Tuesday, June 10, 2025
Tuesday, June 10, 2025
Homeখবরসুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার আয়োজিত নাট্যমেলা ২০২৫

সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার আয়োজিত নাট্যমেলা ২০২৫

নিজস্ব প্রতিনিধি

সম্প্রতি “সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার” আয়োজিত নাট্যমেলা ২০২৫ (চতুর্থ বর্ষ) আয়োজিত হয়ে গেল, যার স্মরণে – মননে ছিলেন সলিল চৌধুরী ও মনোজ মিত্র। 

প্রথম পর্যায় ও দ্বিতীয় পর্যায়ে বৃহৎ আকারে দুটি পর্যায়ে বিরাট উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং গুণীজন, দর্শক সমাগম এর মধ্যে দিয়ে কলকাতার রাসবিহারী কালীঘাটে মুক্তাঙ্গন রঙ্গালয়ের মঞ্চে খুব সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠিত হল এই নাট্যমেলা। দারুন এক পেশাদারিত্ব চোখে পড়ল সমগ্র উৎসবকে ঘিরে। এক অন্তরঙ্গ উৎসবের পরিবেশ এবং মেজাজ তৈরি হয়েছিল এই নাট্য উৎসবে। এই বছর তারা তাদের সম্পূর্ণ নাট্যমেলা সলিল চৌধুরী এবং মনোজ মিত্রের স্মরণে উৎসর্গিত করেছে। আবির্ভাবের আয়োজন এবং প্রতিটি সদস্যের আন্তরিকতা, ভালোবাসা, আতিথেয়তা ও আপ্যায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো।

নাট্যমেলার প্রথমদিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও বিশিষ্ট অতিথির আসন অলংকৃত করে উপস্থিত ছিলেন এবং দীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসবের শুভ সূচনা করলেন শ্রী অভিজিৎ চ্যাটার্জী (E.Z.C.C ডকুমেন্টেশন এন্ড এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার), শ্রী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় (নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্যবিশ্লেষক), ড: বিশাল ভট্টাচার্য মহাশয় (মঞ্চ, চলচ্চিত্র এবং টিভি জগতের অভিনেতা, গবেষক,নাট্য নির্দেশক এবং সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার এর কর্ণধার ও সম্পাদক), শ্রী সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় (নাট্যকার), শ্রী বিজয় কুমার দাস (নাট্যবিশ্লেষক ও নাট্যব্যক্তিত্ব), শ্রী মলয় ঘোষ (নাট্যব্যক্তিত্ব ও ইলোরা পত্রিকা সম্পাদক), শ্রী সুদীপ্ত সরকার (নাট্যকার ও নির্দেশক), শ্রী চন্দন দাস (শোভনিক নাট্য সংস্থা নির্দেশক ও কর্ণধার) প্রমূখ। এই সম্পূর্ণ নাট্যমেলার সঞ্চালনা করেন শ্রীমতি দীপান্বিতা দত্ত রায় এবং শ্রীমতি মানসী ঘোষ। সমস্ত গুণীজন এবং নাট্য দর্শকবৃন্দর উপস্থিতিতে মনোজ মিত্র ও সলিল চৌধুরী মহাশয়ের প্রতিকৃতিতে পুষ্প প্রদান এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ দ্বারা প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং আবির্ভাব থিয়েটার কে নিয়ে তৈরি Theme Song “চলো নতুন কিছু করে যাই……” এর উন্মোচনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন হয়। কৃতি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুনি বিশেষ স্মারক সম্মান দেওয়া হয় শ্রী বাবলু সরকার (আলোক শিল্পী), শ্রী সন্দীপ ভট্টাচার্য (গীতিকার), শ্রী অরিত্রিক ঘোষাল (সুরকার ও গায়ক) এবং উদ্বোধক ও বিশিষ্ট অতিথিদের স্মারক ও উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা জ্ঞাপন করেন আবির্ভাব থিয়েটার এর কর্ণধার এবং নির্দেশক ড: বিশাল ভট্টাচার্য্য মহাশয়। উদ্বোধক ও বিশিষ্ট অতিথিরা সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করেন এবং সংস্থার নাট্যচর্চার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। অতিথিরা সমগ্র ব্যবস্থাপনার ভূয়শী প্রশংসা করেন। 

এই সাতদিন ব্যাপী দুটি বৃহৎ পর্যায়ের নাট্যমেলায় মোট একুশটি নাটক মঞ্চস্থ হয় তার মধ্যে নয়টি একাঙ্ক নাটক,পাঁচটি অণু নাটক, দুটি শ্রুতি দৃশ্যায়ন, পাঁচটি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের নাটক মঞ্চস্থ হয়। প্রতিটি নাট্যদলের নাটক শেষে আবির্ভাব থিয়েটার এর পক্ষ থেকে সংস্থার কর্ণধার ও নির্দেশক ড: বিশাল ভট্টাচার্য্য মহাশয় অংশগ্রহণকারী নাট্যদলের প্রতিটি নাটকের নির্দেশকদের হাতে স্মারক এবং প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত আলোকশিল্পী, আবহশিল্পী, মঞ্চ নির্মাণশিল্পী, রূপসজ্জা শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং সকল কলাকুশলীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে সম্মাননা জ্ঞাপন করেন।

নাট্যমেলার প্রথম পর্যায়ের প্রথম দিন প্রথম নাটক উলুবেড়িয়া ট্রাঙ্ক রোড থিয়েটার প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – জাবালি গোত্র, নাট্যকার ও নির্দেশক – পল্লব সরকার। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার প্রযোজিত অনু নাটক – ডাইন নাট্যকার- প্রদীপ চক্রবর্তী, সিনোগ্রাফি ও নির্দেশনা – ড: বিশাল ভট্টাচার্য। ঐদিনের তৃতীয় নাটক জোকা নাট্যসংস্থা উন্মেষ প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – সত্য ফিরে এসো, নাট্যকার- পরান বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্দেশক – সিদ্ধার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়।

নাট্যমেলার প্রথম পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন প্রথম নাটক – বেহালা কথক প্রযোজিত পূর্ণাঙ্গ নাটক – স্মৃতি বিস্মৃতির কথামালা, নাট্যকার ও নির্দেশক – মলয় সেনগুপ্ত। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক সোদপুর অনুবন্ধ নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক- আর্মানি গম্বুজের ভো, নাট্যকার ও নির্দেশক – মনোজ গুহ, ঐদিনের তৃতীয় নাটক সাদার্ন এভিনিউ চরৈবেতি প্রযোজিত অনুনাটক – দ্বন্দ্ব, নাট্যকার ও নির্দেশক – শান্তপ্রিয় মুখোপাধ্যায়।

নাট্যমেলার প্রথম পর্যায়ের তৃতীয় দিন প্রথম নাটক – মন্ডলাই সর্বজনীন নাট্যসংস্থা প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – টাপুর টুপুর, নাট্যকার – মনোজ মিত্র, নির্দেশক – শুভম মুখার্জী। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক ভদ্রকালী থিয়েটার প্রসেনিয়াম প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – উত্তরাধিকার, নাট্যকার – দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, নির্দেশক – অম্বর চম্পটী, ঐদিনের তৃতীয় নাটক ঐকতান দক্ষিণেশ্বর প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – রাজদেউল, নাট্যকার – প্রদীপ মৌলিক, নির্দেশক – পূণ্যব্রত মুখার্জি।

নাট্যমেলার দ্বিতীয় পর্যায়ের প্রথম দিন বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শ্রী সন্তু সাধুখাঁ (নাট্যকর্মী), শ্রীমতি মৃত্তিকা গাঙ্গুলী (নাট্যকর্মী)। প্রথম নাটক – সোনারপুর বন্ধু স্বজন থিয়েটার সেন্টার প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – হারানো প্রাপ্তি, নাট্যকার – মনোজ মিত্র, নির্দেশক – মানস দে চৌধুরী। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক সোনারপুর চেনা অচেনা প্রযোজিত পূর্ণাঙ্গ নাটক – জগাই দাদা, নাট্যকার – সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়, নির্দেশক – প্রবীর নাথ, ঐদিনের তৃতীয় নাটক The বাক Show প্রযোজিত অনু নাটক (শ্রুতি দৃশ্যায়ন) – রাজার মুখোশ, গ্রন্থনা ও বাচিক নির্দেশনা – সুপর্বা দাস, দৃশ্য নির্মাণ- অর্পিতা সরকার।

নাট্যমেলার দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দিন প্রথম নাটক – চন্দননগর সংবিত্তি প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – আগুনের দিনলিপি, নাট্যকার – মৈনাক সেনগুপ্ত, নির্দেশক – সুজাতা পাল। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক সুভাষগ্রাম মিলনচক্র নাট্য মঞ্জরী প্রযোজিত পূর্ণাঙ্গ নাটক – বিষাক্ত কীট, নাট্যকার – ভোলানাথ কর্মকার, নির্দেশক – রঞ্জন রায় চৌধুরী, ঐদিনের তৃতীয় নাটক মুম্বাই দিশারী ফাউন্ডেশন প্রযোজিত অনু নাটক (শ্রুতি দৃশ্যায়ন) – অনভিজ্ঞ ভূত, নাট্যকার – নিরুপ মিত্র, নির্দেশক – দীপায়ন গোস্বামী।

নাট্যমেলার দ্বিতীয় পর্যায়ের তৃতীয় দিন প্রথম নাটক – অল্টার ইগো নাট্যসংস্থা প্রযোজিত পূর্ণাঙ্গ নাটক – গুলশন, নাট্যকার – শ্যামাকান্ত দাস, নির্দেশক – সন্ধিতা চ্যাটার্জি। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক বাবুপাড়া আত্মজ নাট্যসংস্থা প্রযোজিত অনু নাটক – অরুণোদয়ের পথে, নাট্যকার – সলিল চৌধুরী, নির্দেশক – তাপস দাস, ঐদিনের তৃতীয় নাটক নর্থ পঞ্চমুখ নাট্যসংস্থা প্রযোজিত একাঙ্ক নাটক – বর্ণপরিচয় এখনও, নাট্যকার – নিখিল চট্টোপাধ্যায়, নির্দেশক – দেবাশিস বসু।

নাট্যমেলার দ্বিতীয় পর্যায়ের চতুর্থ দিন প্রথম নাটক – বালি প্রতিধ্বনি নাট্যসংস্থা প্রযোজিত অনু নাটক – তারিণী মাঝি, কাহিনী – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, নাট্যরূপ ও নির্দেশনা – অমৃতা মুখার্জী। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক রং ও মুখ নাট্যসংস্থা প্রযোজিত পূর্ণাঙ্গ নাটক – বিনষ্টি, নাট্যকার ও নির্দেশক – শঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐদিনের তৃতীয় নাটক বেহালা থার্ডবেল নাট্যসংস্থা প্রযোজিত অনু নাটক – সোয়াচান পক্ষীর বাসা, নাট্যকার – প্রবীর গুহ , নির্দেশক – শান্তনু ভট্টাচার্য।

 অনু, শ্রুতি দৃশ্যায়ন,একাঙ্ক, পূর্ণাঙ্গ এই সমস্ত বিভাগের নাটক এই নাট্যমেলায় দেখা যায়, মেলা বা উৎসবের সমস্ত রকম উপাদান এই নাট্যমেলায় বিদ্যমান ছিল।এক কথায় এই নাট্যমেলার মধ্যে দিয়ে মেলার এক অসামান্য অসাধারণ বাতাবরণ তৈরি হয়েছিল যা ভোলার নয়।সবার সাহায্য সহযোগিতা ও একাত্মতা নাট্যমেলাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular