Saturday, August 2, 2025
Saturday, August 2, 2025
Homeআলোচনাশততম অভিনয়ে উত্তীর্ণ অনীকের সদরে আসছে মফস্বল

শততম অভিনয়ে উত্তীর্ণ অনীকের সদরে আসছে মফস্বল

দুলাল চক্রবর্ত্তী

কলকাতা অনীক সংস্থার ব্যবস্থাপনায় সদরে আসছে মফস্বল শীর্ষক অভিনয় পর্বের শততম প্রদর্শন অতিক্রান্ত হলো। একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে, তপন থিয়েটার অনীক সংস্থা পরিচালনা করতে শুরু করে। এর সাথেই, এই প্রেক্ষাগৃহে ও মঞ্চটি কিছুটা অন্যরকম ভাবে নাটকের জন্যে কার্যকরী হয়ে ওঠে। এছাড়াও যেহেতু অনীক, বিগত ২৫ বছর ধরে গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসব পরিচালনা করে আসছে। তাই মফস্বলি নাটকের সম্বন্ধে ছিল ভালবাসতে পারার ক্ষমতা আর অভিজ্ঞতা। ছিল সাংগঠনিক শক্তি। তাই সম্মিলিত ভাবে সকলকে বুকে জড়িয়ে নাটকের সম্প্রসারণের চেষ্টা অনেক দিন ধরেই চিল। সবই অর্জিত। বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শ গতভাবেই চলে আসছিল। যেখানে নাটক ছিল মানুষের সাথে মানুষকে মিলিয়ে মিশিয়ে দেওয়ার ম্যল সেতু। আর সেখান থেকেই শুরু হয়েছিল রাজ্যের বিভিন্ন জেলার নাটককে, ইচ্ছাকে, চেষ্টাগুলিকে অনীকের তরফে বুঝে নেবার উদ্যোগ। নাটকের উন্নয়ন জ্ঞাপক অর্থে এই চেনাজানা বাংলা নাটকের বেসরকারি ভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবার সূচনা করেছিল। কারণ এই উৎসবে মফস্বল দলের নাট্য যোগদান গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২৫ তম গঙ্গা যমুনা নাট্যোৎসবে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা শহরের ২৬টি কেন্দ্রে ২৮২টি দল তাদের প্রযোজনা নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিল। এখানেই মফস্বল থিয়েটারের জোরের জায়গা গুলির সন্ধান কাজের মধ্যে দিয়েই অবগতিতে উঠে এসেছিল।

আর এভাবেই মফস্বলি থিয়েটারের চলনের সাথে কলকাতার নাট্যচর্চার মধ্যে দেওয়া নেওয়া পর্বে এক বিচিত্র মিশ্রণ ঘটেছিল। কলকাতার মঞ্চ যেহেতু নাটকের পীঠস্থান ব’লে ভাবা হয়। হয়ে আসছে। কলকাতায় এসে সব দলই অভিনয় করতে চায়। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বাদ ছিলেন না। তিনিও বোলপুর বিশ্বভারতীর নাট্য ঘর থেকে বেরিয়ে মিনার্ভা মঞ্চে বিসর্জনের অভিনয় করতে লেডি রাণু মুখার্জীকে সাথী করেছিলেন। তাই, মফস্বল দলের উন্নত নাটক কলকাতার নাট্য দর্শকদের ভিন্ন আস্বাদ দিতে পারে, এই প্রসঙ্গটিও অনীকের সকলকে ভাবায়। আবার একটা কথা প্রচলিত ছিল সোমবারে নাটকের দর্শক কম হয়। এটার বিপ্রতীপে চললে কেমন হয়? ছিল সেই কৌতুকও। আর এইসব মিলিয়ে অনীক চেয়েছিল মফস্বলি নাটকের দলকে সামান্য সুযোগ সুবিধা দিয়ে তাদেরকে কলকাতায় এনে তপন থিয়েটারে নাটক মঞ্চস্থ করানো। অতএব একসময় অনীক ব্যবস্থা করতে উদ্যোগী হয়েছিল। তাই অংশুমান ভৌমিকের দেওয়া “সদরে আসছে মফস্বল, সাদরে ডাকছে অনীক”শীর্ষক নামকরণ, এই নাট্য ভাব বিনিময় অনায়াসেই শুরু হয়েছিল। ২০২৩ সালের ৮ মে থেকে ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই পর্যন্ত, দু বছর দু মাস সময়কালে, প্রতি মাসের প্রথম ও তৃতীয় সোমবার, প্রতিদিন দুটি করে মফস্বলি দল তাদের নাটকের অভিনয় করেছে, অনীকের উদ্যোগে তপন থিয়েটারে। যার সাড়া সার্বিকভাবে ধারণাতীত। শুরু থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত সর্বমোট ৫০ দিনে ১০০টি দল রাজ্যের বেশ কিছু জেলা থেকে এসে নাটক মঞ্চায়িত করেছে। যার মধ্যে ৭৫টি এমন নাট্য দল যোগদান করেছে। যে সব দলের শিল্পী কুশীলবেরা এই উদ্যোগে,এই প্রথম কলকাতার দর্শকদের মুখোমুখি হলেন।  

প্রাসঙ্গিক আরো কিছু প্রয়োজনীয় জ্ঞাতব্য তথ্য, এইসব নাটকের মধ্যে যুক্ত ছিল না, দার্জিলিং, দক্ষিণ দিনাজপুর, আলিপুর দুয়ার, ঝাড়গ্রাম ও মালদহ জেলার নাটক এবং নাট্যদল। এই সমগ্র মঞ্চায়নে, বেশি লিখিত নাটক মঞ্চে এসেছে, বিশিষ্ট নাট্যকার হিসাবে মনোজ মিত্রের ৪টি, মোহিত চট্টোপাধ্যায়ের ৪টি, তীর্থঙ্কর চন্দের ২টি, সুব্রত কাঞ্জিলালের ৪টি, সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়ের ৩টি, শিবংকর চক্রবর্তী ৩টি। এছাড়াও বিশিষ্ট নাট্যকার হিসাবে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, চন্দন সেন, নিরূপ মিত্র, পরান বন্দোপাধ্যায়, নভেন্দু সেন, শঙ্কর বসু ঠাকুর, অমিতাভ দত্ত, নটরাজ দাস, শ্যামলতনু দাশগুপ্ত, অমিত মৈত্র, স্বপন দাস, কুন্তল মুখোপাধ্যায় ড: অপূর্ব দে, ড: শিশির কুমার দাস, মৈনাক সেনগুপ্ত, তারাশঙ্কর বন্দোপাধ্যায়ে, শ্যামল চন্দ্র, সৌমেন্দু ঘোষ প্রমুখ নাট্যকার / সাহিত্যিকের লেখা নাটকও এই আয়োজনে মঞ্চস্থ হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন দলের নাট্যকার ও মফস্বলি নাট্য রচনায় উঠে আসছেন, এমন সম্ভাবনাময় অনেক নাট্যকারদের নিজেদের স্বাক্ষরিত প্রত্যয়িত হওয়ার আলোকিত নাটকের সংযোজনও এই শত নাটকের মধ্যে উদ্দীপনা ঘটিয়েছে। উল্লেখযোগ্য দল হিসাবে, পুরুলিয়া অন্যচোখে, বহরমপুর উজান, নৈহাটি বঙ্কিম স্মৃতি সংঘ, জলপাইগুড়ি কলাকুশলী, কালীতলা নাট্যদীপ, চুঁচুড়া সারথী, সায়ুধ পানিহাটি, নাট্যরূপা চিত্তরঞ্জন, গয়েশপুর মঞ্চসেনা, চন্দননগর সৃজন, যুগের যাত্রী, বর্ণকথা, ডুমুরদহ অনামী নাট্যম, কাকদ্বীপ নোনা থিয়েটার, চন্ডীতলা প্রম্পটার, উত্তরপাড়া উত্তরায়ণ, রানাঘাট সৃজক, বীরভূমের আনন, মধ্যমগ্রাম দর্পণ, টাকী কালিচারাল ইউনিট, জলপাইগুড়ি রূপায়ণ, শান্তিপুর উড়ান, থিয়েটার চন্দননগর, বহরমপুর অ আ ক খ, নৈহাটি রঙ্গসেনা, কোচবিহার স্বপ্নউড়ান ইত্যাদি যথেষ্ট প্রাচীন, অভিজ্ঞ, সুপরিচিত নাটকের দল, তাদের সাম্প্রতিক নাট্য ভাবনার পরিচয় দিয়ে গেছে এই ২৬ মাস ব্যাপি চলা নাটকের উৎসবে। পশ্চিমবঙ্গের নাট্যমেলায় এযাবৎ অভিনয় করতে পারেনি, এমন অনেক নাটকের দল অনীকের এই প্রচেষ্টায় কলকাতায় অভিনয় করে আনন্দিত এবং তৃপ্ত এ খবর অনিবার্যভাবেই উঠে এসেছে। এই ৫০ দিনের নাটকের অভিনয়ে অতিথি হয়ে ৪৮ দিন একজন করে এবং প্রথম শেষ, এই দু দিন দু’জন করে, সর্বমোট ৫২ জন নাট্যজন এসে সামগ্রিক কার্যকলাপ পরিদর্শন করে গেছেন। তাঁদের মধ্যে যেমন নাট্য সমীক্ষক, নাট্যকার, অভিনেতা নির্দেশক সকলেই ছিলেন। প্রত্যেকেই অনীক শ্রদ্ধা সম্মান জানিয়েছিল।

এদিন অতিথি হয়ে উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা নির্দেশক বিমল চক্রবর্তী এবং ইলোরা দলের নাট্যকার নির্দেশক অভিনেতা মলয় ঘোষ। এসেছিলেন নাট্য পর্যালোচক অংশুমান ভৌমিক ও রঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়। মঞ্চে সকলকে সম্মানিত করা হয়েছিল। দর্শকাসনে ছিলেন অজস্র নাটকের শিল্পী কুশীলব এবং নাটকের সাথে জড়িত গবেষক, নাট্যকার, নির্দেশক অভিনেতারা। এদিন অভিনীত হয়েছিল দুটি নাটক। পার্থ প্রদীপ সিংহ নির্দেশিত, লাভপুর দিশারী সাংস্কৃতিক চক্রের নাটক স্থলপদ্ম এবং স্বপ্নদীপ সেনগুপ্তের নির্দেশনায় কোচবিহার স্বপ্ন উড়ান দলের নাটক এখানে থেমো না। তপন থিয়েটারে তাই এদিন নাটকের জয় সূচিত উৎসব ভীড়ে ভরেছিল। আশা জাগিয়ে অনীক সংস্থা এই নাট্য সমন্বয়ে শুধু ভালবাসাই ফিরে ফিরে পায়।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular