নিজস্ব প্রতিনিধি
গতকাল সন্ধ্যা ৬টা থেকে টানা ২৪ ঘণ্টা ধরে পর পর ২৫ টি নাটকের অভিনয় কলকাতার তপন থিয়েটারে চলছে। চলবে আজ রাত আটটা পর্যন্ত। যখন এই নাটকের উৎসবের প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে, তখন রাত ৩টা। কলকাতার প্রথম সারির নাট্যদল মিউনাস অর্থাৎ মিতালি উৎসব নাট্য সংস্থা এই মহা যজ্ঞের আয়োজন করেছে। তাঁদেরই অভিভাবকত্বে বিগত ২০০৭সালে শুরু হয়েছিল এই নাট্য আয়োজন।
এই নাট্য আয়োজন নানান দিক থেকে অভিনবত্বে ভরা। ২৪ টি মঞ্চ নাটকের পাশাপাশি থাকে একটি পথ নাটক। সারাসাত্তির ধরে ম্লঞ্চে নাটকের পর ভোরের আলো ফোটার সাথে প্রেক্ষাগৃহের প্রাঙ্গণে থাকে এই পথ নাটক। এবারও যথারীতি এই শৈত প্রবাহকে উপেক্ষা করেই মানুষ দাঁড়িয়েছিল তপন থিয়েটারের সামনে। এই উৎসবে আর একটি খুব উল্লেখযোগ্য দিক এই উৎসবের ২৫ নাটকের নাট্যকারদের কে নিয়ে থাকে এক অভিনব আড্ডা। যথারীতি এই আড্ডা এবারেও ছিল। দুপুর তিনটে থেকে। এরপর। বিকেল পাঁচটায় হয় উদবোধন।
এখানে নাট্য প্রযোজনা হবার পর, পরিচালকের পক্ষ নাটকের থেকে একটি প্রশ্ন করা দর্শকদের কাছে। যিনি এই প্রশ্নের উত্তর সঠিক দেবেন। তাকে সেই উত্তরের একটা দেয়াল ঘড়ি উপহার দেয়া হয়।
এবার এই টানা ২৪ ঘন্টার একটি বিশেষত্ব আছে। এবার যে ২৫ নাটক অভিনয়ের আয়োজন কিরা হয়েছে তার সবকটিই মহিলা পরিচালিত নাট্য নির্মাণ। পশ্চিবাংলার জলাপাইগুড়ি তথা প্রায় সমস্ত জেলা থেকেই নাট্যদলগুলি এই উৎসবে সামিল হয়েছে।
একদিকে জেলার কাজের সুযোগার অপর দিকে শহরের কাজ জেলার মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। নাট্য কর্মীদের এই নাট্য জাগরণের মাধ্যমে একে অপরের সাথে এক মিলনতসবের আয়োজন হয়েছে। এমন কি এই নাটকের উৎসবে এবার বাংলাদেশ থেকেও নাটক করতে এসেছেন।
অর্থাৎ এই টানা ২৪ ঘন্টা ধরে সকাল সন্ধ্যে বিকাল রাত্রি, সারাটা দিন নাট্যকর্মীরা যেমন নাটক করে চলেছেন ঠিক তেমনিভাবে দর্শকও জেগে থেকেছেন এই প্রযোজনাগুলি দেখবার জন্য।
কলকাতার এই নাট্য সংস্থার কর্ণধার ও এই ভাবনার মাস্টার প্ল্যানার উৎসব দাস, খুবই আশাবাদী। তাঁর ভাবনা থিয়েটারকে টানা ২৪ ঘন্টা জাগিয়ে রাখা। বলা হচ্ছে এরকম আয়োজন ভারত তথা বিশ্বের কোনো দেশে দেখা যায় নি। এর আগে কলকাতার নাট্যদল ‘অন্য থিয়েটার’ আয়োজন করতো সারা রাত্তিরের নাটকের আয়োজন কিন্তু সেটা সন্ধ্যা থেকে ভোর। কিন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত ভোর করে পরদিন বেলা গড়িয়ে আবার আরো একটি সন্ধ্যা পার করে প্রায় ২৪ অতিক্রান্ত এই নাট্য যাপন সত্যি বাংলা থিয়েটারের এই গৌরবময় অধ্যায় হয়ে থাকবে নাট্য ইতিহাসে।
চলছে নাটক। চলছে নাট্য যাপন। সাথে থাকছে নেপথ্য শিল্পীদের অবিরত শ্রম দান। মঞ্চ উপকরন থেকে আলো, শব্দ সমস্ত টেকনিশয়ানদের জাগিয়ে রাখার নামও ২৪ ঘন্টা নাট্য উৎসব। অর্থাৎ উৎসব দাস ও মিউনাসকে সকলে এক বাক্যে কুর্ণিশ জানাচ্ছেন নাট্যমোদি মানুষ।
উৎসবের সূচনা হয়েছিল। ২৫ টি প্রদীপ প্রজ্বলনের মধ্য দিয়ে। অধিকাংশ দলের পরিচালকই এই উদবোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে একযোগে গান গেয়ে উৎসবের সূচনাকে সমৃদ্ধ করেছেন।
‘থিয়েটার জেগে থাক ২৪ ঘন্টা’ এই মন্ত্রেই চলছে এই উৎসব।