বিজয়কুমার দাস
থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৩৫
রোমানা যথার্থই থিয়েটারে নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি। তার থিয়েটারের জগতে প্রবেশ এখনও তিনের চৌকাঠ পেরয়নি। অর্থাৎ যে বুদ্ধিদীপ্ত প্রজন্ম এখন থিয়েটার নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন সম্বল করে এগিয়ে চলেছে, রোমানা দে সেই নবীনতম প্রজন্মের প্রতিনিধি। কেন থিয়েটার নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন রোমানার চোখে! এ কি নিছক শখ মেটানো? নাকি উদ্দেশ্যহীন একটা সিদ্ধান্ত? না, উদ্দেশ্যহীন যে নয়, একথা জোর গলায় বলতে পারে রোমানা। তবে কেন থিয়েটারে? নিছক মজা? নাকি একটু অন্যভাবে সময় কাটানো? না, তাও নয়। রোমানা জানিয়েছে, থিয়েটার একটা শক্তিশালী শিল্পমাধ্যম। যে মাধ্যমে যুক্ত থেকে নানা চরিত্রে অভিনয়ের সূত্রে নিজেকে প্রতি মুহূর্তে আবিষ্কার করা যায়। একটা শিল্পমাধ্যমের সাহায্যে সমাজকে, মানুষকে সচেতন করা যায় বলেই থিয়েটার নিয়েই বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে রোমানা দে।
রোমানা এখনও কলেজছাত্রী। পড়াশুনো চালিয়ে যাচ্ছে। স্নাতক পর্যায়ের দ্বিতীয় বর্ষে ইংরাজি নিয়ে পড়াশুনো চলছে তার। না কিন্তু প্রায় বছর তিনেক আগেই থিয়েটারে যুক্ত হয়েছে তনয় দে ও পিঙ্কি দে’র একমাত্র সন্তান রোমানা। ন্যাশনাল স্কুল থেকে পাশ করে ফুলবাগানের গুরুদাস কলেজে ইংরাজি নিয়ে পড়াশুনো করা রোমানা পড়াশুনোর পাশাপাশি থিয়েটারটাও চালিয়ে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে তার মা বাবার পূর্ণ সম্মতি আছে বলে জানিয়েছে রোমানা। না,এতে তার কোন সমস্যা হয় না। পড়াশুনো আর থিয়েটার দুটোই সমান তালে চালিয়ে যাচ্ছে। তার বিশ্বাস, দুই ক্ষেত্রেই সে সফল হবে।
ছোটবেলা থেকেই তার থিয়েটারের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল। হয়তো সে নিজে যেমন নয়, থিয়েটারে সে অন্যরকম হয়ে উঠতে পারে বলেই থিয়েটার তাকে আকর্ষণ করেছিল। শুধু তাই নয়, থিয়েটারকেই জীবনে পেশা হিসাবে বেছে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নও সে দেখে। তার বিশ্বাস, সে পারবে।তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি থিয়েটারটা চালিয়ে যাচ্ছে। এমনই সবুজ একটা মন নিয়ে সবুজ দলের সঙ্গেই কাজ করে চলেছে সে। কলকাতায় যে কয়েকটি দল একেবারে তরতাজা নতুন প্রজন্মকে নিয়ে কাজ করে রাজেশ দেবনাথের সবুজ দল তার অন্যতম। এই দলের সঙ্গেই রোমানার থিয়েটার জীবন শুরু।

সবুজ দলের অভিনেত্রী সংগঠক নবমিতা ঘোষের সঙ্গে তার পরিচয় হয়েছিল। সেই সূত্রেই সবুজ দলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রোমানা। সবুজের They and my diary নাটক দিয়ে শুরু হয়েছে তার থিয়েটার জীবন।অবশ্য এখন ক্যান্ডিড থিয়েটারের সঙ্গে কাজ করছে রোমানা। এ পর্যন্ত যে সব নাটকে অভিনয় করেছে তার মধ্যে Trapped নাটকের অন্বেষা তার প্রিয় চরিত্র। রোমানা জানিয়েছে, এই নাটকের চরিত্রটির সঙ্গে সে নিজের জীবনের অনেক মিল খুঁজে পায়, তাই এই চরিত্রটি তার প্রিয় হয়ে আছে।
থিয়েটার জগৎ সম্পর্কে ধারণা নিয়ে জানতে চাইলে রোমানা জানিয়েছে,থিয়েটারের সঙ্গে দু বছর মাত্র জড়িয়ে থাকলেও ইতিমধ্যেই এই জগতের ভাল আর মন্দ দুটো বিষয়ই সে কিছুটা বুঝতে পেরেছে। তবু ভালকে নিয়েই এগোতে চায় রোমানা। শুধু তাই নয়, রোমানা বিশ্বাস করে, থিয়েটার করে বেঁচে থাকা সম্ভব। তবে হাঁ, শখ মেটাতে থিয়েটার করলে হবে না, তার জন্য সবার আগে এই শিল্পটাকে ভালবাসতে হবে।শুধু টাকা রোজগার প্রধান উদ্দেশ্য হলে হবে না। সে মনে করে, থিয়েটারের জগতে ভাল সুযোগ ও সঠিক জায়গা পেলে থিয়েটার করে স্বচ্ছন্দে বাঁচা যায়। অন্তত সেই স্বপ্নকে মুঠোবন্দী করেই এগিয়ে চলেছে রোমানা। এই স্বপ্ন দেখার সাহস সে দেখাতে পারে কারণ তার সবচেয়ে প্রেরণার জায়গা হল তার মা বাবা। এক্ষেত্রে তাঁদের পূর্ণ সমর্থন তার প্রেরণা।সে নির্দ্বিধায় জানিয়েছে, তার ইচ্ছাই তার মা বাবার ইচ্ছা।
এ পর্যন্ত রোমানার অভিনীত নাটকগুলি হল : They and my diary, গালি দিবেন না কাক্কা, মরলে মরো ছড়িয়ো না,আজাদি,Trapped,সেই রাত, মশা ও মানুষ। আগামীতে থিয়েটার নিয়ে বেঁচে থাকার স্বপ্নে বিভোর রোমানা দে এভাবেই এগিয়ে চলেছে থিয়েটারের পথে।