নিজস্ব প্রতিনিধি
রাজশাহী (বাংলাদেশ) – সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) দ্বিতীয়বারের মতো সফলভাবে অনুষ্ঠিত হল আনর্ত নাট্যমেলা-২০২৪। দুই দিনব্যাপী এই অনুষ্ঠান গত সোমবার (২৯ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয়। নাট্যমেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
মেলায় মঞ্চস্থ হয় দেশনাটক প্রযোজিত নাটক ‘পারো’, ভারতের মধ্যমগ্রাম নৃত্যবিতানের প্রযোজনা ‘ওয়ান ফ্রাইডে মর্নিং’, আরণ্যক নাট্যদল প্রযোজিত ‘কহে ফেসবুক’, নাট্যদল অনুস্বর প্রযোজিত ‘মূল্য-অমূল্য’।
এছাড়া পালানাটক ‘কালিন্দীর গীত’ মঞ্চস্থ করে গাইবান্ধার সারথি থিয়েটার। পথনাটক ‘সুনাগরিকের সন্ধানে’ মঞ্চস্থ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যদল অনুশীলন এবং রাবি নাট্যদল সমকাল মঞ্চস্থ করে ‘বহমান’।
বাংলাদেশের থিয়েটার বিষয়ক পত্রিকা ‘আনর্ত’-এর সম্পাদক ও নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান রাজু এ প্রসঙ্গে জানান, এবারের নাট্যমেলায় বাংলাদেশ-ভারত থেকে প্রায় দু’শতাধিক নাট্যজন এ মেলায় অংশ নিয়েছিল। দুই দিনব্যাপী এই নাট্যমেলায় পথনাটক, পালানাটক ও মঞ্চনাটক মিলে মোট ৭টি নাটক সফলভাবে প্রদর্শিত হয়। যেখানে চারটি নাটক টিকিট ছাড়ায় দর্শকদের দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। তবে অন্য তিনটি নাটকের জন্য টিকিট রাখা হয়েছিল।
নাটকের মঞ্চায়নের পাশাপাশি এবারে নাট্যমেলায় নাট্যচর্চারও আয়োজন করা হয়েছিল। এছাড়াও মেলায় ছিল নাটকের পত্রিকা, নাটকের বইয়ের স্টল। মেলার আয়োজনে ছিল তিনটি বিষয়ভিত্তিক বৈঠক। যার শিরোনাম- ‘নাট্য আড্ডা: নাট্যচর্চায় নাটকীয় স্মৃতিচারণ’, ‘নাট্যচর্চার পঞ্চাশ বছর: কী পেয়েছি, কী পাইনি’, ‘থিয়েটারের কাগজ: যতরকম দায়’।
মাটিবর্তী ভাবনায় আনর্তবাড়ি, মঞ্চ এবং জ্যামিতিক আঙ্গিকে মেলার স্টলসমূহ বিন্যাস করা হয়েছিল বলে সংবাদ মাধ্যমকে জানান ‘আনর্ত’ পত্রিকার সম্পাদক তথা নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক রহমান রাজু।
তিনি আরও জানান, এবারের আনর্ত নাট্যমেলায় থিয়েটারের ‘প্রত্যক্ষ’ ও ‘নেপথ্য’ শাখায় তিনজনকে আনর্ত স্বীকৃতি (পুরস্কার) দেওয়া হয়েছএ। যাত্রাশিল্পে প্রত্যক্ষ অবদানের জন্য পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জ্যোৎস্না বিশ্বাসকে। যিনি যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাসের স্ত্রী এবং চলচ্চিত্র নায়িকা অরুনা বিশ্বাসের মা। তিনি দুই হাজারের বেশি যাত্রায় সরাসরি অভিনয় ও ৩০টিতে প্রত্যক্ষ অবদান রেখেছেন।
থিয়েটারের নেপথ্য শাখায় পুরস্কার দেওয়া হয়েছে বাবুল বিশ্বাসকে। তিনি বাংলাদেশ থিয়েটার আর্কাইভস-এর কর্তা। নেপথ্যে থেকে তিনি বাংলাদেশের থিয়েটার সংশ্লিষ্ট সকল ডকুমেন্টস সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিশ্ব দরবারে পরিচিতির কাজটি করে চলেছেন।
এছাড়াও পুরস্কার দেওয়া হয়েছে আবু তাহের মহাশয়কে। তিনি দুই হাজারের বেশি নাটক ও যাত্রায় লাইটিং করেছেন। তিনি তাঁর নিজের জীবন ও সংসারকে উজাড় করে দিয়ে আলোর কাজ করেছেন। কিন্তু, এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এই আনর্ত স্বীকৃতিতে পুরস্কার প্রাপকদের – একটি ক্রেস্ট, সনদপত্র ও নগদ ১০ হাজার টাকা। মনোনীতদের পুরস্কার প্রদান করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার।
দুইদিনের এই নাট্যমেলায় বিভিন্ন পর্বে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, একুশে পদকজয়ী নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার, অধ্যাপক মলয় ভৌমিক, অধ্যাপক আব্দুস সেলিম, অভিনেতা তারিক আনাম খান, অভিনেতা ও নাট্যনির্দেশক মোহাম্মদ বারী, নাট্যকার মাসুম রেজা, অভিনেতা ও নির্মাতা সালাউদ্দিন লাভলু, অভিনেতা ও নির্মাতা গাজী রাকায়েত, অভিনেত্রী ওয়াহিদা মল্লিক জলি, বন্যা মির্জা, অরুণা বিশ্বাস এবং থিয়েটার বিষয়ক বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক ও সংশ্লিষ্টরা। ভারত থেকে এসেছিলেন নাট্য গবেষক অংশুমান ভৌমিক, মলয় মিত্র ও সঞ্চয়িতা বসু প্রমুখ।