হিটলারের ফ্যাসিবাদের আয়না ‘অগ্নিগর্ভ’ ও বাংলা নাটক

- Advertisement -

সুব্রত কাঞ্জিলাল

৬০-এর দশকের শেষে, বইটা আমাদের এখানে পাওয়া যেত। আমার হাতে এসেছিল ১৯৬৮ সালে। হিটলারের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের মধ্যে বসে লেখা হয়েছিল বইটা। খুব গোপনে পান্ডুলিপি জার্মানির বাইরে এসে পৌঁছেছিল। বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন অশোক গুহ। বইটার নাম অগ্নিগর্ভ। লেখকের নাম ছিল হাইন্স লাইপম্যান (Heinz Lippman)। ওই বইটা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে আমি একটি নাটক লিখেছিলাম। আমার নাটকটা অভিনীত হয়েছিল ১৯৭০ সালের পয়লা মে। উৎপল দত্ত (Utpal Dutta) মহাশয় এই নাটকের কথা শুনে আমাকে দেখা করতে বলেছিলেন। তারপর এই বইটা সম্পর্কে ওঁনার কাছে আরও অনেক তথ্য পেয়েছিলাম। যেমন আমাকে বলেছিলেন, ওই বইটা প্রথম দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙ্গালিদের কাছে পরিচিত করেছিলেন। বইয়ের লেখকের নামটা আসলে ছদ্মনাম। প্রকৃত লেখকের  সন্ধান পাওয়া যায়নি।

কি ছিল ওই বইটাতে? হিটলারের জার্মানিতে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাওয়া জার্মান কমিউনিস্ট পার্টির কথা। হিটলারের বিরুদ্ধে সেই সময়কার সমাজতন্ত্রী ও গণতান্ত্রিক মানুষের সংগ্রামের কাহিনী। হিটলার যখন লক্ষ লক্ষ ইহুদি আর কমিউনিস্টদের ধরে নিয়ে গিয়ে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারছেন, অন্যদিকে হিটলারের পুলিশ প্রতিদিন পাড়ায় পাড়ায় ডাইনি খোজার নাম করে সরকার বিরোধী মানুষদের গুলি করে মারছে, সেই সব ইতিহাস। বইটা ইতিহাস বইয়ের মত তথ্যের ভারে নিরস নয়। রোমহর্ষ কাহিনীর মতো এক ধরনের গা ছমছমে রুদ্ধশ্বাস গল্প। আজ এই সময়, আমাদের দেশ ও রাজ্য এর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক একইসঙ্গে সামাজিক ঘটনার মধ্যে আবর্তিত হতে হতে ওই বইটার কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য বিস্ময় নিয়ে দেখতে পাচ্ছি সেদিন ৩০ এর দশকে হিটলারের জার্মানিতে যেসব ঘটনা ঘটেছিল, তার অনেক কিছু আজ পুনরাবৃত্তি দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। রকম ফের থাকলেও, মূল গত সিনারিও প্রায় একই রকম।

মনে রাখতে হবে, বুর্জোয়া সংসদীয় ব্যবস্থার মধ্যে থেকে হিটলারের ক্ষমতা দখল সম্ভব হয়েছিল। অর্থাৎ ওই লোকটা ভোটের মধ্য দিয়ে জার্মানির শাসন কেন্দ্রে এসেছিলেন। যদিও সেই ভোট ছিল এক ধরনের প্রহসন। শতকরা 80 জন ভোটারকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি। কমিউনিস্ট ও সমাজতন্ত্রীদের অধিকাংশ প্রার্থী নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে দেওয়া হয়নি। ভোটের দিন সন্ত্রাস চালিয়ে অসংখ্য ভোটার কে বাড়ির বাইরে বার হতে দেওয়া হয়নি। পুলিশ ছিল কাঠের পুতুলের মত নিশ্চল। দেশের প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি সংবাদপত্র নাৎসি পার্টির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।

জার্মান পার্লামেন্টে নাৎসি পার্টির লোকেরা আগুন লাগিয়ে প্রচার করে দিয়েছিল যে জনৈক কমিউনি কর্মী আগুন লাগিয়েছিল। কারণ কমিউনিস্টরা সংসদীয় গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। হিটলার এবং তার পার্টি জার্মান নাগরিকদের বোঝাতে পেরেছিল যে, তিনি ঈশ্বর প্রেরিত দেবদূত। জার্মানির সমস্ত রকম মিডিয়া অনবরত প্রচার করত যে, দেশের প্রধান শত্রু হলো, ইহুদি জাতি আর কমিউনিস্ট পার্টি। সুতরাং এদের দেশ থেকে তাড়াতে হবে। খতম করতে হবে। দেশের মধ্যে এদের কোন স্মারক রাখা যাবে না। শুরু হলো লাইব্রেরী আর বিভিন্ন বইয়ের দোকান থেকে বইগুলো বার করে, রাস্তার উপর স্তূপাকার করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া।

হিটলার বলতেন যাবতীয় ক্লাসিক সংগীত, সাহিত্য বিজ্ঞান বর্জন করতে হবে। কারণ ওগুলো শয়তানদের সৃষ্টি। শুরু হয়ে গেল জার্মান দর্শন সাহিত্য সংগীতের গঙ্গা যাত্রা। প্রহসনের ভোটের মধ্য দিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্রের দুর্বলতা গুলোর সুযোগ নিয়ে হিটলার জার্মানির ক্ষমতা দখল করার পর, রাষ্ট্রযন্ত্রের সমস্ত রকম নাট বল্টু গুলো এবং গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলো ধ্বংস করার কাজ। মনে রাখতে হবে, সেই সময় ৪৮ খানা সংবাদপত্রকে নিষিদ্ধ করা হয়ে ছিল। হয় হিটলারের নাম গান কর, কিংবা নরকে যাও। এই ছিল নাৎসি পার্টির স্লোগান। রেডিও এবং টেলিভিশনে সব সময় হিটলার এবং তার দলের কীর্তন গান করা হতো। ওই পার্টির নেতারা পরস্পরকে সম্ভাষণ জানাতে হইল হিটলার কথাটা উচ্চারণ করত। সমস্ত দেশ জুড়ে হিটলারের ছবি আর পার্টির পতাকা টানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সংবিধান সভা অর্থাৎ পার্লামেন্টকে একরকম অকেজো করে রাখা হয়েছিল। গায়ের জোরে সংবিধান বদলে দেওয়া হয়েছিল। সমস্ত ধরনের বিরোধী রাজনীতির দলগুলো নিষিদ্ধ হয়েছিল। বাক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে হরণ করা হয়েছিল। পুলিশ বাহিনীকে সব রকম ক্ষমতা দান করা হয়েছিল।

যে কোনদিন যে কোনো সময় পুলিশের কর্তারা যেকোনো নাগরিকের বাড়িতে ঢুকে তাণ্ডব চালাতে পারতো। সন্দেহজনক যেকোনো ব্যক্তিকে প্রকাশ্য রাস্তায় গুলি করে মারা হতো। দেখা যাচ্ছিল যে, এই ধরনের তাণ্ডবের বলি শুধুমাত্র বিরোধী মনোভাবাপন্ন মানুষেরা নয়, নাৎসি পার্টির সমর্থকদের মধ্যেও অনেকে পুলিশের তাণ্ডবে খুন হয়ে যাচ্ছিল। বিচার ব্যবস্থা সংবিধানিক গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ। সেই বিচার ব্যবস্থা কে, জার্মানির হাইকোর্ট সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে নিচের তলার সমস্ত অংশগুলোকে অকেজো করে রাখা হয়েছিল। হিটলারের দলের বিরুদ্ধে, প্রশাসনের বিরুদ্ধে, কোনরকম অভিযোগ আদালতে বিচারযোগ্য হিসেবে গ্রহণ করা হতো না। ৭০ এর দশকে প্রথম দিকে পিএলটি এ কটি নাটক মঞ্চস্থ করেছিল। ব্যারিকে ড। এই নাটকের মধ্যে হিটলারের জার্মানির সংবাদপত্রের ভূমিকা, আদালতের ভূমিকা র চালচিত্র তুলে ধরা হয়েছিল। দেখানো হয়েছিল, এক টি খুনের ঘটনার বিচারে যখন নাৎসি পার্টির সদস্যরা জড়িয়ে যাচ্ছিল তখন বিচারককে প্রকাশ্য দিবালোকে খুন করা হয়।

কয়েক বছর আগে ৬০ দশকের শেষ সময় সিদ্ধার্থ শংকর রায়ের আমলে ফরওয়ার্ড ব্লকের সর্বজন শ্রদ্ধেয় বর্ষিয়ান নেতা হেমন্ত বসুকে প্রকাশ্য দিবালোকে হাতিবাগান অঞ্চলে কংগ্রেসী গুন্ডারা খুন করে সিপিএমের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছিল। উৎপল দত্তর ব্যারিকেড নাটকটি সেই ঘটনার ছবিটা বাঙালি দর্শকদের সামনে পরিষ্কার করে তুলে ধরেছিল। সেই সময় আমি উৎপল দত্তকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, আপনি আপনার নাটকে, জার্মানির বিচার ব্যবস্থা নিয়ে যে তথ্য সংগ্রহ করেছিলেন বা যে খুনের ঘটনা দেখিয়েছিলেন তার কি কোন প্রামাণ্য দলিল রয়েছে? তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, আমাদের আলোচ্য অগ্নিগর্ভ বইটার জার্মান সংস্করণে এই ঘটনার উল্লেখ আছে। ওই বইটার ইংরেজি সংস্করণ এবং বাংলা সংস্করণে যা পাওয়া যায় না।

আগেই বলেছি, আলোচ্য বইটা লেখা হয়েছিল জার্মানির কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের মধ্যে। আনা ফ্রাংকের ডাইরিও কন্সেন্ট্রেশন ক্যাম্পের নারকীয় ঘটনার দিনলিপি। মানবতার চূড়ান্ত অবনমন দেখতে পাওয়া গিয়েছিল ফ্যাসিবাদের কবলে থাকা দেশগুলোতে। পরবর্তী সময় এইসব ঘটনা নিয়ে অসংখ্য তথ্যচিত্র এবং সিনেমা তৈরি হয়েছিল। প্রখ্যাত পরিচালক স্পিলবার্গ ও এরকম একটি সিনেমা তৈরি করেছিলেন। ওইসব দলিল চিত্রগুলো দেখলে গা গুলিয়ে ওঠে। রাতের ঘুম চলে যায়। মানুষ যে এত বর্বর হতে পারে, নৃশংস হতে পারে তা কল্পনা করাও যায় না। মজার কথা, হিটলার একচ্ছত্র ক্ষমতা দখল করার পর, তার পার্টির মধ্যে অসংখ্য খুদে খুদে হিটলারের জন্ম হয়েছিল। সেইসব ছোট ছোট হিটলার জার্মান দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জেলা এবং রাজ্যের সর্বাধিনায়ক হয়ে উঠেছিল। সব রকম দুর্নীতিতে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছিল। যে জার্মান জাতি হিটলারের কথায় বিশ্বাস করে, হিটলার কে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল, সব রকম সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে এসেছিল, দেশের সেই অংশটা অচিরেই বুঝতে পারল তারা কি ভয়ংকর ভুল করে ফেলেছে। বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকা ছোট ছোট হিটলার তাদের এলাকায় নিজস্ব আইন চালু করে দিয়েছিল। প্রতিটি দোকান থেকে শুরু করে ছোট বড় মাঝারি কন্ট্রাকটার, কারখানার মালিকের কাছ থেকে নিয়মিত তোলা আদায় করা হতো।

বেসরকারি এবং সরকারি কর্মচারীদের একটা অংশ থেকেও তোলা আদায় করা হতো। ডাক্তাররা তাদের পারিশ্রমিকের একটা অংশ ছোট ছোট হিটলারকে নিয়মিত দিতে বাধ্য হত। এমনকি চার্চের কাছ থেকেও তোলা আদায় করা হতো। জার্মান নাগরিকদের বিয়ের পার্টিতে  ছোট ছোট হিটলারের দল চলে গিয়ে তোলা আদায় করত। এইসব ছোট ছোট হিটলার একটা সময় বড় হিটলারের সমকক্ষ হয়ে উঠেছিল। পার্টির মধ্যে দেখা দিয়েছিল প্রচন্ড প্রতিদ্বন্দ্বিতা, প্রতি হিংসা, ক্ষমতা দখলের উৎকট ষড়যন্ত্র। এদেরই হাতে বেশ কয়েকবার হিটলারকে হত্যা করবার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। চার্লি চ্যাপলিন তার দা গ্রেট ডিক্টেটর চলচ্চিত্রে হিটলারের ভূমিকার অসামান্য চিত্ররূপ নির্মাণ করেছিলেন। একটা দৃশ্য ছিল হিটলার, পৃথিবীর গোলক টা দিয়ে ফুটবল খেলছে। ইউরোপের সংবাদপত্র ও ম্যাগাজিন গুলোতে মাঝে মাঝে কার্টুন প্রকাশ হত। সেই কার্টুন এ দেখা যেত, জার্মানির বুদ্ধিজীবী শ্রেণী হিটলারের গাড়ি টানছে। কখনোবা জুতো পরিষ্কার করে দিচ্ছে। সরকার স্লোগান তুলেছিল, আমরা বিশ্ব জয় করতে চাই। জার্মান জাতির জার্মান দেশের আধিপত্য কায়েম করতে চাই। আমরা এই পৃথিবী শাসন করবো। সুতরাং এই মুহূর্তে আমাদের লক্ষ লক্ষ জাতীয়তাবাদী নিবেদিত প্রাণ দেশপ্রেমিক সৈনিক প্রয়োজন। যাদেরকে পাঠানো হবে বিশ্বযুদ্ধে।

অতএব পাঠশালা, স্কুল কলেজ সব রকম শিক্ষা কেন্দ্র নিয়ে আমরা সময় নষ্ট করতে চাই না। বাধ্যতামূলক ভাবে প্রতিটি পরিবার থেকে যুবকদের টেনে বার করা হতো মিলিটারিতে নাম লেখানোর জন্য। এবং আরো আশ্চর্য, বলা হয়েছিল, প্রতিটি জার্মানির যুবতীদের প্রত্যেক বছর গর্ভবতী হতে হবে। কারণ আমাদের বিশ্বযুদ্ধ চলবে, বছরের পর বছর ধরে। আমাদের কোটি কোটি সৈনিক দরকার। কিভাবে গর্ভবতী হলো, সেটা বিষয় নয়। অর্থাৎ নির্বিকার ভাবে অবাধ ব্যভিচারের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল। ত্রিশের দশকে সেই সময়, কংগ্রেসের সভাপতি পদ থেকে বেআইনিভাবে গান্ধীজীর নির্দেশে সুভাষচন্দ্রকে অপসারিত করা হয়েছিল। তারপর গান্ধীজীর জয়, ঘোষণা করে তার অনুগামীরা স্লোগান তুলেছিল, ভারতের হিটলার গান্ধী বাবা কি জয়। ভারতে সেই সময় থেকে সমস্ত রকম দক্ষিণপন্থী মৌলবাদপন্থী চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে, স্লোগানতলা হয়েছিল, ভারতে ওই রকম একজন হিটলার চাই। ফ্যাসিস্ট নায়ক চাই। ফ্যাসিস্ট রাজনৈতিক দল চাই।

এদেশে ইংরাজ প্রভুদের রক্ষাকর্তা হিসেবে, ইংরাজ প্রভুদের তত্ত্বাবধানে কংগ্রেস দলের জন্ম হয়ে ছিল। দেশের যাবতীয় জমিদার রাজা মহারাজাদের একটা রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক প্ল্যাটফর্ম ছিল কংগ্রেস। একই রকম ভাবে বিভিন্ন সময় দেশের রাজা মহারাজা জমিদারদের নিয়ে অন্য ধরনের রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছিল। গ্রামের জো তদার দের নিয়ে রাজনৈতিক দল তৈরি হয়েছিল। এদের মধ্যে স্বৈরতন্ত্রের রাজনীতির চর্চা চলতো। এরা ইংরেজ শাসনকে সমর্থন করত। ইংরাজ শাসন জমিদারি তন্ত্রকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে দিয়েছিল। দেশীয় রাজাদের রাজনৈতিক ক্ষমতা খর্ব করা হলেও, তাদের শ্রেণী স্বার্থকে খর্ব করা হয়নি। এইসব দক্ষিণপন্থী দলগুলোর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি।

দেখা যাচ্ছে হিটলারের রাজত্বে, অন্ধ বিশ্বাস, কুসংস্কার, অপবিজ্ঞান, আধ্যাত্মবাদের বিপুল চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছিল। মানুষকে ভাগ্যবাদের দিকে ঠেলে দেওয়ার সব রকম আয়োজন ছিল। দেশ থেকে বিতাড়িত করা হয়েছিল বিশ্ব বিখ্যাত বিজ্ঞানী, অর্থনীতিবি, দার্শনিক এবং শিল্পী সাহিত্যিক দের। যারা তখনো জার্মানিতে বসবাস করত, তাদের অনেকের স্থান হয়েছিল কারান্তরালে। কিংবা হিটলারের পদ সেবা করে। জার্মানিকে বলা হয় দার্শনিকদের দেশ। ইউরোপীয় ক্লাসিকাল মিউজিকের দেশ। হিটলারের জার্মানিতে ওই দেশ হারিয়ে ফেলেছিল তাদের যাবতীয় ঐতিহ্য। কোনরকম ঐতিহাসিক গবেষণা, অনবদ্য শিল্প সাহিত্যের সৃজন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। দলে দলে শিল্পী সাহিত্যিক অভিনেতারা দেশত্যাগ করেছিলেন। আমরা যদি এই সময়ের দিকে নজর দিই, বিগত কম-বেশি 14 কিংবা ১৫ বছরে আমাদের বাংলা থিয়েটার, সিনেমা, শিল্প সাহিত্যের অন্য বিভিন্ন দিক থেকে ১০০ বছর পিছিয়ে গেছে। বাংলা হারিয়ে ফেলেছে তার যাবতীয় গর্বের ঐতিহ্য।

স্বৈরাচারী নায়কদের শেষ জীবন এবং পতন অত্যন্ত বেদনাময়। রোম এর সর্বাধিনায়ক জুলিয়াস সিজার কে সেই দেশের পার্লামেন্টের সিঁড়িতে খুন হতে হয়েছিল। ইতালির মুসোলিনিকে জনগণ ধরে নিয়ে এসে রোমের প্রকাশ্য রাজপথে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। হিটলার তার সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছিল। তবুও বিগত সত্তর বছর ধরে হিটলারের গুণকীর্তন চলছে। পৃথিবীর দেশে দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে হিটলার কে এক অসাধারণ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করার চেষ্টা হচ্ছে। ফ্যাসিবাদের দর্শন ও রাজনীতিকে সামনের দিকে তুলে আনা হচ্ছে। হিটলার নামক একটা মি থ সুকৌশলে তৈরি করা হচ্ছে। আমাদের দেশে ও হিটলারের পদধ্বনি বহু বছর ধরে শোনা যাচ্ছে। সাম্প্রতিক জাতীয় রাজনীতি ও আঞ্চলিক রাজনীতির মধ্যে বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের দিকে যদি হিটলারের আয়নাটা ঘুরিয়ে ধরা হয়, তখন আমরা কি খুবই আশ্চর্য হব? বিস্ময়ে মুক হয়ে যাব?

৫০ বছর আগে অগ্নিগর্ভ বইটা পড়তে পড়তে সেদিন কিন্তু আমরা কেউ আজকের দিনের কথা ভাবতে পারিনি। বরং একেবারে বিপরীত একটা ছবি ভারতবর্ষের অনেক মানুষ প্রত্যাশা করেছিল। স্বপ্ন দেখেছিল। তবে সেইসব স্বপ্ন ওলট-পালট হয়ে গেল কেন? কার দোষ? কাদের ভুল রাজনীতির জন্য, স্বপ্নগুলো হারিয়ে গেল? আজ ঐরকম নাটক আর লেখা হয় না। মঞ্চস্থ হয় না। এটাই ইতিহাসের ভারতীয় ট্রাজেডি।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -