থিয়েটারে এসে নিজেকে গড়েপিটে সমৃদ্ধ করেছে সমৃদ্ধি

- Advertisement -

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ১১

বাংলা থিয়েটারে যে সব নতুন মুখ উঠে আসছে সেই মুখের মিছিলে সমৃদ্ধি ব্যানার্জী এক উজ্জ্বল মুখ। শুধু উজ্জ্বল নয়, থিয়েটারটাকে সে যেভাবে আঁকড়ে ধরেছে তাতে ক্রমশ উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেছে সমৃদ্ধি। এর পিছনে আছে থিয়েটারের প্রতি তার গভীর আকর্ষণ এবং অবশ্যই অধ্যবসায়।

জন্মসূত্রে মধ্য কলকাতার রজনী গুপ্ত রো -এর মেয়ে সমৃদ্ধি। কিন্তু উচ্চ মাধ্যমিকের চৌকাঠ ডিঙনোর পর  বাবা – মায়ের সাথে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছিল পুরনো ঠিকানা। মধ্য কলকাতায় বেড়ে ওঠা সমৃদ্ধির পরিবার এখন নিউ ব্যারাকপুরে ভাড়া বাড়ির বাসিন্দা। নাটক নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য স্নাতকোত্তর পাঠক্রম শেষ করে মন – প্রাণ দিয়ে থিয়েটার করছে। নাটক নিয়ে পড়াশুনো করেছে, তাই নাটককেই রুটিরুজির উৎস হিসাবে বেছে নিয়েছে। এ পর্যন্ত ১৫ টা বছর জড়িয়ে আছে থিয়েটারে।

কেন সে থিয়েটারকেই জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিল?…  এ প্রশ্নের উত্তরে সমৃদ্ধি জানিয়েছে, থিয়েটারে আসা নিয়ে তার তেমন করে ভাবার অবকাশ হয়নি। আসলে পরিবারের মধ্যে একটা সাংস্কৃতিক চর্চার পরিবেশ ছিল। তার পরিবারের সবাই কোন না কোন শিল্পের সাথে জড়িয়ে, সেটাই সম্ভবত তার মনটাকে থিয়েটারমুখী করে তোলার কারণ। ছোট থেকেই সমৃদ্ধিরও মনে হত, কোন একটা শিল্পকর্মকে র্জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে নিতে হবে। তাছাড়া বাড়ির মানুষজনও বলতেন, শুধু লেখাপড়া করলেই চলবে না, নিজেকে তার পাশাপাশি কোন একটা শিল্পের সঙ্গে জড়াতে হবে। তাই পরিবারের মানুষজনের প্রেরণা ও পরামর্শ মতই থিয়েটারকে ভালবেসেছিল সমৃদ্ধি। অবশ্য মামাবাড়ির দিকের আত্মীয়রাও, যেমন দাদাই, দিদা,বড় মা, ছোট দিদা,বড় মামা, বড় মামি,ছোট মামা প্রমুখও সাহস জুগিয়েছেন সমৃদ্ধিকে।

বাবা প্রিয়তোষ ব্যানার্জীর নাটকের দল ছিল। সেই দলের নাম, ঐক্য নাট্য সংস্থা। সেখানেই থিয়েটারে হাতেখড়ি সমৃদ্ধির। সমৃদ্ধির মতে, মধ্য কলকাতার এক অনামী অখ্যাত দল ঐক্য নাট্য সংস্থাতেই থিয়েটার জীবনের শুরু।সাত  বছর বয়সে প্রথম মঞ্চে থিয়েটার করতে নেমেছিল সমৃদ্ধি। বাবা প্রিয়তোষ ব্যানার্জীর লেখা এবং নির্দেশনায় “ওরা আমরা” সমৃদ্ধির অভিনীত প্রথম নাটক। বেশ কিছু সময় বাবার দলে অভিনয় করলেও পরে কলকাতার বেশ কিছু দলের নাটকে মঞ্চে নেমেছে সমৃদ্ধি। সেই সমৃদ্ধি এখন কলকাতার “অনীক” এর মত এক সুসংগঠিত নাট্যদলের অভিনেত্রী। নাটক নিয়ে রবীন্দ্র ভারতী থেকে স্নাতকোত্তর পাঠও সম্পূর্ণ করেছে। সেই সমৃদ্ধি এখন অনীক দলের প্রযোজনা  দেবাশিস রচিত নির্দেশিত “আক্ষরিক” এর মত নাটকে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। “আক্ষরিক” নাটকের একটি দৃশ্যে অরূপ রায়ের মত অভিজ্ঞ অভিনেতার সঙ্গে জমিয়ে তুলেছে অভিনয়ের রসায়ন। আক্ষরিক নাটকের এই সুধারাণী চরিত্রটি তার কাছে অন্যতম প্রিয় চরিত্র।অবশ্য অভিনয় জীবনের প্রথম ভাগে ঐক্য দলের ” অসুরাধিকার ” নাটকের দুর্গা চরিত্রটিও তার প্রিয় চরিত্র। পরিবারে বাবা প্রিয়তোষ ব্যানার্জী ছাড়াও মেজ জ্যাঠা প্রাণতোষ ব্যানার্জীও উৎসাহ যোগাতেন সমৃদ্ধির থিয়েটারে।

আর মা কাকলি ব্যানার্জীর ভূমিকাও স্মরণীয়। যদিও মধ্যবিত্ত পরিবারের ঘরণী কাকলিদেবীর ইচ্ছে ছিল, মেয়ে একটা ভাল চাকরি করবে।  অথচ মেয়ে জড়িয়ে গেল থিয়েটারে। সমৃদ্ধির মনে হয়, তার বাবা থিয়েটারপ্রেমী হলেও মধ্যবিত্তের শিল্পচর্চাকে বিলাসিতা বলেই মনে করতেন ।  মেয়ে সমৃদ্ধি সেই মধ্যবিত্ত পরিবার থেকেই টিকে থাকার জন্য থিয়েটারকে বেছে নিলেও মা – বাবা আপত্তি তোলেননি। মেয়ের ইচ্ছেকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। এখন মঞ্চ ছাড়া ইন্টিমেট স্পেসেও থিয়েটার করছে সমৃদ্ধি। “অবয়ব” এবং “ঠিক আগের মুহূর্তে” তার ইন্টিমেট স্পেসের নাটক। এছাড়া মঞ্চে অভিনীত নাটকগুলি হল, বাঁচো সকলে, ওরা আমরা, অসুরাধিকার, আষাঢ়ে কেচ্ছা, সুখময়ের স্বাধীনতা,ঈশ্বর, The Island,  ঊরগ, আক্ষরিক। অনীক দলের নিয়মিত শিল্পী সমৃদ্ধিকে এই সময়ের থিয়েটারের আশ্চর্য যাদুকর দেবাশিস  “আক্ষরিক” নাটকে সুধারাণী চরিত্রে নির্বাচন করে। শুধু তাই নয় অনীক প্রযোজিত “ঊরগ” নাটকের নাট্যকারও সমৃদ্ধি। এ পর্যন্ত অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে “আক্ষরিক” নাটকের সুধারাণী চরিত্রটি তার প্রিয় চরিত্র অবশ্যই।

অভিনেত্রী সমৃদ্ধি ব্যানার্জী আর পিছন ফিরে তাকাতে চায় না। তার চোখ সামনের দিকে। থিয়েটারেই থাকতে চায়  সমৃদ্ধি। সে জানে, এ এক অনিশ্চিত জীবন তবু থিয়েটার নিয়ে পড়াশুনো করা সমৃদ্ধি আরো নাটকে আরো নতুন নতুন চরিত্রে অভিনয় করে সে নিজেকে প্রমাণ করতে চায়।  সমৃদ্ধি আরো সমৃদ্ধ হতে চায় থিয়েটার নামক শিল্পটিকে জড়িয়ে ধরে থেকেই।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -