কলকাতা – জীবনের ওপারে চলে গেলেন উত্তম কুমারের আরেক রোমান্টিক নায়িকা অঞ্জনা ভৌমিক। বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই করছিলেন বার্ধক্যজনিত অসুখের সঙ্গে। শুক্রবার রাতে শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন হাসপাতালে। শনিবার দক্ষিণ কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে সকাল ১০.৩০টা নাগাদ তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
দীর্ঘ দিন ধরেই বার্ধক্যজনিত অসুখে ভুগছিলেন অঞ্জনা ভৌমিক। অনেক সময় বাড়িতেই তাঁর চিকিৎসা হত। তাঁর দুই মেয়ে নীলাঞ্জনা এবং চন্দনা মায়ের খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই, খুবই ভেঙে পড়েছেন যিশুর স্ত্রী। সেনগুপ্ত পরিবারের সকলের পাশাপাশি অরিন্দম শীল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের মতো ইন্ডাস্ট্রির ব্যক্তিত্বরা তাঁকে শেষ বারের মতো দেখতে আপতত হাসপাতালেই।
ষাট থেকে আশির দশকের বাংলা সিনেমায় ছিল তাঁর উজ্জ্বল উপস্থিতি। এখনও বহু দর্শক মনে রেখেছেন তাঁকে। ‘চৌরঙ্গী’, ‘থানা থেকে আসছি’, ‘নায়িকা সংবাদ’-এর মতো ছবিতে তাঁর অভিনয় এখনও মনে রেখেছেন দর্শক। তাঁর এবং উত্তম কুমারের পর্দার রসায়ন দর্শকের ছিল খুব প্রিয়। অঞ্জনা বহু বছর ধরেই ছিলেন অন্তরালে। দুই মেয়ে নীলাঞ্জনা এবং চন্দনা দু’জনেই এক সময় অভিনয় করতেন। নীলাঞ্জনা এখন টেলিপাড়ার সফল প্রযোজক। তাঁর স্বামী অভিনেতা যিশু সেনগুপ্ত চুটিয়ে অভিনয় করছেন। কয়েক বছর আগে ‘উমা’ সিনেমার মাধ্যমে টলিউডে অভিষেক হয় যিশু-নীলাঞ্জনার বড় মেয়ে অর্থাৎ অঞ্জনার নাতনি সারার।
অভিনেত্রীর জন্ম ১৯৪৪ সালে। কোচবিহারে মেয়ে, নাম ছিল আরতি ভৌমিক। ২০ বছর বয়সে বাংলা সিনেমায় তাঁর অভিষেক হয় ‘অনুষ্টুপ চন্দ’ ছবির মাধ্যমে। তবে প্রথম ছবি মুক্তির আগেই তিনি নাম বদলে হন অঞ্জনা। উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর জুটি প্রশংসিত সর্বত্র। নিজের কেরিয়ারের অধিকাংশ ছবিই করেছে মাহনায়কের সঙ্গে। বহু দর্শক বিশ্বাস করতেন, উত্তম কুমারের সঙ্গে তাঁর যে জমাট রসায়ন, তা অন্য কোনও নায়কের সঙ্গে জুটি বাঁধলে সে ভাবে পর্দায় ধরা দেয় না।
অবশ্য সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গেও ‘মহাশ্বেতা’ ছবিতে তাঁর অভিনয় নজর কাড়ে দর্শক ও সমালোচকদের। তার পর নেভি অফিসার অনিল শর্মাকে বিয়ে করেছিলেন অঞ্জনা। বিয়ের পর থেকেই অভিনয় জগতের সঙ্গে বাড়তে থাকে দূরত্ব। তিনি বরাবরই বিশ্বাস করতেন, দর্শকদের অপেক্ষা করানোর মধ্যেই অভিনেতার সাফল্য। যদিও আশির দশকের পর সে ভাবে আর কোনও দিনই পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে।