থিয়েটার শ্রেয়সীর কাছে সামাজিক দায়বদ্ধতা

- Advertisement -

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৯

হাওড়ার উলুবেড়িয়ার ধুলাসিমলা গ্রামের শ্রেয়সী রায়ের থিয়েটারে আসার কোন কথাই ছিল না। লেখাপড়া ও শিক্ষাচর্চাই ছিল তার জীবন। শ্রেয়সী নিজেই জানত না বা ভাবতেই পারত না যে কখনো থিয়েটার নামক মাধ্যমটির সাথে তার গাঁটছড়া বাঁধা হবে। কিন্তু সেটাই হল। আর কয়েকটা নাটকে অভিনয় করেই শ্রেয়সী তার দক্ষতার প্রমাণ দিল। ফুলেশ্বর উদ্দীপন দলের অনুপ চক্রবর্তী একাধারে নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক এবং সর্বোপরি নাট্যদলের কর্ণধার। যেহেতু তিনি একজন প্রথিতযশা নাট্যকার, তাই মূলত তাঁর নিজের লেখা নাটকই তিনি প্রযোজনা করেন তাঁর দলে।

ফুলেশ্বর উদ্দীপন দলেই শ্রেয়সী প্রথম যুক্ত হয় ২০২১ সালে এবং সেই দলেই অভিনয় করে চলেছে। আসলে এই দলের সাথে তার যুক্ত হওয়ার একটা  কারণও আছে। শ্রেয়সী বালিকাবেলায় স্কুলে এবং কলেজবেলায় কলেজে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, নাটকে নানা ভাবে জড়িয়ে থাকত। শ্রেয়সীর কাকা ইন্দুশেখর রায় ফুলেশ্বর উদ্দীপন দলের সাথে গভীরভাবেই যুক্ত ছিলেন।অনেকটা সেই সূত্রেই ফুলেশ্বর উদ্দীপন তার চেনা অঙ্গণ।তবুও সেই দলে থিয়েটার করতে আসার কোন পরিকল্পনাই তার ছিল না। কিন্তু বিশেষ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবর্ত শিল্পী হিসাবে নির্দেশক অনুপ চক্রবর্তীর অনুরোধ গেল তার কাছে।  আসলে এই নাটকে অভিনয় করতেন দলের খুবই  নির্ভরযোগ্য অভিনেত্রী তৃপ্তি দাস। কিন্তু “দগ্ধ  সময়” নাটকের দ্বিতীয় মঞ্চায়নের আগেই তৃপ্তি দাস মিনার্ভা নাট্যচর্চা কেন্দ্রে সুযোগ পেয়ে যায়। দলের তো মাথায় হাত। অবশেষে দলের অভিনেতা ইন্দুশেখরবাবুর ভ্রাতুষ্পুত্রী শ্রেয়সীর কাছেই প্রস্তাব যায় নির্দেশকের কাছ থেকে।সেই ডাক ফেরাতে পারেনি শ্রেয়সী। তাই “দগ্ধ সময়” থেকেই তার থিয়েটার যাপন শুরু। ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী শ্রেয়সী ইগনুতে স্নাতকোত্তরের ছাত্রী।

তবে প্রথমেই যে চরিত্রে  তাকে মঞ্চে নামতে হয়েছিল, সেটি খল চরিত্র। সেটা নিয়েই চিন্তা ছিল শ্রেয়সীর। কিন্তু সে অনুভব করেছিল, অভিনয় মানেই তো তাই। অন্য একটা চরিত্র হয়ে উঠতে হয়। “দগ্ধ সময়” নাটকে ইলসা চরিত্র সম্পর্কে শ্রেয়সী জানিয়েছে, চরিত্র মানুষের ঘৃণ্যতা, বর্বরতা, নিষ্ঠুরতা সর্বোপরি পাশবিকতাকে তুলে ধরে। মানুষ নামক এই দ্বিপদ পশু যুগ যুগ ধরে নিজেকে পশুর থেকে আলাদা করে রাখতে চেয়েছে। কিন্তু যুগে যুগে হিটলারের বা কোন একনায়কের হাত ধরে মানুষ অনেক সময় নিকৃষ্ট পশু হয়ে উঠেছে। ইলসা চরিত্রটি তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই অভিনয় জীবনে প্রথম সুযোগ পাওয়া ইলসা  নামের খল চরিত্রটিই তার প্রিয়।

থিয়েটার বা থিয়েটার জগৎ নিয়ে তার ভাবনাটা একটু অন্যরকম। সে মনে করে থিয়েটার একটা মানুষের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য গঠনে সহায়ক। যে কোন চরিত্র হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে থিয়েটার মানসিক দৃঢ়তা বাড়ায়।যাঁরা অভিনয় করেন তাঁরা আর পাঁচজনের মত হলেও মঞ্চে অন্য মানুষ হয়ে যায়। অর্থাৎ প্রতিভার স্ফুরণ ঘটায় থিয়েটার। থিয়েটার মানুষকে জীবনকে চেনাতে সাহায্য করে। থিয়েটার করে কি বাঁচা যায়?… এ প্রশ্নের উত্তরে শ্রেয়সী স্পষ্ট বলেছে, থিয়েটার করে বাঁচা যায় কিনা সে পরীক্ষার এখনও সম্মুখীন না হলেও “থিয়েটার না করে বাঁচা যায় না” – এটা বোধগম্য হয়েছে।

বাড়ির মানুষজন তো উৎসাহ দেয়ই। সর্বোপরি এই দলেই অভিনেতা কাকা ইন্দুশেখর রায় আছেন, তাই সমস্যা নেই। শ্রেয়সীর বাবাও সঙ্গীতচর্চার সঙ্গে যুক্ত। হেমন্তকণ্ঠী গায়ক হিসাবে সুপরিচিত। বাড়ির অন্যান্যরা এবং কলেজের শিক্ষকরাও প্রেরণা যোগান।

তার অভিনীত সব নাটকই ফুলেশ্বর উদ্দীপনের প্রযোজনা। এটাকে সে নিজের দল মনে করে।তাই লেখাপড়া, শিক্ষাচর্চা সামলে অভিনয় করে। দগ্ধ সময় নাটকে যে শ্রেয়সী নিষ্ঠুর নাৎসী নারী ইলসা হতে পারে, সেই শ্রেয়সীই “চন্দ্রভাগার পারে” নাটকে রাণী আগাথোক্লেইয়া এবং “অনাগত” নাটকে বিচারকের ভূমিকায় মঞ্চ মাতাতে পারে। শ্রেয়সী এভাবেই ভালবেসে ফেলেছে থিয়েটার নামক মাধ্যমটিকে।

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -