সুপর্ণা ভট্টাচার্য
‘বেলঘরিয়া উজান’ বাটানগর স্পোর্টস ক্লাবে মঞ্চস্থ করল, মৈনাক সেনগুপ্তের লেখা ‘উত্তরা কথা’। এ নাটকটি বড় প্রিয় আমার। খুব আগ্রহ ছিল, তুহিনা বসু সেন এই নাটকটি কী ভাবে উপস্থাপিত করে, সেটি দেখার। মঞ্চে ছিল উঁচু বার থেকে ঝুলিয়ে দেওয়া বিভিন্ন রঙের শাড়ি। মধ্যিখানে একটি ছোটো বর্গাকার রস্ট্রাম। মঞ্চে ছড়ানো ছিল বিভিন্ন রঙের শাড়ি বা উত্তরীয়। এই শাড়িগুলি নাটক চলতে চলতে বেশ বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন উত্তরা রূপী তুহিনা।
উত্তরার কথা আমরা খুব বেশি জানতে পারিনা। তার বিবাহ, তার মাত্র ছয় মাসের আনন্দ বিবাহ যাপনের পরেই কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের রণদুন্দুভি বেজে উঠেছিল। নবীন অভিমন্যুকে চক্রব্যূহের ফাঁদে ফেলে নির্মম ভাবে হত্যা করা এক বালিকার মনে কী ভীষণ প্রভাব ফেলেছিল, তা আমরা ক’জন আর অনুভব করেছি!
গর্ভস্থ সন্তানকে অনুভব করে তুহিনার অভিনয় প্রশংসনীয়। বিবাহের পূর্বের উচ্ছল উত্তরার অভিনয় আমার মনে দাগ কেটেছে। তুহিনার কন্ঠস্বর মধুর। বালিকার চঞ্চলতা আবিষ্ট করে রাখে। একটাই কথা বলার, একটু অভিব্যক্তি ধরে রাখার জায়গাগুলো একটু স্থায়ী করলে ভালো হত আরোও। আমরা যাকে পজ্ আ্যকটিং বলি। এপিসোড একটু দ্রুত একটা থেকে আরেকটায় চলে যাচ্ছে। আমাদের অনুভূতিও তাই তড়িৎ গতিতে আসা যাওয়া করছে।
আলোর ব্যবহার আরো মায়াময় পরিবেশ দাবী করছে। এত চড়া আলো এবং তা অর্থপূর্ণ নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। এই চড়া আলো চোখ এবং মনকে পীড়া দিচ্ছিল। দুপাশ থেকে ঝোলানো শাড়ি গুলোয় আলো ঝলমল করায় অভিনেত্রী মুখ মাঝে মাঝেই অন্ধকার হয়ে যাচ্ছিল। ফলে গভীর অভিব্যক্তি ধরা পড়ছিল না। এক কথায় নাটকটির যে পরিবেশে হওয়া উচিত, তা হয়ে উঠছিল না অনেকক্ষেত্রেই। থিয়েটারের জন্য আলো, আলোর জন্য থিয়েটার নয় – এই আপ্তবাক্যটি স্মরণে রাখার বিশেষ প্রয়োজন ছিল। আলো প্রক্ষেপণেও ফেড আউট বা ফেড ইন-এ আরও একটু যত্নশীল হতে হবে। আবহ খুব ভালো। প্রক্ষেপণও খুব সুন্দর। নিখুঁত।
তুহিনা বসু সেনকে আমার আন্তরিক ভালোবাসা এমন একটি নাট্য প্রযোজনা করার প্রয়াস করার জন্য। একা মঞ্চ দাপিয়ে অভিনয় করার জন্য যে এনার্জির প্রয়োজন তা তুহিনার একশো শতাংশ আছে। আরো শো হোক ‘উত্তরা কথা’র। আমরা উত্তরার কথা জানি। জানি মহাভারতের জটিল রাজনীতির কথা। জানি যুদ্ধ আদপে কিছুই দেয় না, ধ্বংস ব্যতীত। এক বালিকার ছোটো ছোটো স্বপ্ন গুলোর মৃত্যু এখনও হয়, নগ্ন ভাবেই হয়।