নিজস্ব প্রতিনিধি
গত ৮ মার্চ ২০২৪, আন্তর্জাতিক নারীদিবস উপলক্ষ্যে কৃষ্ণনগর সেন্ট্রামে আয়োজিত হয়েছিল এক মনোজ্ঞ সন্ধ্যা। সকলে মিলে একসাথে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
কৃষ্ণনগর জীবনের ঐকতান সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত একটি নাট্যগোষ্ঠী। ২০২০ সালের ১লা আগস্ট তাঁদের পথ চলা শুরু হয়। গত বছর ডিসেম্বর মাসে তাঁরা “নাট্য সম্রাজ্ঞী বিনোদিনী আন্তর্জাতিক নাট্যোৎসব ২০২২” আয়োজন করেছিলেন, কৃষ্ণনগর রবীন্দ্রভবনে। সকলের সহযোগিতায় ঐ নাট্যোৎসবে যোগদান করেছিল নেপাল, বাংলাদেশ এবং ভারতের দশটি নাটক নিয়ে বিভিন্ন নাট্যদল।
এদের একটি ষান্মাসিক পত্রিকা “জীবনের ঐকতান” যা ইতিমধ্যে সুনাম অর্জন করেছে। এই সংস্থা সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কথা বলতে হয়, কিন্তু সংক্ষেপে যদি বলা যায়, তাহলে এই অল্প সময়ে তারা অনেক দ্রুততার সাথে তাঁদের সংগঠনের কাজ এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। মোট ৬০ জন মহিলা নিয়ে তারা তিনটি বিভাগে ( চিত্রাঙ্গদা বিভাগ, সঞ্চিতা বিভাগ, ছাড়পত্র বিভাগ) কাজ করছে যথাক্রমে ২৩, ১২ ও ২৫ জন। চিত্রাঙ্গদা বিভাগ কৃষ্ণনগরে আর সঞ্চিতা ও ছাড়পত্র বিভাগ ধুবুলিয়ায়।
উক্ত অনুষ্ঠানে নাট্যকার, নির্দেশক জবা শর্মাকে “জীবনের ঐকতান সম্মাননা স্মারক” সম্মান দেওয়া হয়। উত্তরীয়, ফুল, মিষ্টি দিয়ে সম্মানিত করেন জীবনের ঐকতানের শিল্পী ও সহযোদ্ধারা। তাঁর সাবলীল ভাষায় দৃঢ় বক্তব্য উপস্থিত সকলকে মুগ্ধ করে এবং তাঁরই হাতে তৈরি মালা পড়িয়ে কাছে টেনে নেন জীবনের ঐকতানের অন্যতম কর্মী শুভ্রা রায়কে।
আজকের নারী দিবসে উপস্থিত ছিলেন স্বপন পাল,গৌরী সাহা, ডক্টর সঙ্গীতা রায় চৌধুরী,ডক্টর সুশীল সাহা, ডক্টর যতন রায় চৌধুরী, ছবি চ্যাটার্জ্জী ও সুপ্তি বিশ্বাস । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন কৃষ্ণনগর জীবনের ঐকতান-এর শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
ধুবুলিয়া থেকে আগত শিশু সাহিত্য সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক স্বপন পাল জীবনের ঐকতানের যোদ্ধাদের সম্মাননা জানান ফুল মিষ্টি দিয়ে। তাঁর স্বরচিত কবিতায় এবং বক্তব্যেও ফুটে ওঠে নারী আন্দোলনের দিক।
শ্রীমতি গৌরী সাহার “শুভ্র না হয়েও শুভ্রা” এবং বক্তব্য সকলকে আবেগপ্রবন করে তোলে। শ্রীমতি সুপ্তি বিশ্বাস, ডক্টর সঙ্গীতা রায় চৌধুরী এবং বিশিষ্ট সমাজসেবী শ্রীমতি ছবি চ্যাটার্জ্জী, শ্রীমতি অনিতা রক্ষিত তাদের কিছু কথায় মুখরিত হয়ে ওঠে নারী দিবসের এই অনুষ্ঠান।
ডক্টর সুশীল সাহা এবং ডক্টর যতন রায় চৌধুরীর সুন্দর বক্তব্যে জীবনের ঐকতান-এর সদস্য ও উপস্থিত সকলকে উদ্বুদ্ধ করে।
জীবনের ঐকতান-এর সঞ্চিতা বিভাগ ধুবুলিয়ার নারীরা পরিবেশন করে দুলাল কর রচিত, শুভ্রা রায় নির্দেশিত নাটক “দহন” মঞ্চস্থ হয়। যা সকল দর্শক মনে জায়গা করে নেয়।
আর জীবনের ঐকতান-এর প্রতিটি মেয়ে চৈতালীদি, তনয়া, তনিমা, সুস্মিতা, সংঘামিত্রা, লক্ষী, সবিতাদি, উশ্রী, গার্গী, অত্রিদি, রিমা, পায়েল, শ্রাবনী, শ্রেষ্ঠা, সৃজনী, সমৃদ্ধি, সৃজা, অন্বেষা, অঙ্কিতা, মৌসুমী, পূর্ণিমা, পায়েল, সৌমি এবং আরো সদস্যরা যার যা দায়িত্ব ছিল সুন্দরভাবে পালন করে অনুষ্ঠানের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছেন।
জীবনের ঐকতান-এর শ্রষ্ঠা শুভ্রা রায় দলের প্রতিটি মেয়ে এবং অতিথিদের ফুল চন্দন ও ছোট্ট উপহার দিয়ে বরণ করে নিয়ে বললেন – ‘ওরা আছে বলেই শুভ্রা রায়ের অস্তিত্ব আছে। ওরাই জীবনের ঐকতান-এর এক একটি স্তম্ভ। ওদের দায়িত্ববোধ আমাকে ঋদ্ধ করে। ধুবুলিয়ার মেয়েদের সময়ানুবর্তিতা, রির্হাসাল শেষে দৌঁড়ে ট্রেনে তুলে দিয়ে বাড়িতে ঠিকমতো পৌঁছুলাম কিনা তার খোঁজ নেওয়া আমার জীবনের অপূর্ণতাগুলো পূর্ণ করিয়ে দেয়। ভুলিয়ে দেয় মা, বাবা, বোন না থাকার যন্ত্রনা। কৃষ্ণনগরের মেয়েরাও তাই।’
নারী দিবসের এই বিশেষ তাঁদের এই আয়োজন সার্থক। তার মনে করেন, পুরুষ নারীকে নারী পুরুষকে যথাযোগ্য সম্মান মর্যাদা দিক। তবেই তো আমরা সুন্দর পৃথিবী সুস্থ সমাজ দেখতে পাবো। কৃষ্ণনগর জীবনের ঐকতান তারই অপেক্ষায়…