Tuesday, November 19, 2024
Tuesday, November 19, 2024
Homeনাটকথিয়েটারই বাঁচার রসদ উত্তরবঙ্গের প্রসেনজিৎ-এর কাছে

থিয়েটারই বাঁচার রসদ উত্তরবঙ্গের প্রসেনজিৎ-এর কাছে

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ১৪

উত্তরবঙ্গের নাট্যকর্মী প্রসেনজিৎ সেন থিয়েটারের মধ্যে খুঁজে পেয়েছে জীবনে বেঁচে থাকার এক আশ্চর্য আনন্দ। মঞ্চে বিভিন্ন নাটকে বিভিন্ন চরিত্র হয়ে ওঠার আনন্দ তার কাছে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কারের মত। এ পর্যন্ত ৮ বছর সেই আনন্দ নিয়েই থিয়েটারে জড়িয়ে আছে প্রসেনজিৎ।

কীভাবে থিয়েটারে প্রসেনজিৎ এর জড়িয়ে যাওয়া?…  এই প্রশ্নের উত্তরে সে জানিয়েছে, যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পাড়ার নাটকে অভিনয়ের ডাক পেয়েছিল, তখনই সে থিয়েটারের আনন্দে মজেছিল। সেই ষষ্ঠ  শ্রেণিতে পাড়ার নাটকের মহলায় যে আস্বাদন সে পেয়েছিল, তা ভুলতে পারেনি। তারপরেই আরো ভালো থিয়েটার করা বা ভাল থিয়েটারের সঙ্গে যুক্ত হতে চাওয়ার ইচ্ছেটা বেড়েছিল। আর সেই ইচ্ছা পূরণের জন্যই পরবর্তীতে গ্রুপ থিয়েটারে যুক্ত হয়েছিল প্রসেনজিৎ।

এক স্কুল বন্ধুর কাছে শহরের কিছু নাট্যদলের নাম জানতে চাইলে সেই বন্ধুর সূত্রে শিলিগুড়ি ঋত্বিক নাট্য সংস্থার নাম জানতে পারে। সেই বন্ধুই তাকে ঐ নাট্যদলের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। জীবনে প্রথম নাটক রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ” ডাকঘর ” নাটকে। ” ডাকঘর ” নাটকে কৈশোরকালে অনেকেই অভিনয় করে পাড়ার থিয়েটারে বা স্কুলের থিয়েটারে। কিন্তু সবাই তো পরবর্তী জীবনে থিয়েটার করে না। কিন্তু অমলকান্তির রোদ্দুর হতে চাওয়ার মত প্রসেনজিৎ অভিনেতা হতে চেয়েছিল। তাই শিলিগুড়ি ঋত্বিক নাট্য সংস্থার সাথে সে যুক্ত হয়েছিল।

এরপর এই নাট্যদলে একজন অভিনেতা হিসাবে সে নিজেকে চিনিয়েছিল। যার ফলে শিলিগুড়ি ঋত্বিক এর প্রায় সব নাটকেই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছে প্রসেনজিৎ।

অনেক নাটকে নানা রকমের চরিত্রে অভিনয় করলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প অবলম্বনে ” শাস্তি” নাটকে দুখিরাম চরিত্রটি তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় চরিত্রের তালিকায়। “শাস্তি” নাটকের মহলা দিতে দিতে প্রতিদিন সে দুখিরাম হয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল বলে জানিয়েছে প্রসেনজিৎ। চেষ্টা শুরু করেছিল দুখিরাম চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে উপলব্ধি করার। তার মনে হয়েছিল, একটি চরিত্রে অভিনয় করতে হলে সেই চরিত্রটিকে জানতে হয়, বুঝতে হয়। দুখিরাম চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রশংসাও মিলেছিল দর্শকের। তার কাছে সেটাই হয়ে উঠেছিল থিয়েটারে জড়িয়ে থাকতে চাওয়ার রসদ।

থিয়েটার করতে চাওয়ার এই যে ইচ্ছা, বা থিয়েটারে লেগে থাকার এই যে প্রচেষ্টা – সেটা তার কাছে জীবনের এক অনন্য আনন্দ। তার মনে হয়, মিলেমিশে একত্রিত হয়ে একটা প্রযোজনা মঞ্চস্থ করা বা থিয়েটারের কাজ করার এই যে সমষ্টিগত ব্যাপার – জীবনে তার একটা মূল্য আছে। নিজেকে অন্যের কাছে অন্যভাবে চেনানোর একটা মাধ্যম হল থিয়েটার – সেই আনন্দকে সামনে রেখেই থিয়েটারে জড়িয়ে আছে প্রসেনজিৎ।

প্রসেনজিৎ খুব স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে,  সে থিয়েটার করেই বেঁচে থাকার রসদ খুঁজে নিয়েছে। অন্য আর কিছু তাকে সেভাবে আনন্দ দেয় না। তার মনে হয়,  মহলাকক্ষে প্রবেশ করলেই জীবনের অন্য সব সমস্যা মাথা থেকে মুছে যায়।

অবশ্য থিয়েটার করার ব্যাপারে বাড়ির লোকজনের  উৎসাহ তার কাছে প্রেরণাশক্তি। তার মনে হয়, বাড়ির লোকজন উৎসাহ না দিলে থিয়েটার করার স্বপ্ন তার কাছে স্বপ্নই থেকে যেত। সেক্ষেত্রে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করে প্রসেনজিৎ।

তার অভিনীত নাটকগুলি হল : হাতবদল, তেজ,অন্তরিত, মাসান, রূপকথা নয়, সম্পাদক,  একজন লক্ষীন্দর, পাখি, স্বাধীনতা, শাস্তি ইত্যদি। কিন্তু অভিনয়ের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি নাটকে সে নির্দেশকের দায়িত্বও পালন করেছে।  পাখি, তোতাকাহিনীর পরে, আয়না, অসমাপ্ত দিনলিপি, শেষ ঘন্টায় নাটকগুলিতে প্রসেনজিৎ নির্দেশক হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেছে।

এই যে অভিনেতা থেকে নির্দেশক হয়ে ওঠা – এর পিছনে আছে থিয়েটারে নিজেকে চেনানোর জন্য তার অদম্য ইচ্ছা ও প্রচেষ্টা। তাই সে বলতে পারে, থিয়েটার করেই বাঁচতে চায় সে। থিয়েটারই তাকে প্রতিদিনের বাঁচার রসদ জোগায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular