নিজস্ব প্রতিনিধি
গতকাল বিরাটীর রব-অরব নাট্যগোষ্ঠী আয়োজিত প্রাঙ্গণ নাট্যোৎসব ২০২৩ সাফল্যের সাথে শেষ হল। ২০০৬ সাল থেকে উত্তর দমদম সাধারণ পাঠাগারে শুরু হয়েছিল এই প্রাঙ্গণ উৎসব। টানা সতের বছর ধরে তাঁরা এই অন্তরঙ্গ উৎসবের আয়োজন করে আসছেন। রব-অরব নাট্যগোষ্ঠী রব অর্থাৎ শব্দ এবং অরব অর্থাৎ নিঃশব্দ। নাট্যের এই দুই দিকের অর্থবহনকারী দলটি অবশ্য নিঃশব্দে অনেক বর শব্দের উপস্থাপন করে ফেলেছেন। আর তাই-
উত্তর দমদম সাধারণ পাঠাগারে এই দুদিন ছিল চোখে পড়ার মতো দর্শক সমাগম। গত ৯ ডিসেম্বর ছিল এই নাট্যোৎসবের সূচনা। এই উৎসব সংস্কৃতি বিরাটীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবে। রব-অরব নাট্য দল অঞ্চলের মানুষের কাছে নাট্যচর্চার কথা দুয়ারে দুয়ারে পৌঁছে দিচ্ছেন। এই উৎসবে সামিল হবার জন্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে তাঁদেরকে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। আর তার ফলস্বরূপ উৎসবের দুই নাট্য সন্ধ্যায় বেশ কিছু দর্শক উপস্থিত থেকে নাটক দেখেছেন। দলের ছেলেমেয়েদের অক্লান্ত শ্রমের বিনিময়ে গড়ে ওঠা এই উৎসবে কোনো সরকারী অর্থানুকূল্য ছিল না। ছিল সাধারণ মানুষের ভালোবেসে দেয়া সামান্য অর্থ সাহায্য। এই নাট্য সমাহারে কোনোও প্রবেশ মূল্য রাখা হয়নি।
নাট্যোৎসবের শুরুর দিনে বাংলার এক প্রবীণ কৃতি নাট্যকর্মী সুপ্রকাশ বসু মহাশয়কে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংবর্ধনা তুলে দেন যাদবপুর ব্যতিক্রম নাট্যগোষ্ঠীর পরিচালক দেবা রায়। এরপর সুপ্রকাশ বাবু তাঁর নাট্য চর্চার গুরু বাদল সরকারের কথা স্মরণ করে দুটি অসামান্য নাটকের গান পরিবেশন করেন।
প্রথমদিন এই উৎসবে অভিনীত হয়েছে যাদবপুর ব্যতিক্রম প্রযোজিত শবর রায়ের নাটক ‘কালোব্যাগ’। দ্বিতীয় দর্শন সুদীপ নাট্য আকাডেমী প্রযোজিত ‘স্বপ্নগোল ও রংরুটে’। তৃতীয় দর্শন ছিল ডাকঘর প্রযোজিত ও দিবাকর চক্রবর্তী নির্দেশিত ‘আচ্ছে দিন ও স্বপ্নের বাজেট’। তিনটি নাটকই সময়ের কথা বেশ বলিষ্ঠ স্বরে উচ্চারণ করেছে। নাটক শেষে দর্শক নিজে থেকে এসে কলাকুশলীদের, তাঁদের ভালো লাগার কথা বিনিময় করেছেন।
দ্বিতীয় দিনে প্রথম দর্শন ছিল ড্রাফার পারফর্মিং গ্রুপের প্রযোজনায় ‘বৃহন্য চেতন’। দ্বিতীয় নাটক চতুর্দোলা নাট্যসংস্থা প্রযোজিত ‘সঞ্জীবনী সুধা’ যার পরিচালনায় ছিলেন রীনা দাশগুপ্ত। এরপর আয়োজক সংস্থা রব-অরব’এর নাট্য নিবেদন ‘শ্রী বগলা ডট কম’। এদিনও মানুষের সমাগম ও প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মতো।
আজ এই ডিজিটাল সংস্কৃতির আবহে এইভাবে হাতে হাতে ধরে বিভিন্ন নাট্যদলগুলির সাথে বন্ধুতার সংযোগ স্থাপন করে তাঁরা যে নাট্য উৎসব করে আসছেন, তা এই দুই সন্ধ্যায় বেশ দেখা গেছে। প্রবেশ পথের নীচে লিখে দেয়া হয়েছে ‘নির্দ্বিধায় প্রবেশ করুন’। এই শব্দবন্ধে পরিস্কার হয় কোনো অর্থমূল্য মানুষকে নাটক দেখানোকে যেন অন্তরায় না হয়। কারণ নাট্য
শিল্প মানুষের জন্য, মানুষের থিয়েটার, কোনও পণ্য নয়। উৎসব শেষে সংস্থার অন্যতম কর্ণধার বিশ্বনাথ চ্যাটার্জী বলে এই উৎসব সম্ভব হয়েছে, অঞ্চলের মানুষের ঐকান্তিক সহযোগিতায় ও উৎসবে আমন্ত্রিত নাট্যদলগুলির পারস্পরিক বন্ধুতায়। তাই তিনি তাঁদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রতি তিনমাস অন্তর মাসের দ্বিতীয় রবিবার করে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। সেই হিসেবে ২০০৬ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১৭ বছরে পূর্ণ করে ১৮ বছরে পদার্পণ করেছে, গত ১৭ বছরে এখানে ৬৪ টি দল এই আয়োজনে সামিল হয়েছে। এইখানে যোগদানের জন্য কোন বিনিময়ের পন্থা অবলম্বন করা হয় না। এর প্রমাণ স্বরূপ বিশ্বনাথ বাবু উল্লেখ দেন ‘আমরা এই ৬৪/৬৫ টি দলের মধ্যে ডাক পেয়েছি দশটি দল থেকে, সেটা তাঁদেরই ঐকান্তিক আগ্রহের কারণে।’