আশীষ গোস্বামী
“সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার” আয়োজিত নাট্যমেলা ২০২৪। মাত্র চারবছর বয়স “সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার” এর। এই স্বল্প সময়ের একটি নাট্যসংস্থা অমন বর্ণাঢ্য এবং বৈচিত্র্যময় তিন বছরে তিনটি নাট্য উৎসবের আয়োজন করে বিস্ময় এবং শ্রদ্ধা জাগালো বাংলার নাট্যমোদী দর্শকের মধ্যে।
২০ থেকে ২১ এপ্রিল ২০২৪ (শনি-রবিবার) বিরাট উৎসাহ-উদ্দীপনা এবং গুণীজন, দর্শক সমাগম এর মধ্যে দিয়ে কলকাতা মিনার্ভা থিয়েটারের মঞ্চে খুব সুন্দর ভাবে অনুষ্ঠিত হল এই নাট্যমেলা. দারুন এক পেশাদারিত্ব চোখে পড়ল সমগ্র উৎসবকে ঘিরে. এক অন্তরঙ্গ উৎসবের পরিবেশ এবং মেজাজ তৈরি হয়েছিল এই নাট্য উৎসবে. তাদের এই বছরের নাট্যমেলার থিম নাট্য জগতে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সাথে যুক্ত নেপথ্য শিল্পীদেরকে সামনের সারিতে নিয়ে আসা এবং সম্মাননা জ্ঞাপন. আবির্ভাবের আয়োজন এবং প্রতিটি সদস্যের আন্তরিকতা, ভালোবাসা, ও আপ্যায়ন ছিল চোখে পড়ার মতো।
নাট্যমেলার প্রথমদিন শনিবার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ও বিশিষ্ট প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করে উপস্থিত ছিলেন এবং দীপ প্রজ্জ্বলন করে উৎসবের শুভ সূচনা করলেন শ্রী রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায় মহাশয় (নাট্যব্যক্তিত্ব ও নাট্য বিশ্লেষক), শ্রী বিশাল ভট্টাচার্য মহাশয় (মঞ্চ, চলচ্চিত্র এবং টিভি জগতের অভিনেতা, গবেষক, সমাজসেবক, নাট্য নির্দেশক এবং সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার এর কর্ণধার ও সম্পাদক), শ্রী বাবলু সরকার মহাশয় (আলোক শিল্পী), শ্রী তমাল মুখোপাধ্যায় মহাশয় (কলকাতা থিয়েটার গাইড সম্পাদক), শ্রীমতি মৃত্তিকা গাঙ্গুলী মহাশয়া (নাট্য বিশ্লেষক), শ্রী সব্যসাচী পাল মহাশয় (আবহ শিল্পী). উদ্বোধক ও বিশিষ্ট প্রধান অতিথিরা সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার এর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এবং দীর্ঘ জীবন কামনা করেন এবং সংস্থার নাট্যচর্চার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন. অতিথিরা সমগ্র ব্যবস্থাপনার ভূয়শী প্রশংসা করেন. তীব্র তাপদাহের কারণে বীরভূম সিউড়ি আসর নাট্যম-এর নির্দেশক এবং বিভিন্ন নাট্যপত্র পত্রিকার লেখক ও নাট্য বিশ্লেষক শ্রী বিজয় কুমার দাস মহাশয় অনুষ্ঠানে প্রধান বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকতে না পারলেও তার শুভেচ্ছা বার্তা এবং বক্তব্য অনলাইন মারফত পাঠান.উদ্বোধক ও বিশিষ্ট প্রধান অতিথিদের স্মারক স্বরূপ হাতে আঁকা ছবি এবং উত্তরীয় দিয়ে সম্মাননা জ্ঞাপন করেন আবির্ভাব থিয়েটার-এর প্রানদীপ শ্রী বিশাল ভট্টাচার্য্য মহাশয়।
এই দুদিন ব্যাপী নাট্যমেলায় মোট পাঁচটি নাটক মঞ্চস্থ হয় তার মধ্যে চারটি একাঙ্ক নাটক এবং একটি অণু নাটক মঞ্চস্থ হয়. প্রতিটি নাট্যদলের নাটক শেষে আবির্ভাব থিয়েটার এর পক্ষ থেকে সংস্থার কর্ণধার ও নির্দেশক শ্রী বিশাল ভট্টাচার্য্য মহাশয় অংশগ্রহণকারী নাট্যদলের প্রতিটি নাটকের নির্দেশকদের হাতে স্মারক এবং প্রযোজনার সঙ্গে যুক্ত আলোকশিল্পী, আবহশিল্পী, মঞ্চ নির্মাণশিল্পী, রূপসজ্জা শিল্পী, অভিনেতা, অভিনেত্রী এবং সকল কলাকুশলীদের হাতে সার্টিফিকেট তুলে দিয়ে সম্মাননা জ্ঞাপন করেন.
আয়োজক সংস্থা “সুভাষগ্রাম আবির্ভাব থিয়েটার” এইদিন উদ্বোধনী নাট্যাভিনয় করে নাট্যকার- প্রদীপ চক্রবর্তী স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক “কালবৈশাখী” যার সিনোগ্রাফি ও নির্দেশনা – বিশাল ভট্টাচার্য। কালবৈশাখীর অন্তর ঝড়ে মুক্ত হয়েছে ক্ষুদ্রতার বাঁধন। তাছাড়া ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক টালিগঞ্জ সপ্তর্ষি প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক- বসন্তবিলাসী, নাট্যকার- সাত্যকি সরকার, নির্দেশক- অভিজিৎ গুহ.
নাট্যমেলার দ্বিতীয় দিন রবিবারের প্রথম নাটক দুর্গাচক কোরক প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক ‘দাবাখেলা’ যার নাট্যকার- সুদীপ সরকার এবং নির্দেশক দীপেন্দ্রনাথ দে। ঐদিনের দ্বিতীয় নাটক মন্ডলাই সার্বজনীন নাট্যসংস্থা প্রযোজিত স্বল্পদৈর্ঘ্যের নাটক ‘গন্ধজালে’ যার নাট্যকার মনোজ মিত্র, ও নির্দেশক শুভম মুখার্জি। এরপর তৃতীয় দর্শন সহজিয়া নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত অনু-নাটক ‘মূল্য অ-বোধ’ যার নাট্যকার মৌসুমী পাকড়াশি ও নির্দেশক রূপকথা সেনগুপ্ত.
সবশেষে দু-একটি অন্য কথা বলতেই হয় অনুষ্ঠান সূচিতে ঘোষিত নির্ধারিত সমস্ত নাটক দেখার জন্য তীব্র তাপদাহ থাকা সত্ত্বেও দর্শকদের ভালোবাসা এবং উপচে পড়া ভিড় ছিল. সবার সাহায্য সহযোগিতা ও একাত্মতা নাট্যমেলাকে সর্বাঙ্গীন সুন্দর করে তুলেছে।