Tuesday, August 26, 2025
Tuesday, August 26, 2025
Homeনাটকঅভিনয় শেখার জন্য থিয়েটারের দলে যোগ দিয়েছিল অভিষেক

অভিনয় শেখার জন্য থিয়েটারের দলে যোগ দিয়েছিল অভিষেক

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৩৪

কলকাতা তথা বিভিন্ন জেলার ছোট বড় নাট্যদলে এই যে অসংখ্য অভিনেতা অভিনেত্রী অভিনয় করে চলেছে, থিয়েটারের দর্শকরা কি তাদের আলাদা করে চেনে? দর্শক চেনে “স্টার” দের। কিন্তু স্টারদের সঙ্গে নানা নাট্যদলে যে সব “মিনি” স্টার অভিনয় করে, তাদের খবর কজন রাখে! অথচ থিয়েটার নামক শিল্পকে ভালবেসেই এরা অভিনয় করে চলেছে। প্রাপ্তির ঝুলি তেমন ভাবে হয়তো ভরে না। তবু অভিনয়কে ভালবেসে তারা থিয়েটারের মঞ্চে ঘাম ঝরিয়ে যাচ্ছে। প্রমাণ করে যাচ্ছে তাদের অভিনয় দক্ষতা। অনেক মুখের মাঝে এমনই এক মুখ দেবাশিস গুহ ও চৈতালি গুহর ছেলে নতুন প্রজন্মের অভিনেতা অভিষেক গুহ। ২০১৫-১৬ সাল থেকে তার থিয়েটার চর্চা শুরু। এই শিল্পকে ভালবেসেই একদা থিয়েটারে যুক্ত হয়েছিল অশোকনগরের অভিষেক।

থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার গল্প প্রসঙ্গে অভিষেক জানিয়েছে,সে এক মজার ঘটনা। ছোট থেকেই অভিনেতা অর্থাৎ “হীরো” হতে চাওয়ার ইচ্ছা তার মনের মধ্যে বাসা বেঁধেছিল। সে জানিয়েছে, “ফাটাকেষ্ট” সিনেমা দেখে আর একটা টিভি শো দেখে তার এমন ইচ্ছা হয়েছিল।তখন বয়স ১০-১৫ র মধ্যে। পরে খোঁজখবর নিয়ে সে জানল,অভিনয় শিখতে বা করতে হলে লক্ষাধিক টাকা ব্যয়ে অভিনয়ের স্কুলে ভর্তি হতে হয়। কিন্তু ঐ বয়সে ছেলের অভিনয় শেখার ইচ্ছে পূরণের জন্য অত টাকা ব্যয় করতে বাড়ির সবুজ সঙ্কেত মেলেনি। তবু হাল ছাড়েনি অভিষেক। সে জানতে পারে,উপায় একটা আছে। সেটা হল,কোন থিয়েটারের দলে যুক্ত হলে বিনি পয়াসায় অভিনয় শেখা যাবে। আর এই কারণেই থিয়েটারের দলে নাম লিখিয়েছিল অভিষেক।

স্কুলেও থিয়েটার করত সে। আর তখনই অশোকনগর আই পি সি এ নামে একটি দলের ওয়ার্কশপে যোগ দেওয়ার সুযোগ পেয়ে যায় সে। তাদের একটা প্রোডাকশনে কাজ করার সুযোগও মেলে তার।

ঈদের তোফা গল্প অবলম্বনে “আদাব” দিয়ে শুরু হয় তার অভিনয়। তার পরে অশোকনগর নাট্যমুখ,সবুজ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, দমদম নবরূপ নাট্যদলে অভিনয় করেছে অভিষেক। বেশ কিছু চরিত্রে অভিনয় করলেও “মরলে মরো ছড়িয়ো না” নাটকের অতনু বটব্যাল তার অভিনীত প্রিয় চরিত্র। কমেডি নাটকের এই চরিত্রটি রসিক এবং বোকা – তার ব্যক্তিগত চরিত্র থেকে যা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে বুঝেছিল, রসিক চরিত্রে অভিনয় করতে হলে নিজেকে অনেক বেশি প্রস্তুত হতে হয়, ভাঙতে হয়, আর সেজন্যেই এই চরিত্রটি তার প্রিয়। অবশ্য এ ছাড়াও আজাদী নাটকে সিম্পসন, জাতের বর্মিবাক্স নাটকে অরিন্দম, ট্র‍্যাপড নাটকে অনির্বাণ চ্যাটার্জী তার প্রিয় চরিত্রের তালিকায়।

থিয়েটারের অভিনেতা হিসাবে তার বক্তব্য: যে শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে আছি সেটাকে ভালবাসি। তাই অভিনয় নামক পেশা নিয়ে সে গর্বিত। তবে সে অনুভব করেছে,বহু মানুষ এই শিল্পকে ভাল চোখে দেখে না। তাদের ধারণাটা বদলে দিতে চায় অভিষেক। সে দেখেছে, বহু মানুষ এই শিল্পকে জড়িয়ে থেকেই বেঁচে আছে সম্মানের সঙ্গে, তারাই অভিষেকের আদর্শ। যদিও সে অনুভব করেছে,বাংলায় থেকে থিয়েটার করে অর্থনৈতিকভাবে সাবলীল হওয়া একটু কঠিন। তবু এই শিল্পকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চায় অভিষেক।

সবচেয়ে বড় কথা,তার বাড়ির মানুষজন তাকে সাহস জোগায়। নিরুৎসাহিত করে না। এটাই তার কাছে বড় প্রাপ্তি। অভিনয়কে পেশা করেই বাঁচতে চায় অভিষেক।এটাই তার কাছে চূড়ান্ত অনুপ্রেরণার বিষয়। পরিবারে দুই ভাই এর মধ্যে সে বড়। শ্রীচৈতন্য মহাবিদ্যালয় থেকে সে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেছে। এখন এগিয়ে চলেছে অভিনেতা হয়ে ওঠার ইচ্ছাকে আঁকড়ে ধরে। হাঁ, অভিনয়কেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করে মাথা তুলে বেঁচে থাকতে চায়  অভিনেতা অভিষেক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular