Tuesday, November 19, 2024
Tuesday, November 19, 2024
Homeআলোচনাজলপাইগুড়ি ছদ্মবেশী প্রযোজিত 'কৃষ্ণকলি' চিরকালীন সত্যের সমাজদর্পন

জলপাইগুড়ি ছদ্মবেশী প্রযোজিত ‘কৃষ্ণকলি’ চিরকালীন সত্যের সমাজদর্পন

চাণক্য সেন

ময়নাগুড়ি অ্যাথলেটিক ক্লাবের পরিচালনা এবং ব্যবস্থাপনায় সম্প্রতি দুর্গা বাড়ির ফুটবল ময়দানের মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ৫ দিনব্যাপী সারা বাংলা একাঙ্ক নাটক উৎসব যা ছিল স্বর্গীয় মনোরঞ্জন সাহা এবং বিজয় কুমার আগরওয়াল এর স্মৃতির উদ্দেশ্যে নিবেদিত। এই উৎসবে অভিনীত হয় জলপাইগুড়ির ছদ্মবেশী নাট্যগোষ্ঠী প্রযোজিত সামাজিক বার্তা মূলক নাটক ‘কৃষ্ণকলি’। যার রচনা এবং নির্দেশনায় রিম্পা দাস।

সামগ্রিক নাট্য নির্মাণ যাঁদের দ্বারা সম্ভব হয়েছে তাঁরা হলেন রনজয় দাস, সিদ্ধার্থ মুখার্জি, রনিতা মুখার্জি, রুপা চক্রবর্তী, আরতি রায়, শিশু শিল্পী শ্রীমন্তী কুন্ডু, ইন্দ্রজিৎ সরকার, সঞ্জু কুন্ডু, দীপঙ্কর রায়, অর্চিতা গুহ মজুমদার, অমিতাভ চক্রবর্তী সুবীর শীল ও রিম্পা দাস।

মঞ্চ নির্মাণে- রিম্পা, রনজয়, সঞ্জু। আবহে সঞ্জু, শ্রীমন্তী। রূপসজ্জায় পরিচালক রিম্পা নিজেই। এবার আসা যাক নাট্যবস্তুতে। কৃষ্ণকলি একটি কালো মেয়ের উপাখ্যান। একটি কালো মেয়ে প্রতিনিয়ত পরিবার, সমাজ, সংসার প্রত্যেকটা জায়গায় অপমানিত লাঞ্ছিত অসম্মানিত হওয়ার পরও কিভাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয় কিভাবে নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করতে হয় সেই বার্তাই সমাজের কাছে পৌঁছে দিয়েছে এই নাটক।

পরিস্থিতির কাছে হেরে গিয়ে পালিয়ে যাওয়া নয় বরং পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার নামই জীবন, ‘কৃষ্ণকলি’ সেটাই প্রমাণ করে দিয়েছে। কৃষ্ণকলি প্রমাণ করে দিয়েছে তীব্র ইচ্ছা শক্তির কাছে কোন বাঁধাই বাধা নয়।

ময়নাগুড়ি নাট্য উৎসব-মঞ্চে এটি তাঁদের প্রথম মঞ্চায়ন। প্রথম দিনের অভিনয়েই উপস্থিত দর্শক নাটকটিকে বেশ উপভোগ করেছেন এটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়। কারণ কৃষ্ণকলি অনুভবের নাটক। ‘কৃষ্ণকলি’ নাটকটির অন্যতম সামাজিক বার্তা হল – বাহ্যিক সৌন্দর্যটা সাময়িক কিন্তু আভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যটা চিরন্তন।

কৃষ্ণকলি, সুমিত, সৌরভ, রিজু, চরকি এবং অরূপ এই চরিত্রগুলি নাটকে একটা আলাদা জায়গা তৈরি করে নিয়েছে তাদের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। একদম শুরুতেই একটি নাটক যখন দর্শক ধন্য হয়, তখন এই নাটকের দৌড় বেশ অনেকটা পথ ধরে এগিয়ে যাবে এতে অস্বাভাবিকতা কিছু দেখছি না।

এই নাটকে সামাজিক বার্তা যেমন আছে, কিন্তু তার বাইরে গিয়ে আছে মানুষের মানসিক সংকীর্ণ মানসিকতা যা সমাজের সিংহভাগ মানুষকে আজও মানসিকভাবে আধুনিক হতে দেয়নি। আজও বেশীরভাগ মানুষ শুধুমাত্র বাহ্যিক সৌন্দর্যের নিরিখে একটা মানুষকে বিচার করে থাকেন। কিন্তু মানুষের অন্তর্নিহিত সৌন্দর্যের রূপদর্শন বিচার্য নয়। কৃষ্ণকলি যেন সেই অন্তরের সৌন্দর্য। যে সবকিছু যেমন অবহেলা নিপীড়ণ, অসম্মান, অপমান, অত্যাচার সবকিছু সয়েও সে এগিয়ে চলে জীবন যাত্রার।

জন্ম লগ্ন থেকে মাতৃহারা কৃষ্ণকলি যে নিয়ত ঠাকুমার থেকে শারীরিক এবং মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করে আসা, যার বাবাকে আঁকড়ে ধরে বড় হয়ে ওঠা। পরিবার ছেড়ে পাড়া-প্রতিবেশী আত্মীয়-স্বজন , প্রত্যেকটা মানুষ মানসিক ভাবে তাকে কষ্ট দিতে কখনো কার্পণ্য বোধ করেনি।

এমনকি পড়াশোনার পথেও বাঁধা এসেছে বহুভাবে বহুবার। কালো বলে তাকে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হতো, এমনি অসহনীয় বহু যন্ত্রণার অভিব্যক্তি অসাধারণ দক্ষতার সাথে এঁকেছেন অভিনেত্রী রিম্পাদাস। সমগ্র নাটকে তাঁর অভিনয় ‘কৃষ্ণকলি’কে ছুঁতে সাহায্য করেছে।

তাই ভালো কাজের প্রশংসা করতেই হয়। আত সেই জায়গা থেকেই এই নাটক দর্শক ধন্য হয়ে উক্ত সন্ধ্যায়। কৃষ্ণকলির বাবা মাস্টার কমলেশ ব্যানার্জি চরিত্রে সিদ্ধার্থ মুখার্জি ও তারই বন্ধুর ছেলে সুমিত চরিত্রে রণজয় দাস দুজনেই যথাযথ অভিনয় করেছেন।

এছাড়া চরকি চরিত্রে শিশু শিল্পী শ্রীমন্তী কুন্ডু, অরুপ পাল চরিত্রে সুবীর শীল, সৌরভ চরিত্রে সঞ্জু কুন্ড, গুণ্ডা রিজু চরিত্রে ইন্দ্রজিৎ সরকার সকলেই উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন। সামগ্রিকভাবে নাটকের টীম ওয়ার্ক ছিল বেশ ভালো।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular