয় মরব।

স্বরূপ।। ঠিক আছে। বলছ যখন খুলে দিচ্ছি দরজা।তারপর কী হবে জানি না।

(দরজা খোলার আওয়াজ)

(একটা ছেলে ঢুকেই দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজা বন্ধের আওয়াজ)

আগন্তুক।। রিভরভারটা দেখছেন তো। ছখানা গুলি ভরা আছে। এবার ঘরে বৌদির যা কিছু গয়না আছে এখনি বার করে দিন। না হলে কুকুরের মতো গুলি করে মারব। কুইক। কুইক। এখনি। এখনি।

স্বরূপ।। তোমাকে বলেছিলাম নীলিমা। এবার বুঝলে তো। পরোপকার করার হাতে গরম ফল।

আগন্তুক।। কি হলো? ভাট বকছেন কেন? দেরি করছেন কেন? দশ গুনবো। তার মধ্যে যদি গয়নাগুলো বার না করেন গুলি করে দেবো।

নীলিমা।। কী করে জানলে বাড়িতে গয়না রাখি? আমার গয়না ব্যাংকের ভল্টে আছে।

আগন্তুক।। বাজে কথা। আমরা পাকা খবর রাখি। সব খবর রাখি।  

নীলিম।। কিভাবে খবর রাখো?

আগন্তুক।। বলবো না।

নীলিমা।। বুঝেছি। কাজের লোকের মাধ্যমে খবর পেয়েছ।

স্বরূপ।। অসতর্কভাবে ওদের সামনে কিছু আমরা আলোচনা করেছি। সেটা শুনেছে। সব ঘরের শত্রু বিভীষণ নীলিমা। তোমার আদর্শের আরেকটা হাতে গরম ফল।

আগন্তুক।। আপনারা দেরি করছেন কিন্তু। এবার কিন্তু সত্যি সত্যি গুলি চালিয়ে দেব। দশ গুনছি। ওয়ান টু থ্রি ফোর –

(হঠাৎ আগন্তুকটা যন্ত্রণায় চিৎকার করে ওঠে। ভয়ংকর যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে।)

নীলিমা।। আরে কি হলো ছেলেটার!

স্বরূপ।। তাইতো!

আগন্তুক।। আমার অ্যাপেন্ডিসাইটিস আছে…. ভীষণ যন্ত্রণা করছে…… আঃ আঃ আঃ…..ভীষণ যন্ত্রণা করছে…..

(পাশের ঘর থেকে স্বরূপের বৃদ্ধ বাবা বেরিয়ে আসে)

বাবা।। কী হলো স্বরূপ! কী হলো নীলিমা! চেঁচামেচি শুনে ঘুম ভেঙে গেল। এই ছেলেটা কে? এত রাতে এখানে এসে কাতরাচ্ছে কেন?

স্বরূপ।। বাবা এই ক্রিমিনালটা বিপদগ্রস্ত সেজে কাকুতি মিনতি করে ঢুকে তারপর রিভলভার দেখিয়ে নীলিমার গয়না চাইছিল।

বাবা।। সে কি!

নীলিমা।। তারপর দশ গুনতে আরম্ভ করেছিল। চার পর্যন্ত গোনার পরেই অ্যাপেন্ডিসাইটিসের যন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়ে কাতরাচ্ছে।

আগন্তুক।। আঃ আঃ আঃ মরে গেলাম…. মরে গেলাম… ওঃ ওঃ ওঃ ওঃ…

বাবা।। একে এখনই একটা ফোর্টউইন ইঞ্জেকশন দিতে হবে। বৌমা আমার মেডিকেলবক্সটা এখনি নিয়ে এসো।

নীলিমা।। ওকে ইঞ্জেকশন দেবেন?

(আগন্তুক যন্ত্রনায় আর্তনাদ করেই চলে)

বাবা।। হ্যাঁ। নাহলে অজ্ঞান হয়ে যাবে। যাও দেরি করো না। ভাবার কিছু নেই। আমি বলছি বক্সটা নিয়ে এসো।

স্বরূপ।। বাবা লোকটা আমাদের গুলি করে মারতে যাচ্ছিল। তুমি এখন একে চিকিৎসা করবে!!!

বাবা।। গুলি করে মারতে যাচ্ছিল। মারতে তো পারেনি। আমি একজন ডাক্তার হয়ে একটা মানুষকে এইভাবে তো যন্ত্রণায় ছটফট করতে দিতে পারি না। আগে ওকে সুস্থ করি। তারপর পুলিশ ডেকে ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেব। বৌমা, এনেছ বক্সটা? গুড। এবার একটা সিরিঞ্জ আর একটা ফোর্টউইন ইঞ্জেকশন বের করো।

নীলিমা।। হ্যাঁ। এই যে বাবা।

বাবা।। গুড। আমাকে দাও।

বাবা।। এই ছেলে,রিভলভারটা দাও। বৌমা, আর্মসটা তুলে রাখো পুলিশকে দিয়ে দেবে। এই ছেলে, বেশি ছটফট কোরো না। সহ্য করো। ইনজেকশনটা দিতে দাও। ঠিক আছে। ইঞ্জেকশনটা দিলাম। এখনি পেন কমে যাবে।  

আগন্তুক।। (যন্ত্রণা কমতে থাকে। হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলে।) আপনারা বিশ্বাস করুন। আমার বাবাকে এখনি পেসমেকার লাগাতে হবে। নাহলে বাবা মরে যাবে। কোন টাকা নেই আমাদের। আমরা খুব গরীব। বস্তিতে থাকি। লকডাউনের সময় বাবার কারখানার কাজটা চলে গেছে। চেষ্টা করেও আমরা কোন টাকা জোগাড় করতে পারিনি। আমি বড় ছেলে। বেকার। ভাইবোনরা স্কুলে পড়ে। মরিয়া হয়ে একটা ক্রিমিনালের কাছ থেকে এই পিস্তলটা জোগাড় করেছি তাকে মদ খাইয়ে। তার কাছ থেকেই খবর পেয়েছি এই বৌদির বাড়িতে গয়না আছে। সেই গয়না লুট করতে এসেছিলাম বাবার জন্যে পেসমেকার কিনব বলে। আমাকে পুলিশে দিন। কিন্তু ডাক্তারবাবু আমার বাবাকে বাঁচান। আমি যে ভীষণ ভীষণ ভালোবাসি আমার বাবাকে। আপনি আমার বাবার মতো। আমার বাবাকে বাঁচান। আমার বাবাকে বাঁচান। ( হাউ হাউ করে কাঁদতে থাকে )

সমাপ্ত

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -