থিয়েটারের স্বপ্ন দু-চোখে নিয়ে বেঁচে থাকতে চায় শুভম সাহা

- Advertisement -

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম : পর্ব ২

বাংলা থিয়েটারের নবীন উজ্জ্বল মুখগুলোর অন্যতম হল শুভম সাহা। থিয়েটারে যে নতুন প্রজন্ম নানা নাট্যদলে ইতিমধ্যেই বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শকের নজর কেড়েছে, গড়িয়ার অশনি নাট্যম দলের শুভম তাদের অন্যতম। থিয়েটার  যে একটা লড়াই এবং থিয়েটারে যে লড়াই এর মাধ্যমে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় – সেই সত্যে অবিচল থেকে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে শুভম সাহা।

২০১৪ সালে শুভম কোন নাট্যদলের নাটক দেখে একটি থিয়েটার হলে বসে, এবং ক্রমশ সেই নাট্যদলের সাথে জড়িয়ে পড়ে। সেই নাট্যদল হল অশনি নাট্যম। যে দলটি ২০২৪ এ ৫০ এর চৌকাঠ ছুঁয়েছে। শুভম যখন সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে  তখন থেকেই তার থিয়েটারের সাথে পরিচয়। তাই শুভম জানিয়েছে, সেই সময়ে দাঁড়িয়ে “কেন থিয়েটার করতে এলাম” এ নিয়ে ভাবিনি। বরং থিয়েটার করতে করতে শুভম বুঝতে পেরেছে, তার কাছে পরিষ্কার হচ্ছে জীবনের উদ্দেশ্য কী হওয়া উচিৎ বা কী করা উচিৎ বা কীভাবে ভাবা উচিৎ। সেই ভাবনার বৃত্তে ঘুরপাক খেতে খেতে শুভম থিয়েটারেই জড়িয়ে পড়েছে গভীরভাবে।

তার থিয়েটারে জড়িয়ে পড়ার গল্পটা এইরকম : শুভমের স্কুলের বন্ধু এবং সেই বন্ধুর মা – বাবাও অশনি নাট্যম নামক নাট্যদলের সদস্য এবং অভিনয়ের সাথে যুক্ত। শুধু তাই নয়, সেই দলের বেশ কয়েকজন শুভম এর বাবার খুব পরিচিত। সেই সূত্রেই অশনি নাট্যম নামক গড়িয়ার এই নাট্যদলের সাথে শুভম এর শুভ যোগাযোগ ঘটে যায় এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে গাঁটছড়া দৃঢ় হয়।

এই অশনি নাট্যম দলেই শুভম প্রথম থিয়েটারে অভিনয় করেছিল। সেই নাটকের নাম ছিল ” বিচারের বেড়াজাল”- আর  সেই নাটকে অভিনয়ের পরেই নাটকের বেড়াজালে জড়িয়ে গেল শুভম। এই অশনি নাট্যম থেকে তার থিয়েটারের পথে পা রাখা শুরু হলেও থেমে যায়নি শুভম। আরো কিছু নাট্যদলে অভিনয়ের সুযোগ এসে গেল তার জীবনে। অশনি নাট্যম থেকে শুরু করে সন্তোষপুর মনন, বাঁশদ্রোণী অনুপ্রাণন, নাট্যভূমি, যাদবপুর মন্থন, বারাসাত রমেশপল্লী থিয়েটার গ্রুপ,মাচার মানুষ এবং হাতিবাগান সংঘারাম নাট্যদলেও বিভিন্ন নাটকে অভিনয় করেছে। আর এ সবের মাঝেই ২০১৮ – ২০২১ এই সময়কালে মিনার্ভা রেপার্টারি থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়ে থিয়েটারচর্চার ভিত্তি সুদৃঢ় করে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে শুভম।

এ পর্যন্ত যে কয়েকটা নাটকে  অভিনয় করার সুযোগ হয়েছে শুভম এর এবং যে সব চরিত্রে সে অভিনয় করেছে, তার সবগুলি চরিত্রই তাকে অভিনেতা হিসাবে পরিণত করে তুলেছে বলে শুভম মনে করে। সেই পাথেয় সঙ্গে নিয়েই শুভম থিয়েটারের পথে এক অক্লান্ত পথিক হিসাবে কাজ করে চলেছে। শুভম অবশ্য মনে করে, এইসব চরিত্রগুলি তাকে শুধু “অভিনেতা” হয়ে উঠতেই সাহায্য করেছে তা নয়- ” মানুষ ” হয়ে উঠতেও সাহায্য করেছে।

বেশ কিছু নাটকের বেশ কিছু চরিত্র তার কাছে “স্বপ্নের চরিত্র” হয়ে আছে। লেখক সমরেশ বসুর বিখ্যাত গল্প  অবলম্বনে “আদাব” নাটকের সূতামজুরের চরিত্র, মাচার মানুষ প্রযোজিত “মৃত্যুদেশ” নাটকের ইদ্রিশ চরিত্র, “একটা ডিবলু ডিলু টিমটু টিলু ডুব” নাটকের “অক্টোপাস” সেই সব স্বপ্নের চরিত্রের অন্যতম। অথচ এই চরিত্রগুলির কোনটির সঙ্গেই শুভম নামক তরুণ অভিনেতাটির জীবনের যোগ ছিল না। এক সাক্ষাৎকারে শুভম জানিয়েছে, এই চরিত্রগুলো “ব্যক্তি শুভম” এর থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, চরিত্রের দিক থেকে, বয়সের দিক থেকে, ক্লাসের দিক থেকে আর্থ সামাজিক অবস্থানের দিক থেকে- তাই এই চরিত্রগুলি নির্মাণে তাকে নিজেকে অনেক বেশি করে খুঁড়তে হয়েছে। আর সে জন্যই এইসব চ্যালেঞ্জিং চরিত্রগুলি তাকে “অভিনেতা” হয়ে উঠতে সাহায্য  করেছে। শুভম বিশ্বাস করে, একটা চরিত্র হয়ে উঠতে  হলে নিজেকে খুঁড়তে হয়।

থিয়েটার করে কি বাঁচা যায়?…  এই প্রশ্নের উত্তরে শুভম বলেছে, এই “বাঁচা” টা এক একজন মানুষের এক এক রকম।যেটা ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গীর ওপর নির্ভর করে। তবে শুভম মনে করে, থিয়েটারে অভিনয়ের পাশাপাশি আলো,আবহ এবং আরো আনুষঙ্গিক মিলিয়ে এবং কোন কাজকে ছোট মনে না করে বাঁচতে চাইলে দিনে দু বেলা খাওয়ার মত অর্থ উপার্জন সম্ভব।যদিও বিভিন্ন মানুষের জীবনের চাহিদা এবং সঙ্কট বিভিন্ন রকমের তবুও “বাঁচা” শব্দটা শুভম থিয়েটারে এসেই শিখেছে।

বাড়িতে মা- বাবা যদিও হয়তো চান  শুভম এর একটা সুস্থির জীবন, তবু তার সব নাটকেই তার মা – বাবা থাকেন দর্শকের আসনে। এটা তার কাছে প্রেরণার উৎস।

শুভম অভিনীত নাটকগুলি হল : বিচারের বেড়াজাল, আদাব, সিকিউরিটি, একটি নিরীক্ষা, চড়ুইভাতি, কলমওয়ালা, এক পাগলের ডায়েরি, শেষ বাজার, প্রান্তিক উপাখ্যান, রিং, চোর, নাসিকা পুরাণ, পাঁচকড়ির গপ্পো, মৃত্যুদেশ, অসুখ, বিনয়ের জীবন, সুখ, নকশীকাঁথার মাঠব, একটা ডিবলু ডিলু টিমটু টিলু ডুব ইত্যাদি। থিয়েটার করতে এসে  তীর্থঙ্কর চন্দ, সৌমিত্র বসু, মিনার্ভায় বিপ্লব বন্দ্যোপাধ্যায়, গৌতম হালদার, পেড্রো দা, ইচ্ছেমত নাট্যদলে অর্ণ মুখোপাধ্যায়, অভিনেতা অনির্বাণ, সৌরভ পালোধি, তুর্ণা দাস, সুজন মুখোপাধ্যায়, হারমোনি থিয়েটার সূত্রে দেবশঙ্কর হালদারের মত অভিনেতা অভিনেত্রীর সান্নিধ্যলাভ ও শিক্ষণ তার কাছে পরম পাওয়া।

এভাবেই প্রতিনিয়ত থিয়েটারের সঙ্গে জুড়ে আছে শুভম সাহা। জুড়ে থাকতে চায় শুভম।

(চলবে)

- Advertisement -
সাম্প্রতিক পোস্ট
এধরনের আরও পোস্ট
- Advertisement -