Tuesday, July 29, 2025
Tuesday, July 29, 2025
Homeনাটকঅর্কন থিয়েটারে টিকে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে

অর্কন থিয়েটারে টিকে থাকার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৩০  

এই যে কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন নাট্যদলে একদল তরুণ প্রজন্মের ছেলেমেয়ে থিয়েটারকে ভালবেসে দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, তার কি কোন মূল্য নেই? এই কঠিন লড়াইএর লড়াকু ছেলেমেয়েরা থিয়েটার নামক শিল্পকে ভালবেসে যুক্ত হয়েছে থিয়েটারে। বেছে নিয়েছে অনিশ্চিত জীবনের ঝুঁকি। তাদেরই একজন কলকাতা শহিদনগরের অর্কন ব্যানার্জী। বয়স মাত্র একুশের চৌকাঠে। কিন্তু অর্কণের লড়াইটা শুরু হয়েছে ছোটবেলা থেকেই। পাড়ার বা স্কুলের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া অর্কন এখনও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।  

মাত্র ১১ বছর বয়সে অর্কন যুক্ত হয়েছিল থিয়েটারে। নাটকে অভিনয় করতে তার ভাল লাগত। আনন্দ পাওয়ার জন্যই থিয়েটারে গাঁটছড়া বেঁধেছিল সে। সেই গাঁটছড়া দৃঢ় হয়েছে গত দশ বছরে। শহীদনগরের শহীদ স্মৃতি সঙ্ঘের নাট্যদল (তৎকালীন) ঢাকুরিয়া নাট্যমুখের হয়ে প্রথম অভিনয়ের মঞ্চে নামা। পাড়ার (শহীদনগর) ক্লাবে থিয়েটার করার ডাক পেয়ে আর ভাবেনি অর্কন। প্রথমে সমবয়সীদের সাথে অভিনয়। পরে বড়দের সাথেও অভিনয়ের সুযোগ ঘটে যায় অর্কনের। প্রথম নাটক “কান কাটা রাজ্য” – তারপর থেকে নানা নাটকে নানা চরিত্রে। ঢাকুরিয়া নাট্যমুখ, কাব্যাঙ্গন, দক্ষিনের বাতাস (শহীদ স্মৃতি সংঘের বর্তমান নিজস্ব নাট্যদল), যাদবপুর ব্যতিক্রম সহ নিজের তৈরি নতুন পৃথিবী নাট্যদলে সে অভিনয়ের সাথে যুক্ত হয়েছে।

অভিনীত সব চরিত্রই তার প্রিয়। তবু “চার অক্ষর” নাটকের মল্লিক ও “ভাইরাল ভজা”  নাটকের ভজা তার প্রিয় চরিত্রের তালিকায়। বলা বাহুল্য “চার অক্ষর” নাটকটি দর্শকমহলে সাড়া ফেলে দেওয়া একটি নাটক। সেই নাটকে অভিনয়ে করে অর্কন দর্শকের অভিনন্দনে অভিনন্দিত হয়েছে। এই দুটি চরিত্র তার কাছে বিশেষ প্রিয় হলেও অন্যান্য চরিত্রেও সে নিজেকে উজার করে অভিনয় করতেই ভালবাসে। থিয়েটার করে যাচ্ছে মনের আনন্দে। থিয়েটার জগৎ নিয়ে খুব বিস্তৃত ধারণা এখনও গড়ে ওঠেনি একুশে যুবক অর্কনের। তবে সে মনে করে, নিজে সততার সঙ্গে থিয়েটারে যুক্ত থাকলে থিয়েটার জগৎ তার ভাল লাগার জগৎই হয়ে উঠবে।

অর্কন মনে করে, থিয়েটার শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়। বরং এটি এমন একটি শক্তিশালী মাধ্যম যা সমাজের সাদা কালো, মন্দ ভালোকে তুলে ধরে। দর্শকদের চিন্তা ভাবনা জাগ্রত করে। সামাজিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করে। দর্শকদের সে থিয়েটারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করে।

থিয়েটার করে কি বাঁচা যায়?.. এই প্রশ্নের উত্তরে অর্কন জানিয়েছে,অবশ্যই বাঁচা যায়। এজন্য নিজেকে থিয়েটারের যোগ্য করে তুলতে হবে। অর্কন জানাল, যদি থিয়েটারের জগতের দিকে তাকাই তাহলে দেখব, বহু মানুষ থিয়েটার করেই বেঁচে আছে। কেউ অভিনেতা, কেউ অভিনেত্রী, কেউ আলোকশিল্পী, কেউ রূপসজ্জাকার, কেউ সেট তৈরি করেন। থিয়েটার করে বাঁচতে হলে শুধু অভিনয় নয়, আনুষঙ্গিক বিষয়গুলিও শিখতে হবে। তাহলেই থিয়েটার করে বাঁচাটা সহজ হবে বলে তার ধারণা। তাই সে এখন থিয়েটারের আবহ প্রক্ষেপণের কাজটা শিখেছে, এনং পেশাদারভাবে অন্যান্য দলের সাথে করছেও।

যাদবপুর বিদ্যাপীঠ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হয়ে জর্জ কলেজ থেকে বিসিএ পড়াশুনো, সে শেষ করেছে সম্প্রতি। থিয়েটার করতে করতেই লেখাপড়া চালিয়ে গেছে। এই অর্কন স্কুলের অনুষ্ঠান করতে মধুসূদন মঞ্চে প্রথম নাটক করেছিল। আর মুক্তাঙ্গনে শহীদ স্মৃতি সংঘের তৎকালীন দল ঢাকুরিয়া নাট্যমুখের হয়ে অভিনয় করেছিল।  

ছোটবেলা থেকেই নাটকের পাশাপাশি কবিতা, শ্রুতিনাটকের অনুষ্ঠান করে অর্কন। বিশেষত শ্রুতিনাটক তার বিশেষ পছন্দের।এসব করতে করতেই অভিনয়কে ভালবেসেছিল সে। যুক্ত থাকতে চায় অভিনয়ের সঙ্গে। এক একটা নাটকে এক একটা চরিত্রে অভিনয় করতে করতে সে যেন নিজেকে আবিষ্কার করে প্রতি মুহূর্তে। থিয়েটারে জুড়ে থাকার জন্যেই  অভিনয়ের পাশাপাশি নাটকে মিউজিক করার দায়িত্বও পালন করে সে। বেশ কিছু নাটকে মিউজিক করেছে। এভাবেই নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আবিষ্কার করছে অর্কন। একসময় কবিতা শিখেছে। তবে থিয়েটারের প্রশিক্ষণ এখনো সেভাবে নেওয়া হয়নি তার। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন শিল্পী ও নির্দেশকের সান্নিধ্য সূত্রেই সে অনেক কিছু শিখেছে থিয়েটারে। এই মুহূর্তে দেবাশিস রায়ের (দেবা রায়) প্রশিক্ষণে বিভিন্ন স্থানে অভিনয় করছে সে। থিয়েটারের ক্লান্তিহীন প্রশিক্ষক দেবা রায় জানিয়েছেন, অর্কনের মধ্যে থিয়েটারের খুঁটিনাটি শেখার তুমুল আগ্রহ আছে। অভিনয় করতে সে ভালোবাসে। থিয়েটারের অন্যান্য কাজেও সে দক্ষ হয়ে উঠছে।  

প্রবীর ব্যানার্জী ও চন্দ্রা ব্যানার্জীর পুত্র অর্কন এই মুহূর্তে একাধিক দলে অভিনয় করছে। দক্ষিণের বাতাস, যাদবপুর ব্যতিক্রম-এর সাথে গভীরভাবে যুক্ত থাকার পাশাপাশি সমবয়স্ক বন্ধুদের নিয়ে ‘নতুন পৃথিবী’ নামে একটি নাটকের দলও গড়ে তুলেছে সে। সারাবছরই নিজেকে নাট্যচর্চায় যুক্ত রাখে। বাইরেও ডাক পেলে নাটক করতে যায় দলবল নিয়ে।  

স্কুল কলেজে বারাব্বাস, আয়না, আবিষ্কারের অন্তরালে, অবাক রামায়ণ, মোবাইলটা আমার চাই, রবি এলেন মর্তে, মুড়কির হাঁড়ি, সত্যি ভূতের গপ্পো, ভাড়াটে চাই ইত্যাদি নাটকে অভিনয় করেছে। দেবা রায়ের নির্দেশনায় ব্যতিক্রমের ব্যানারে চার অক্ষর, যমপুরী জমজমাট, কালো ব্যাগ, দুর্নীতি দর্পণ প্রভৃতি  এবং দক্ষিণের বাতাসের ব্যানারে ধন্বন্তরি, বিবাহ বিভ্রাট, পশুপতি অপেরা, ভাইরাল ভজা, নাটকে অভিনয় করছে ও করেছে। সম্প্রতি যাদবপুর ব্যতিক্রমের প্রযোজনায় ‘মহাবিদ্যা অধিকন্তু’ নাটকে একটি গুরুত্বপুর্ণ চরিত্রে অভিনয় করছে, যা অবিলম্বে মঞ্চে আসবে। এভাবেই চলছে তার থিয়েটারে নিজের মত করে বেঁচে থাকার লড়াই। 

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular