নিজস্ব প্রতিনিধি
বোস ক্রিয়েটিভ ও পারফর্মিং আর্টসের উদ্যোগে “একঝাঁক রোদ্দুর” নামে একটি ভিন্নধর্মী নাট্য উৎসব সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো অবন্তিকা কমিউনিটি সেন্টার, পিকনিক গার্ডেন, কলকাতায়। সহযোগিতায় ছিলো শুভজিৎ দে, কাকলী বোস, সৈকত মান্না, কৌশিক চ্যাটার্জী।
১৫ই আগস্ট এই উৎসবের উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব আশিস গোস্বামী, অভিনেতা সুদীপ মুখার্জি, নাট্যগবেষক ও ভাবনা থিয়েটার পত্রিকার সম্পাদক অভীক ভট্টাচার্য, নাট্য পরিচালক শুভজিত বন্দোপাধ্যায় এবং নাট্যকার অনির্বাণ সেন, অনুপম দাশগুপ্ত ও শৌভিক গাঙ্গুলি। বোস ক্রিয়েটিভ গুরু সম্মান প্রদান করে জয়ন্ত চক্রবর্তী, সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী ও শুভজিত বন্দোপাধ্যায় কে।
১৫, ১৬ ও ১৭ই আগস্ট, ২০২৫, তিনদিন ধরে প্রায় ১২টি নাট্যপ্রযোজনা অভিনীত হল এই উৎসবে। বোস ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টসের নিজস্ব প্রযোজনা নাইট মিরর ১, নাইট মিরর ২.০ এবং দ্য ডেট বিফোর ডেট ছাড়াও ছিল জম্মুর ভ্রাম্যমাণ অভিনেতা লাকিজী গুপ্তার দুটি নাটক – মা মুঝে টেগোর বনা দে ও বহুরুপীয়া। কসবা অনুপ্রাসের – অজাতশ্মশ্রু,

ছিল নট এ স্টোরি টেলার গ্রুপের – দুই পাখীর ইচ্ছেপূরণ, ডানকুনি থিয়েটার শাইনের – পোস্টমাস্টার, থিয়েটার ইন এডুকেশন এর প্রযোজনা – মৃত্যুর কুঁড়ি। বীক্ষণ নাট্যদল পরিবেশন করে তাদের নাটক – মগজ, নারকেলডাঙা স্বপ্নিলের প্রযোজনা – অমলের চিঠি, রঙ্গন তমলুক পরিবেশন করে নাটক – জিন্দা লাশ। এছাড়াও ক্লাউনিং পারফরম্যান্স করেন পুরুষোত্তম রায় এবং ভেন্ট্রিলোকুইজম বা কথা বলা পুতুল নিয়ে সম্রাট রায়। শেষ দিনে ছিল – চক্রপানি দেব ও তার গানের দল। বিভিন্ন ধরনের নাট্য প্রযোজনা, গান ও পারফরম্যান্সে রঙিন হয়ে উঠেছিল উৎসব প্রাঙ্গন। ছিল হস্তশিল্প, খাবার ও অন্যান্য সামগ্রীর স্টল। দর্শক উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
বোস ক্রিয়েটিভ অ্যান্ড পারফর্মিং আর্টসের কর্ণধার রাহুল বোস জানালেন, আগামী দিনে এই উদ্যোগের দ্বিতীয় পর্যায় ও আরও বিভিন্ন নাট্যদলকে আমন্ত্রণ জানানোর পরিকল্পনা রয়েছে। নিজেদের নতুন নাট্য নির্মানের পাশাপাশি তারা বন্ধু নাট্যদলগুলির জন্য খুলে দিতে চায় এক বিকল্প পরিসর। কোনো রকম আর্থিক সহায়তা ছাড়া, ধার করে এই ফেস্টিভ্যাল আয়োজন, পাশে পায়নি অনেক কে,টা নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ নেই, ওই যে রমা স্যার বলতেন থিয়েটার কারো জন্যে আটকাবে না।।
বোস ক্রিয়েটিভ এন্ড পারফর্মিং আর্টস এর পরীক্ষা মূলক তিনটি ভিন্ন ধারার নাটক দেখে নিজস্ব মতামত বিনিময় করেছেন অভিনেতা কৌশিক- ‘বোস ক্রিয়েটিভ অ্যন্ড পারফর্মিং আর্টিস্ট’ এর তিনদিন ব্যাপি নাট্যোৎসবের প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ই আগস্ট মঞ্চস্থ হল আয়োজক দলের নবতম প্রযোজনা নাইট মিরর-2 । নাটককার অনুপম দাশগুপ্ত-র দূর্দান্ত কাহিনী বিন্যাস ও সংলাপ বুনন মুগ্ধ করবেই। এই নাট্যের মূল অভিনেতা সৌমেন চক্রবর্তী, নামের প্রতি দারুণ সুবিচার করেছেন। শরীরকে অবিরাম দক্ষতায় চমৎকার ব্যবহার করেন তিনি। সংলাপহীন মুহূর্তকেও শরীরি ভাষ্যে তিনি বাঙ্ময় করে তুলেছেন যেভাবে – মুগ্ধতা দেয়। অসাধারণ সিনোগ্রাফি করেছেন শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় নাট্যের মুহূর্তগুলি কে নানা রঙে সাজিয়েছেন এবং তাঁকে এই কাজে আলোক পরিকল্পক সৈকত মান্না সঙ্গীতে বাদক হিসাবে সঙ্গত দেওয়ার মতো সাহায্য করেছেন। নাট্যে আবহ যথাযথ সঙ্গত দিয়েছে।সবশেষে পরিচালক রাহুল বোসকে জানাই অভিনন্দন। তিনি এই সবকিছুকে একসঙ্গে এনে যে নাট্য নির্মাণ করেছেন তা মনোমুগ্ধকর এবং বারবার দর্শককে এ নাটক দেখতে আকর্ষণ করবে।’
আর তাঁদেরই তৃতীয় নাটক the date before death দেখে শুভজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর অভিব্যক্তি প্রকাশ করে লিখেছেন – ‘Date before death নামের মধ্যেই একটা সময় ও সময়কে ছুঁয়ে যাওয়া রহস্য লুকিয়ে আছে। কার মৃত্যু ? কেনই বা মৃত্যু আর কি বা হলো সেই প্রাক মৃত্যু মুহূর্তে? অভিনয় ও পরিচালনা কৌশিক। ভাবনা রাহুল বোস। বাংলা থিয়েটারে পরীক্ষা মূলক কাজের নামে যে খিচুড়ি তৈরী হয় তার পুরো রেসিপি টাকে সরিয়ে রাহুলরা একটি কন্সেপচুয়াল জার্নি নির্মাণ করলো। তেমন কোনো ঘটনা নয়, এক তথাকথিত কিঞ্চিৎ মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষের ভালোবাসা টিকিয়ে রাখার লড়াই। যে ভালোবাসা আসলে চারিপাশে, আনাচে কানাচে পরে থাকে। যে আবার কেটে টুকরো করে ফেলে সব। সে মুক্ত আবার সে বন্দী। একটা মেন্টাল স্টেট কে এই নাট্যের প্লট বানিয়েছে কৌশিক। অভিনয় করেছে যথাযথ। সব থেকে ভালোলেগেছে রূপকের ব্যবহার। চরিত্র নির্মাণ থেকে অভিনয় বা ডিজাইন সব ক্ষেত্রেই টেক্ট কে সহযোগিতা করেছে মেটাফরের ব্যবহার। এই সব কাজ বাংলা রঙ্গমঞ্চ বারবার ফেলে দিয়েছে। পাকামো বলে খিল্লি করেছে তবে না ভাঙলে যেমন গড়া যায় না তেমন ই এই সব নতুন ভাবনাই এখনো এই শিল্পকে বিবর্তিত করবে।’