Tuesday, November 19, 2024
Tuesday, November 19, 2024
Homeনাট্য সাহিত্যনাটিকা ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’- (শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আলেখ্য)

নাটিকা ‘তমসো মা জ্যোতির্গময়’- (শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে আলেখ্য)

অনুপ চক্রবর্তী

(Relax music)

যাজ্ঞবল্ক্যঃ মৈত্রেয়ী, আমার বানপ্রস্থে যাবার সময় হল। আমার যা কিছু সম্পদ ও বিত্ত তোমার ও কাত্যায়নীর মধ্যে বন্টন করে দিতে চাই। আমার দুই সহধর্মিণীর মধ্যে তুমি প্রিয়তর। বলো মৈত্রেয়ী, তুমি কি চাও?

মৈত্রেয়ীঃ ঋষিবর যাজ্ঞবল্ক্য, আপনি শুধু আমার স্বামী নন, আপনি আমার শিক্ষক। আমি অমৃত জ্ঞানের পিয়াসী,ঋষিবর। বিত্ত বা সম্পদের নয়। যে জ্ঞানের আকাঙক্ষার বীজ আপনি আমার মধ্যে রোপণ করে দিয়েছেন, যে জ্ঞানের আলোকরশ্মির সন্ধান আমি পেয়েছি আপনার কাছ থেকে, তাই শ্রেয় আমার কাছে। আমি সেই অমৃত জ্ঞানের অভিলাষী। বিত্ত, সম্পদ, ধন, ঐশ্বর্য আমাকে সেই অমৃত জ্ঞানের অন্বেষণের পথ থেকে বিচ্যুত কোরে ভোগের পথে নিয়ে যাবে। আমি চাই না হাঁটতে ভোগের পথে। আমি জ্ঞান চাই, প্ৰিয়, জ্ঞান চাই। উন্মীলিত হোক আমার জ্ঞানচক্ষু। আপনি আমাকে জ্ঞানের ঐশ্বর্য দান করুন, হে শিক্ষক।

(Suspense music)

জাদুকরঃ (প্রচণ্ড ভীত হয়ে) এ কি! আমার জাদুমন্ত্র ব্যর্থ হয়ে গেল কেন? এ কি হল! কেন আমি অকালে আম্র ফলন করাতে ব্যর্থ হয়ে গেলাম? আমার জাদুমন্ত্র কেন ব্যর্থ হয়ে গেল?

রাজাঃ জাদুকর, তুমি প্রতারক। তুমি বলেছিলে জাদুমন্ত্রবলে অকালে বৃক্ষে আম্র ফলন করাবে। কিন্তু কই সেসব তো কিছুই হল না। এই প্রতারণা করার জন্যে তোমাকে আমি কারারুদ্ধ করব।

জাদুকরঃ আমাকে ক্ষমা করুন রাজন। আমি মিথ্যাচার করেছি। সত্য গোপন করে মিথ্যা কথা বলেছি আপনাকে। তাই আমি অকালে এই আম্র বৃক্ষে জাদুমন্ত্রবলে আম্র ফলন করাতে ব্যর্থ হলাম। কৃপা করে আমাকে ক্ষমা করুন রাজন্।

রাজাঃ কী সত্য গোপন করেছ তুমি? কী মিথ্যা বলেছ?

জাদুকরঃ রাজন, আমি সত্য গোপন করে আপনাকে বলেছিলাম আমি একজন মহাস্থবির জ্ঞানীর কাছে অসময়ে আম্র ফলন করাবার জাদুবিদ্যা শিখেছি। প্রকৃত সত্য হল আমি এই বিদ্যা লাভ করেছি একজন চন্ডালের কাছে। আপনার কাছে এই সত্য গোপন করে মিথ্যা কথা বলার জন্য আমার বিদ্যা ব্যর্থ হয়ে গেল। (কাঁদতে কাঁদতে ) আমাকে ক্ষমা করুন রাজন্।

রাজাঃ মূর্খ, গুরুর কি জাত বিচার করতে হয়? শিক্ষকের কি জাত বিচার করতে হয়?। গুরু যে সে গুরুই। গুরুর কোন জাত হয় না। শিক্ষকের কোন জাত হয় না। সর্ব জাতের উর্ধে শিক্ষক। সবার উর্ধে শিক্ষক। কেননা তিনি যে আমাদের আঁধার থেকে আলোর দিকে নিয়ে যান ৷

(দেশাত্মবোধক সংগীত)

বিপ্লবী কল্পনা দত্তঃ মাস্টারদা, আমি কল্পনা দত্ত। আপনি আমাদের শিখিয়েছেন দেশকে ভালবাসতে। শিখিয়েছেন পরাধীন দেশের মুক্তির জন্যে ঝাঁপিয়ে পড়তে। প্রয়োজনে নিজের জীবন দিতে। আপনার দেখানো পথ আমরা অনুসরণ করেছি। আজ আপনি আমাদের মধ্যে নেই। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ আপনাকে নির্মমভাবে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। ফাঁসির মঞ্চে আপনি জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আপনি আত্মকেন্দ্রিক শিক্ষক হলে এভাবে নিজের বিসর্জন দিতেন না। আপনার কাছ থেকে আমরা পেয়েছি আত্মত্যাগের শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষক আপনি,মাস্টারদা। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দন্ডিত হয়ে আন্দামানে সেলুলার জেলের এই অন্ধকার সেলের মধ্যে বসে আমি কল্পনা দত্ত দেখছি আমাদের জ্যোতির্ময় শিক্ষক মাষ্টারদাকে। যাঁর মৃত্যু নেই। প্রণাম আমার শিক্ষক মাস্টারদা।

(Western music )

A School Principal: Dear Teacher:

I am a survivor of a concentration camp. My eyes saw what no man should witness:

Gas chambers built by learned engineers.

Children poisoned by educated physicians.

Infants killed by trained nurses.

Women and babies shot and burned by high school and college graduates.

So, I am suspicious of education.

My request is: Help your students become human. Your efforts must never produce learned monsters, skilled psychopaths, educated Eichmanns.

Reading, writing, arithmetic are important only if they serve to make our children more human.

(রবীন্দ্রসংগীতঃ অন্ধজনে দেহ আলো )

প্রথমঃ যদিও আমি নিজে একজন শিক্ষক, তবুও বলছি আমাকে একজন শিক্ষক দিতে পারেন? এই ভীষণ অন্ধকারে আমি খুঁজছি তেমন একজন শিক্ষককে। আমি খুঁজছি। প্ৰায় খুঁজে পাচ্ছি না। যাঁরা ছিলেন তাঁরা নেই বা তেমন কেউ কেউ থাকলেও বয়সের ভারে এখন শ্রান্ত। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকেও দেখতে পাচ্ছি না। তার মানে আমিও মনে হয় ঠিক শিক্ষক নই। তাহলে কে এগিয়ে এসে বলবে অবোধ কিশোর কিশোরী তরুণ তরুণীদের যে এটা সঠিক পথ নয়? কে বোঝাবে তাদের ধর্মের নামে হিংস্র গর্জনে হারিয়ে যাচ্ছে তাদের মনের কোমল রাগিণী? কে বোঝাবে তাদের ক্রমশ প্রস্ফুটিত হয়ে সৌরভ ছড়িয়ে দেওয়ার কথা তাদের যে হৃদয় কুসুমের তা বিষবাষ্প নির্গত করে একদিন বিনষ্ট করবে তাদেরও? কে তাদের মনের চোখেতে মাখিয়ে দেওয়া বিদ্বেষের কালো রঙ ভালবাসার আলো দিয়ে ধুইয়ে দেবে? সঠিক ইতিহাসচেতনা দিয়ে কে তাদের ভ্রান্তি দূর করে বোঝাবে ধর্ম নয়, জাতীয়তা নয়,মানবতার আসন সবার ওপরে?

দ্বিতীয়ঃ কে তাদের বলবে যখন মানবতার বিরুদ্ধে গভীর অপরাধ করা হয়,তখন সেই অপরাধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বাক্য উচ্চারণ না করে নীরব থাকাও অপরাধ? কে তাদের বলবে নীরব না থাকতে, যখন আখলাখ, আসিফা, পেহলুখান, তবরেজ আনসারি, জুনাইদি, আকবরদের পিটিয়ে পিটিয়ে খুন করা হয়, যখন অভিজিত, নিলয় নীল, ওয়াশিকুর, দাভোলকার, কালবুর্গি, গোবিন্দ পানসারে, গৌরী লংকেশদের গুলিতে গুলিতে ঝাঁঝরা করা হয়, যখন তালিবান আক্রমণে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায় নারীদের স্বাধীনতা,তাদের সর্বাঙ্গ বোরখায় মুড়ে দিয়ে বাড়িতে বন্দী করা হয় বা মুখটা অনাবৃত হয়ে গেলে রাস্তায় বসিয়ে তাদের গুলি করে হত্যা করা হয়?

সংগীতঃ তমসো মা জ্যোতির্গময়……

৷৷ সমাপ্ত ৷৷

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular