নৈতিক রায়
কেতকী দত্তর জন্ম ১৩ জুলাই, ১৯৩৪ সালে। ১০ বয়স থেকে অভিনয় জীবন শুরু। নাচ শেখাতেন রঞ্জিত রায়, ললিত গোস্বামী। সকাল নটা থেকে বারোটা পর্যন্ত নাচের রিহার্সাল করতে হত। চারটে থেকে ছটা গানের রিহার্সাল করতে হত। সেখানে কৃষ্ণ চন্দ্র দে, রঞ্জিত রায় এনারা থাকতেন। ছোটবেলা থেকে থিয়েটারটা তাঁর খেলার জায়গা ছিল। ডাঙগুলি, গুলি খেলতে ও ঘুড়ি ওড়াতে ভীষণ ভালোবাসতেন। রিহার্সালের ফাঁকে আলোক শিল্পী বংশী বা অন্যান্যদের সাথে এসব খেলতেন। শিশির ভাদুরিকে উনি দাদু ব’লে ডাকতেন। আর তাঁর নিজের একটা ডাকনামও ছিল ‘ছোট’। এই ছোট বেলাকার নানার দুষ্টুমির কথা তিনি তার সাক্ষাৎকারেই বলে গেছেন। একবার ঘুড়ি ওড়ানোর সময়, একজনের সাথে বিবাদে প’ড়ে ঢিল ছোড়াছুরি করতে গিয়ে তার ঢিলে একজনের মাথা ফেটে গিয়েছিল। সেই খবর তখন বড়বাবুর (শিশির ভাদুরী) কানেও উঠেছিল। এদিকে মা প্রভাদেবী এই খবর পেয়ে মেয়েকে খুঁজতে থাকেন। মায়ের ভয়ে তিনি শো চলাকালীন ‘সীন’-এর পেছনে লুকিয়ে ছিলেন। অভিনয় শেষে মা তাকে পাঁকরাও করে বেশ মার দেয়। মা রেগে গেলে তাঁকে ‘হারামজাদী’ বলে ডাকতেন।
পারিবারিকভাবে সে অভিনয়ের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন কারণ তার বাবা তারাকুমার ভাদুড়ী ও মা প্রভাদেবী দুজনেরি সেই সময়ের জনপ্রিয় দুই অভিনেতা। মায়ের হাত ধরেই তিনি শিশু অভিনেতা হিসেবে শ্রীরঙ্গমে যুক্ত হন। তুলসী লাহিড়ীর মায়ার সংসার নাটকে তার শিশু চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ ঘটে। সেই অভিনয় মঞ্চে তখন তাঁর সহকর্মী কারা? শিশির কুমাত ভাদুড়ী, মণরঞ্জন ভট্টাচার্যব, শৈলেন চৌধুরী, জহর গাঙ্গুলিদের মতো মহান সব শিল্পীরা। কেতকী অভিনীত মায়ামৃগ নাটক তাঁকে বিপুল জনপ্রিয়তা এনে দেয়। ছোট থেকেই তিনি খুব সাহসী ছিলেন। আগেই তা আমারা জেনেছি। মায়ামৃগ নাটক চলাকালীন প্রেক্ষাগৃহে এক উত্তেজনাকে ঘিরে গোলমাল দেখা দিলে আন্দোলন শুরু করেছিলেন শিল্পীরা। কেতকী আঁতুড়ের বাচ্চা নিয়ে সেই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন। কাশীবিশ্বনাথ মঞ্চে নটী বিনোদিনী দয়াল অপেরা নাটকে অভিনয় করেন।

গান কেতকী দত্তের শৈল্পিক স্বত্বার আর একটি বলিষ্ঠ দিক। একসময় আলাদাভাবে তিনি নিজে নাটকের গান পরিবেশন করতেন মঞ্চ মঞ্চে। বিবাহ করেছিলেন মদন দত্তকে। তার দুইটি ছেলে ও তিনটি মেয়ে ছিল। জন্মেছিলেন ১৯৩৪ সালের ১৩ আগস্ট।
কেতকী দত্ত মানে একটি নাটকের অশ্লীল প্রয়োগের কথা উত্তাপন করে, তার মত্রো অভিনেতার মূল্যায়ন সম্ভব নয়। যে নাটক ১৮০০ রজনী অতিক্রান্ত অভিনীত। সেখানে বিতর্কে জড়িয়ে পরেন কেতকী। তার অভিনীত ‘এন্টনী কবিয়াল’কে ম্লান করে দেবার চেষ্টা চলে, কিন্তু ইতিহাস সময়কে সাক্ষী রেখে উৎকর্ষতাকেই মনে রেখে দেয়। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী নিজে এই নাটক দেখেছেন, তাঁকে সম্বর্ধিত করেছেন। যার ফলে দিনের অন্তিম সময়ে এসে ঊষা গাঙ্গুলীর নির্দেশনাইয় মুক্তি নাটকে অভিনয় করে হাল আমলের দর্শকদের বুঝিয়ে দিয়েছিলেন তিনি ফেলনা অভিনেতা নন। তার অভিনয় প্রতিভা নিরুপমের প্যারামিটার কখনোই ‘বারবধু’ নয়। বারবধু পরিচালক অসীম ভট্টাচার্যের পকেট ভর্তি করেছে।
বেশ কিছু সিনেমাতেও তিনি অভিনয় করেছেন। তাদের মধ্যে, দ্য সিটিজেন (১৯৫৩), বিপাশা (১৯৬২), পদী পিসির বর্মী বাক্স (১৯৭২), নাগরিক (১৯৭৭), সতী (১৯৮৯), চাকা (২০০০), কঙ্কাল (২০০০), পাতালঘর (২০০৩) প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই অভিনেত্রীর রক্তস্নাত জীবন সংগ্রাম তাঁকে উন্নীত করেছে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক। তাঁরই ৯১ তম জন্মদিনে আমাদের বাংলা নাটক ডট- এর বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাংলা রঙ্গমঞ্চের এই অভিনেত্রীর রক্তস্নাত জীবন সংগ্রাম তাঁকে উন্নীত করেছে এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্কে। তাঁরই ৯১ তম জন্মদিনে আমাদের বাংলা নাটক ডট- এর বিনম্র শ্রদ্ধা।