Tuesday, November 18, 2025
Tuesday, November 18, 2025
Homeনাটকথিয়েটারকে ভালবেসে থিয়েটারে মজে আছে আসানসোলের রাজেশ

থিয়েটারকে ভালবেসে থিয়েটারে মজে আছে আসানসোলের রাজেশ

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৩২

আসানসোলের ছেলে রাজেশ পাত্র। বিশ্বনাথ পাত্র আর মিনতি পাত্রর দুই ছেলেমেয়ে। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। আর রাজেশ আসানসোলের চর্যাপদ দলে থিয়েটার করে চলেছে থিয়েটারকে ভালবেসে। প্রায় এক দশক সে থিয়েটারে মেতে আছে। সে গর্বের সঙ্গে বলে,কলকাতার কোন দলে থিয়েটার করিনি। আসানসোলের ছেলে,আসানসোলের দলে অভিনয় করি।আসানসোল চর্যাপদ ছাড়া আর কোন নাট্যদলে অভিনয় করেনি রাজেশ। তবে কলকাতায় নিজের দলের হয়ে থিয়েটারের কল শো করে এসেছে বলে জানিয়েছে রাজেশ।

পড়াশুনোয় পদার্থবিদ্যায় সাম্মানিক। বার্ণপুরের সুভাষপল্লী বিদ্যা নিকেতন এবং আসানসোলের বিধানচন্দ্র কলেজে তার পড়াশুনো। দিদির বিয়ে হয়ে গেছে। আসানসোলে মা বাবার সঙ্গে থাকে রাজেশ। এই যে মাঝে মাঝেই দলের হয়ে কলকাতা বা অন্যত্র থিয়েটার করতে যেতে হয় তাকে, তাতে মা বাবার কোন আপত্তিও থাকে না।

ছোটবেলা থেকেই তার থিয়েটারের প্রতি একটা আগ্রহ ছিল।সেই ছোটবেলায় পাড়ায় থিয়েটার করার সূত্রে এই মাধ্যমের প্রতি তার একটা আগ্রহ জন্মায়। পরবর্তীকালে আসানসোল রবীন্দ্র ভবনে বিভিন্ন নাট্যদলের বেশ কিছু ভাল নাটক দেখার সূত্রে থিয়েটার করার আগ্রহটা জোরদার হয় তার। এছাড়া তার পরিচিত কয়েকজনের অভিনয় মঞ্চে দেখতে দেখতে একসময় তার মনে হয়েছিল, চেষ্টা করলে সেও পারবে থিয়েটার করতে। নিশ্চয়ই পারবে। সেই ইতিবাচক মনোভাব থেকেই সে খুঁজতে শুরু করে একটা থিয়েটারের দল।

সেই অনুসন্ধান থেকেই আসানসোল চর্যাপদ দলের সাথে তার যোগাযোগ ঘটে যায়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে আসানসোল রবীন্দ্র ভবনেই আসানসোল চর্যাপদ দলের “লজ্জা” নাটকটি দেখার সুযোগ হয় তার। নাটকটি দেখতে দেখতে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল রাজেশের। প্রায় গল্পহীন, ডকুমেন্টারি এই থিয়েটার তাকে ভিতর থেকে নাড়িয়ে দেয়। এরপর বার্ণপুর ভারতী ভবনে আবার এক বন্ধুর সাথে সেই নাটকটি দেখতে যায় রাজেশ। নাটকের শেষে বন্ধুর সাহায্যে চর্যাপদ দলের ঠিকানা,ফোন নাম্বার সংগ্রহ করে। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়,বরং শুরু।

ফোনে যোগাযোগ করে বন্ধুর সাথে রাজেশ গিয়ে হাজির হয় চর্যাপদের ঠিকানায়। তারপরই শুরু হয় রাজেশ পাত্রর থিয়েটার জীবন। এ যেন জীবনের নতুন অধ্যায়।

“এমনও হয়” নাটক দিয়ে শুরু হয়ে গেল তার থিয়েটার জীবন।এখনও পর্যন্ত সে চর্যাপদ দলেই অভিনয় করে চলেছে। অন্য কোন দলে অভিনয় করেনি। এই দলের প্রযোজনা “আমি শুধু ফোন করতে এসেছিলাম” নাটকের “সাতুর্ণ” (saturno) চরিত্রটি তার অভিনীত প্রিয় চরিত্র। যেহেতু চরিত্রটি কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং, তাই চরিত্রটি তার প্রিয়, এ কথা জানিয়েছে রাজেশ।কারণ শুধুমাত্র প্রথম দৃশ্য ছাড়া পুরো নাটকে চরিত্রটি দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। এটি একটি ম্যাজিশিয়ানের চরিত্র। তাই ম্যাজিকের দু একটি কৌশল তাকে আয়ত্ত করতে হয়েছিল।তাছাড়া এই চরিত্রটিই গল্পের পরিণতিকে চরমতম উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। বিভিন্ন দৃশ্যে রস এবং ভাবের সমন্বয়ে অভিনয় করতে করতে সে চরিত্রটিকে ভালবেসেছিল।

থিয়েটার জগৎ সম্পর্কে ধারণা কেমন?… এই প্রশ্নের উত্তরে রাজেশ পাত্র জানিয়েছে, অভিনয় একটা শিল্প মাধ্যম। তাই সৃজনশীলতাটাই মুখ্য হওয়া উচিৎ। সে অনুভব করেছে,থিয়েটার একটা সমন্বয় শিল্প।মঞ্চের উপস্থাপনের উপর সমগ্র বিষয়টি নির্ভরশীল, তাই সৃজনশীলতা বাধ্যতামূলক। তাই থিয়েটার শুধুমাত্র অভিনয় ও সামাজিক বার্তাকেন্দ্রিক নয়।সময়ের সাথে থিয়েটারের ভাষা বদলেছে,রূপ বদলেছে।  সেটাকে আয়ত্ব করতে পারলে তবেই থিয়েটারকে বোঝা যায় বলে সে জানিয়েছে।তাই যে কোন শিল্প মাধ্যম নিয়ে বাঁচতে চাইলে সেই শিল্পটাকে ভালবাসতে হবে – এটাই তার অভিমত। সে দেখেছে, থিয়েটারে এমন অনেক শিল্পী আছে, যারা থিয়েটার করেই বেঁচে আছে। অভিনয়ে যেমন ফ্রিল্যান্সার, তেমনি টেকনিক্যাল কাজকম্ম করে অনেকেই তো বেঁচে আছে। অন্যদিকে সরকারী অনুদানে অনেকেই নিরলসভাবে থিয়েটার করে বেঁচে আছে। তাই বাঁচতে চাইলে বাঁচা যায় বলে তার বিশ্বাস।

তার অভিনীত নাটকগুলি হল : এমনও হয়, এক মুঠো রবি, ঘোড়ার ডিম, অন্যরকম, লজ্জা, অমল তোতা ও আমরা, আম স্বত্ব, আমি শুধু ফোন করতে এসেছিলাম, মদন কাণ্ড, পুনরুদন, Don,t get me wrong, আন্তিগোনে, বন্ধ ডায়েরি। সবগুলিই চর্যাপদের প্রযোজনা। কয়েকটি নাটকে লাইভ মিউজিকের দায়িত্বও সামলেছে রাজেশ।

বাড়ির লোকজন তাকে উৎসাহ দেন। অভিনয়ের সঠিক মূল্যায়ন করেন তাঁরাই। বাড়ির লোকজনের উৎসাহ আছে বলেই রাজেশ পাত্র থিয়েটারে জড়িয়ে আছে বলে সগর্বে জানিয়েছে রাজেশ। তাই এই শিল্পটাকে ভালবেসে সে থিয়েটার করে চলেছে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular