দুলাল চক্রবর্ত্তী
ত্রিবেণী নটনিকেতন সংস্থার নিপুণভাবে নির্মিত এবং প্রযোজিত নান্দীমুখ নাটকের মঞ্চায়ন হলো, সম্প্রতি এক সন্ধ্যায়, কলকাতা তপন থিয়েটারে। বিভাব নাট্য একাডেমির দ্বিতীয় পর্যায়ের সংস্থার ২৯ বর্ষে পদার্পণ শীর্ষক নাটকের উৎসবে অভিনীত ৯টি নাটকের মধ্যে একটি বিশিষ্ট নাট্যাভিনয় বললে ভুল হবে না।
স্বামী বিবেকানন্দের দেশ স্বাধীন করার তৎপর তৎকালীন ভূমিকা উল্লেখে এমন প্রামাণ্য নাটক ইতিপূর্বে দেখেছি ব’লে, মনে পড়ে না। আজকে বাঙ্গালির জীবনে যে মতিভ্রম উদ্দেশ্য বিহীন যাপন হয়ে এসে দাঁড়িয়েছে। তা থেকে চেতনা ফেরাতে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্বে তথ্যে বিবেকানন্দ প্রভাবিত স্বাধীনতার ইতিহাসের একটা ছোট্ট ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই নাটক লেখা হয়েছে।
চমৎকার মুহূর্ত নির্বাচনে, তীক্ষ্ণ সংলাপে, স্বল্প চরিত্রে এই নাটকটি লিখেছেন নাট্যকার সুভাষ বন্দ্যোপাধ্যায়। নাটকের হয়ে ওঠার মতো অল্প সাজেশন জ্ঞাপক মঞ্চ পরিকল্পক হলেন অভিজিৎ রায়। প্রয়োজনীয় আলোক চিন্তায় নাটকের উত্তাপ-উদীর্ণতায় তরুণ ঘোষ সফল। একইভাবে নাটকের ধ্বনি, সঙ্গীত আবহ চয়ন করেছেন অভিজিৎ রায়। রূপসজ্জা -দয়াময় মন্ডল। একটি স্টাইলাইজড অভিনয় প্রকৃয়ার প্রযোজনা।
মাপা ও বক্তব্যের সাথে অভিনয় প্রকৃয়াকে ঘনত্ব গভীরে নিয়ে যেতে, যা করণীয় ছিল, সেটুকুই করেছেন পরিচালক কমল রায়। ৭৫ বছর বয়সে এমন দুরন্ত অভিনেতা মফস্বলি থিয়েটারে কমই আছেন। একইভাবে সৌদামিনী চরিত্রে সোমা চ্যাটার্জী, সমস্ত এনার্জি ও আবেগ দিয়ে চরিত্রের দাবিগুলো পূর্ণ করেছেন।
বাড়ির চাকর বিধুভূষনের ভুমিকায় অসীম মুখার্জী সাবলীল চরিত্রায়ন করেছেন। স্বদেশী বিপ্লবী অনিল মিত্রের ভুমিকাটি রানা বিশ্বাস উপলব্ধিতেই উল্লেখিত করেছেন। খুবই ছোট ভূমিকায় পুলিশ কনস্টেবল দয়াময় মন্ডল যথাযথ ছিলেন। ইংরেজ আমলের থানার দারোগা, স্বদেশীদের সায়েস্তা করার ওস্তাদ বিজয় ব্যানার্জী চরিত্রে কমল রায়, নাটকের ভেতরের সাসপেন্স অনবদ্য ভাবে ধরে রেখেছিলেন। নাটকে বিজয় ব্যনার্জীর চেয়েও কুটিল জটিল ছুচন্দর চরিত্র নিতাই চক্রবর্তী। তার ছিচকে মিচকে স্বভাবের যাবতীয় হাবভাবপূর্ণ আচরণ চমৎকার ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সংস্থার শ্যামল চ্যাটার্জী। ছোট দেবানন্দ চরিত্রে অভিজিৎ রায় মানিয়ে যান।
সব মিলিয়ে আলো আবহ মঞ্চ অভিনয়ে নট নিকেতন সংস্থার নান্দীমুখ নাটকের ৯৮ তম মঞ্চায়ন তৃপ্তিদায়ক ছিল। ঋদ্ধ হয়েছেন অনেকেই এমন নাটক দেখার সৌভাগ্যে।