নিজস্ব প্রতিনিধি, ত্রিপুরা
সম্প্রতি সাফল্যের সঙ্গে অনুষ্ঠিত হল ত্রিপুরা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর আয়োজিত ‘রাজ্য ভিত্তিক নাট্যোৎসব’। প্রায় ৫বছর পর ত্রিপুরায় আবারও রাজ্যভিত্তিক নাট্য উৎসবের শুভারম্ভ হয় ২০ নভেম্বর ২০২৩-এ, আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে নাট্যমাধ্যমে জনসচেতনতার আহবান জানান ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। এনিয়ে সোশাল মিডিয়ায় তিনি লেখেন, ‘নাটক সমাজের দর্পণ’ এবং সমাজকে সঠিক দিশায় এগিয়ে নিয়ে যেতে নাটকের ভূমিকা অত্যান্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এবার এই নাট্যোৎসব নিয়ে নাট্য অনুরাগীদের মধ্যে উৎসাহ ছিল দেখার মতো। গত ২০নভেম্বর রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনের, ২নম্বর হল’এ শুরু হয়েছিল এই নাট্যোৎসব। চলেছিল ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত। দীর্ঘ ১১ দিন এই নাট্যোৎসব চললেও কীভাবে আনন্দ-উৎসবের মধ্যে দিয়ে দেখতে দেখতে সময়টা ফুরিয়ে গেল, সেটা নাট্য অনুরাগীরা টেরই পেলেন না। নাট্যাৎসবে মোট ২১টি নাটকের দলের উপস্থাপনা ছিল উৎসাহময় ও আবেগ প্রবণ। উপজীব্য বিষয় ভিত্তিক নাটকের গল্প, সমসাময়িক সামাজিক ব্যবস্থাকে সুষ্ঠ পরিবেশনার মাধ্যমে রঙ্গমঞ্চে তুলে ধরে প্রত্যেকটি নাটকের দলের নাট্যকার থেকে শুরু করে পরিচালক, প্রযোজক, অভিনেতা, কলা-কুশলীরা প্রত্যেকদিনই দর্শকদের মুগ্ধ করেছেন। সর্বোপরি আয়োজকদের নাট্যোৎসব আয়োজনে সুব্যবস্থা সবারই নজর কেড়েছে।
নাট্যোৎসবে ২টো নাটক ককবরক ভাষায় উপস্থাপনা করা হয়েছে। অন্য নাটকগুলি মঞ্চস্থ হয় বাংলা ও মিশ্রিত ভাষায়- যারমধ্যে ৪/৫টি নাটকে ত্রিপুরার কথ্য বাংলার ব্যবহারও দেখা গেছে। নাট্যোৎসবে রাজ্যের বিভন্ন জেলা থেকে আসা দলগুলোর মধ্যে আগরতলার নাট্যদল ছিল সংখ্যায় বেশি। প্রত্যেকসন্ধায় দুটো নাটকের মাঝে রাখা হয়েছিল ‘ডিরেক্টরস মীট’। যেখানে নাটকের নির্দেশকদের সঙ্গে দর্শকবৃন্দ ও নাট্যপ্রেমীরা আলাপচারিতায় মেতে ওঠেন।
রোজ বিকেলে আনন্দময় পরিবেশে থিয়েটার চর্চায় মগ্ন হতে দেখায় শিল্পীদের। একে ওপরের সঙ্গে অভিজ্ঞতার আদান-প্রদানের পাশাপাশি পরিচিতির মাধ্যেমে বন্ধুত্বের সাঁকো তৈরি করে আগামীদিনে নাট্যচর্চাকে যাতে আরও সামনের দিকে সফলতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার তত্ত্ব তালাশও হয়। এই উৎসবে একাধিক শিল্পী, বিভিন্ন দলের নাটকে অভিনয় করেছেন, যেটা একদিকে পেশাদারিত্বের লক্ষণ। তবে আবার আরেকদিকে থিয়েটার চর্চায় নবপ্রজন্মের সংলগ্নতার অভাবও বেশ বোঝা গিয়েছে এই নাট্যোৎসবরে দিনগুলিতে।
তবে, একেকটি নাটকে নাচ, গান, মাইম, পুতুল, দেশী ও বিদেশী বাদ্যজন্ত্রের প্রয়োগ এবং মঞ্চসজ্জা ও বিন্যাস ছিল দেখবার মতন। প্রায় ৪-৫টি শো হাউজফুল হতেও দেখা গিয়েছে। তাছাড়া, বেশিরভাগ দর্শকরা প্রত্যেকটা নাটক শুরু থেকে শেষ অবধি উপস্থিত থেকে নাটকগুলি উপভোগ করেছেন। বিশেষ করে জাতি-ধর্ম ভিত্তিক নির্যাতন, অধিকারের লড়াই ও সামাজিক সংকটের রূপায়ণ মঞ্চস্থ করে বেশ কয়েকটি নাট্যদল দর্শকদের আলাদা করে নজর কেড়ে নিয়েছে।