হলদিয়া স্বপ্নদর্শীর নাটক ‘চোর চরণদাস’ যেন আমাদের সমাজের ক্ষতের কথা মনে করিয়ে দেয়

- Advertisement -

দেবা রায়

হলদিয়া স্বপ্নদর্শী তাদের নাটক ‘চোর চরণদাস’ কলকাতার তপন থিয়েটারে মিউনাস আয়োজিত ‘টানা ২৪ ঘণ্টা নাট্যোৎসবে’ মঞ্চস্থ করল। এই নাটকের নাট্যকার হলেন বাংলা নাট্যজগতের স্বনামধন্য নাট্যজন সৌমিত্র বসু। স্বপ্নময় চক্রবর্তীর গল্প অবলম্বনে রচিত এই নাটক। বেশ ভালো একটি প্রযোজনা কলকাতার দর্শকদের উপহার দিল হলদিয়া স্বপ্নদর্শী।

একজন চোরের জীবন বেত্তান্তের কথকতা এই নাট্য। চোরের বয়ানে নির্মিত নাট্য মুহুর্তগুলি যেন সমাজের ক্ষতের কথা মাঝে মাঝে মনে করিয়ে দেয়। আজ এই ডিজিটাল যুগের নানা ফিকির তার অন্দরেও ঢুকে যায়। ঘরে এই চরণদাসের অভিভাবক যেন তার বৌমা। বৌমার বয়ান আলাপে ধরা পড়ে চরণদাসের বাস্তব জ্ঞানের ত্রুটি। চোর হিসেবে সে ব্যর্থ এটা যখন প্রমান করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয় তার বৌমা, তখন চরণদাস স্বমহিমায় প্রায় নায়কের মতো বুক চিতিয়ে চুরি করে সংসার সুসারের অগ্নিপথে পা বাড়ায়। পুরোনো কায়দায় যে চুরি চলেনা, কিন্তু চোর হিসেবে চরণ নিজের যোগ্যতা সম্পর্কে যথেষ্ট দৃঢ়। তার অপারেশন অসফল হবে, এটা তার অজানা। এরকমই চুরির মহাবিদ্যায় সে বের হয়ে যা চুরি করে তা কোনো এক অর্থবল ব্যক্তির পোশাক। এমতাবস্থায় চুরি যাওয়া পোশাকের যে মালিক তাকে অপহরণের চেষ্টায় বের হয়েছে জনাদুয়েক অপহরণকারী। ধনীর পোষাকে পরিহিত সেই চোর আরেক মহাচোরের কাছে ধনী হিসেবে ধরা পড়ে। এবং খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই অজানা ব্যক্তির পরিবারের কাছে মুক্তিপণ চাওয়া হয়।

গল্পের মোড় অদ্ভুতভাবে বাঁক নেই। সেই অপরিচিত ব্যাক্তির স্ত্রী, সেই মুক্তিপণ দিতে অস্বীকার করে, শুধু তাই নয়, তারা যে তার স্বামীকে অপরহরণ করে ভুল করে সেটাই সেই মহিলা তাদের জানায়, কারণ ইতিমধ্যে সেই মহিলা জেনে গেছে তার স্বামী যে দুশ্চরিত্র সেটা জেনে গেছেন। তাই তারা তাকে অপহরণ করে ঠিকই করেছেন। ওকে মেরে ফেললেও তার স্ত্রীর কোনোও আপত্তি নেই। এদিকে মূল অপরহরণকারী মহা ফ্যাসাদে পড়েন। আবার এটাও একসময় জানা যায় যে ধৃত ব্যক্তি আসল লোক নন। তিনি সাধারণ এক চোর।

এইভাবে গল্পের মোড় একটি একটি করে বাঁক নিতে নিতে মঞ্চে এক অদ্ভুত হাস্যরসের পরিবেশ গড়ে তোলেন টীম হলদিয়া স্বপ্নদর্শী। এখানেই এই নাটকের সার্থকতা। ভীষণ সুন্দরভাবে তারা সাজিয়েছেন নাট্য প্রেক্ষাপট, আর এটা ঘটেছে সুপরিচালনার জন্যি। এই নাটকের পরিচালক রূপা সুর। এরপর এই নাটকের অভিনয়। মূল চরিত্র চরণদাস রূপ দিয়েছে দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায়। অনবদ্য তাঁর বাচন, স্বরক্ষেপণ। অভিনয় বিদ্যায় তার কোনো অতিনাটকিয়তা চোখে পড়েনি। স্বাবাবিক ছন্দে এগিয়েছেন একটু একটু করে। এরপ্র যার কথা বলতে হয়, তিনি চরণদাসের বৌমা মলিনা চরিত্রে রিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর অবশ্যই কিডন্যাপ হওয়া লোকের স্ত্রী মিসেস গোয়েঙ্কা চরিত্রে পরিচালক রূপা সুর। ভীষণ ভালো পজ সেন্স, সাবেকি ফোনালাপে তার একটা একটা ফোন ধরা আর ছাড়া, নাটকীয়তা নির্মাণে সহায়তা করেছে।

এছাড়া যারা অভিনয় দিয়ে নাটককে বুনতে সহায়তা করেছেন তারা হলেন কিডন্যাপার চরিত্রে অনিমেষ বন্দোপাধ্যায় ও সুশান্ত মাজি, গোয়েংকার ড্রাইভার চরিত্রে কৌশিক সমাদ্দার, কিডন্যাপার বস চরিত্রে সন্দীপ সমাজদার। এই নাটকের আলো, মঞ্চ ও আবহ পরিকল্পনায় দেবাশীষ চট্টোপাধ্যায়। আলোক প্রক্ষেপণে শান্তনু দাস ও কৌশিক সমাদ্দার। আবহ প্রক্ষেপণে রিয়া চট্টোপাধ্যায়। রূপ সজ্জায় সুমিতা সরকার।

নাটকটিকে ঘটনাপ্রবাহে দুভাগে ভাগ করতে, একভাগ প্রাক কিডন্যাপ, আর এক অংশ উত্তর কিডন্যাপ। প্রাক কিডন্যাপ অংশে নাটকের গতি কিছুটা কম, হতেপারে নাট্যের দৃশ্যবিন্যাসের জন্য, কিন্তু নাটকের কন্টেন্ট তাকে পড়তে দেয় নি। আর সেটার ব্যপকতা প্রকাশ পায় উত্তর কিডন্যাপ অংশে। নাটকে কিডন্যাপ করার ক্ষেত্রকে দর্শক পরিসরকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এই নাটক দর্শক ধন্য হবে এটা প্রত্যাশা করলে অত্যুক্তি হবেনা।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -