উত্তরবঙ্গের সুমিত থিয়েটার দেখে থিয়েটারে এসেছিল

- Advertisement -

 বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ১০

উত্তরবঙ্গের ছেলে সুমিত দেবনাথ থিয়েটারের প্রেমে পড়েছিল খানিকটা পারিবারিক সূত্রেই। সুমিতের কাকার ছেলে থিয়েটার করত। সেই থিয়েটার দেখতে দেখতেই তার থিয়েটারকে ভালবাসতে শুরু করা। আসলে চোখের সামনে রোজদিনের দেখা কাকাতো দাদা যখন মঞ্চে উঠত তখন সে অন্যরকম। যখন যে চরিত্র করে, তখন সেই চরিত্রের মত হয়ে যায়। এই ব্যপারটা সুমিতকে খানিকটা অবাক করত।  তাই সেই থিয়েটার দেখতে দেখতেই সুমিতও থিয়েটারের সাথে যুক্ত হয়ে পড়ে। “বাঁচবো বাঁচবো” নামে একটি দলে সে ঐ কাকাতো দাদার সূত্রেই ঢুকে পড়ে থিয়েটার করতে। “চন্ডালিকা”য় প্রথম অভিনয়। তারপর থেকে আর ছাড়েনি থিয়েটার। বছর দশেক হয়ে গেল তার থিয়েটার যাপন। বাঁচবো বাঁচবো দলের পর জলপাইগুড়ি কলাকুশলী এবং তারপর জলপাইগুড়ি সৃষ্টি মাইম থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হয় সুমিত। এই দলগুলিতে বিভিন্ন নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করতে করতে একসময় সুমিতকে সবাই থিয়েটারের জন্যই চিনে ফেলে। তার মনে হয়, হয় তো তার অভিনয় নজর কাড়ে বলেই সবাই তাকে চিনে নিয়েছে। এইসব দলের নানা নাটকে সুমিত নানারকম চরিত্রে অভিনয় করলেও ভোকাট্টা নাটকের পুটে চরিত্রটাই তার প্রিয়তম চরিত্রের তালিকায়।  কারণ চরিত্রটির বিশেষত্ব হচ্ছে বাঁধনছাড়া  এবং রসিক। 

এতদিন থিয়েটার করতে করতে থিয়েটারের জগৎটা তার এখন চেনা একটা জগৎ হয়ে উঠেছে। কোনটা ভাল আর কোনটা মন্দ সেটা সে বুঝতে শিখেছে।  একটা থিয়েটারের দলে নানারকম মানুষ থাকে। তাদের সকলের সঙ্গে সৌহার্দ্য বজায় রাখার চেষ্টা করতে করতে নিজেকে এই জগতে মানানসই করে তুলতে পেরেছে। তাই থিয়েটারের জগৎ সম্পর্কে একটা ভাল ধারণাই গড়ে উঠেছে তার। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে থিয়েটার করতে গিয়ে সেই এলাকার মানুষের, সংস্কৃতির সাথে জড়িয়ে যাওয়ার ব্যাপারটাও থিয়েটারের  জগৎকে ভাল লাগার একটা কারণ তার কাছে।

থিয়েটার করে বাঁচা যায়, এই বিশ্বাসটাই সে আঁকড়ে ধরে রাখতে চেয়েছে। তবে শুধু থিয়েটার করে আজীবন বাঁচা যায় কিনা এ নিয়ে তার একটা সংশয়ও আছে। সুমিতের এই থিয়েটার করার ব্যাপারে বাড়ির মানুষজনের প্রচ্ছন্ন প্রশ্রয় আছে। শুধু তাই নয় তাঁরা কেউ কেউ থিয়েটারেও যুক্ত, তাই সেটা সুমিতের বাড়তি প্রাপ্য।

থিয়েটার জীবনে ছোট বড় নানা চরিত্রে অভিনয় করেছে সুমিত। আসলে সব চরিত্রকেই তার সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়। তাই ছোট চরিত্র বড় চরিত্রের বাছবিচার করে না সে। সবরকম চরিত্রেই অভিনয় করে। ছোটবেলায় তার অভিনীত নাটকগুলি হল : অবাক জলপান, ডাকঘর  রাজার রাজদ্রোহী, চন্ডালিকা, বড় খবর, বরিশালের যোগেন মন্ডল, ভোকাট্টা, গোশানী মঙ্গল, মুক্তধারা, man and machine, save water , corona , কালমৃগয়া।

নাটক শেখার ব্যাপারটা সুমিত নাটক করতে করতেই আয়ত্ত করেছে বলে এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছে। যখন যে দলে নাটক করেছে, তখন সেই দলের নির্দেশকের কাছে শিখেছে বিভিন্ন ওয়ার্কশপের মাধ্যমেই।  তবে মূকাভিনয়ের ক্ষেত্রে তার একটি বিশেষ আগ্রহ আছে। মূকাভিনয়ে ccrt থেকে National Scholarship পেয়ে সেই প্রশিক্ষণে সে নিজেকে যুক্ত রেখেছে।

উত্তরবঙ্গের থিয়েটার চর্চা প্রসঙ্গে সে জানিয়েছে, উত্তরবঙ্গে থিয়েটার চর্চা যথেষ্টই উন্নত। জলপাইগুড়ি শহরেই বেশ কিছু থিয়েটারের দল আছে যারা নিয়মিত থিয়েটার করে।অন্য জেলাগুলিতেও অনেক ভাল নাট্যদল আছে বলে তার মনে হয়েছে।

থিয়েটার করার পাশাপাশি পড়াশুনোও চালিয়ে যাচ্ছে সুমিত। উত্তরবঙ্গের সুমিত যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তরের ছাত্র। তাই থিয়েটার আর পড়াশুনো দুটোই এখন তার জগৎ।তবে থিয়েটারটা সে করে ভালবেসে, আর পড়াশুনোটা নিজেকে একটা শক্ত মাটিতে দাঁড় করানোর প্রত্যাশায়।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -