Sunday, July 13, 2025
Sunday, July 13, 2025
Homeনাটকথিয়েটারকে ভালবেসে থিয়েটারের সাধনায় নিয়োজিত নয়ন সাধক

থিয়েটারকে ভালবেসে থিয়েটারের সাধনায় নিয়োজিত নয়ন সাধক

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম : পর্ব ২৮

দেখতে দেখতে প্রায় এক দশকের কাছাকাছি থিয়েটারে জড়িয়ে আছে নয়ন সাধক। এই জড়িয়ে থাকা আসলে থিয়েটারের মায়ায় জড়িয়ে থাকা। থিয়েটার মানুষের সাথে মানুষের দূরত্ব ঘুচিয়ে দেয় – এই বিশ্বাসে থিয়েটারে তার জড়িয়ে থাকা। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে এক অন্য জগতের শিক্ষা পাওয়া যায় থিয়েটারে থেকে – এতদিন থিয়েটারে থাকার সুবাদে তার এমনই মনে হয়েছে। থিয়েটারে এতদিন থেকে নয়নের মনে হয়েছে, যে চরিত্রগুলো সে এক জীবনে হয়ে উঠতে পারবে না, থিয়েটার তাকে সেই চরিত্রগুলো হয়ে ওঠার সুযোগ হয়েছে। আর সেই ভালবাসা এবং ভাল লাগা থেকেই তার থিয়েটারে আসা।

স্কুল থেকেই নাট্য জীবন শুরু হয়েছিল নয়নের। স্কুলে সে পেয়েছিল জীবেশ কুমার ভট্টাচার্যের মত এক শিক্ষক। সেই শিক্ষকের হাত ধরেই স্কুলে তার থিয়েটার করা শুরু হয়। সুকুমার রায়ের “ঝালাপালা” নাটক থেকে তার অভিনয়ের পর্ব শেষ। স্কুল জীবনে অনেকেই থিয়েটার করলেও পরবর্তীতে আর যোগ থাকে না থিয়েটারের সঙ্গে। কিন্তু নয়নের ক্ষেত্রে তেমনটা ঘটেনি। থিয়েটার তার ভালবাসার ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে স্কুল জীবনের পরবর্তী জীবনেও। স্কুল থিয়েটারের পর কল্পতরু নামে একটি নাট্যদলে যুক্ত হয়েছিল নয়ন। আর এই কল্পতরু থেকেই নয়নের যোগাযোগ ঘটে যায় নাট্যজন ড: গৌরব দাসের সঙ্গে, যে গৌরব এই মুহূর্তে নানা পরিশ্রমী প্রযোজনার সূত্রে বাংলা থিয়েটারের এক অনিবার্য দ্রোণাচার্য হয়ে উঠেছে। এই গৌরব দাসই এখন নয়নের নাট্যশিক্ষক।

গৌরব দাসের সঙ্গে যোগাযোগ ঘটে যাওয়ার সূত্রেই গৌরব দাসের নাট্যদল অনুচিন্তনে থিয়েটার করার সুযোগ ঘটেছে নয়নের। নানা নাটকে নানা চরিত্রে অভিনয় করে চলেছে। নয়ন জানিয়েছে, এ পর্যন্ত অভিনীত চরিত্রগুলির মধ্যে “কিষাণ রাজ” নাটকে ব্যজু বাওড়া চরিত্রটি তার প্রিয় চরিত্র। এই চরিত্রটিকে সে বেশি ভালবেসেছে এই কারণে যে ব্যজু বাওড়া চরিত্রটির মধ্যে প্রচুর ঘাত প্রতিঘাত ও চড়াই উতরাই আছে। এই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে তার সবচেয়ে বেশি ভাল লাগে বলে সে জানিয়েছে।

থিয়েটারে যুক্ত থাকার সূত্রে সে জানিয়েছে, থিয়েটার জগৎ সম্পর্কে তার ধারণা খুব একটা খারাপ নয়। অবশ্য যদিও সে খুব বেশি দলে অভিনয় করেনি।কিন্তু যে কয়েকটা দলে সে অভিনয় করেছে তাতে খুব একটা খারাপ অভিজ্ঞতার সম্মুখীন তাকে হতে হয়নি। তাই এখনই সে নিজেকে থিয়েটার সম্পর্কে ধারণায় খুব অভিজ্ঞ বলে মনে করে না। যেটুকু ভাল অভিজ্ঞতা হয়েছে সেই অভিজ্ঞতা নিয়েই সে থিয়েটারের পথে চলতে চায়। তবে থিয়েটার করেও যে বেঁচে থাকা যায়, এমন একটা ধারণা তার ইতিমধ্যেই গড়ে উঠেছে।কারণ সে মনে করে, থিয়েটার মানে শুধু অভিনয় নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে আরো অনেক কিছু। যেমন, লাইট,সাউন্ড, ড্রেস,সেট এগুলোও থিয়েটারের অনিবার্য অঙ্গ। থিয়েটারে যে টেকনিসিয়ান আলো, সেট, সাউন্ড ইত্যাদির কাজ করছেন তিনি তো থিয়েটারের সঙ্গে জড়িয়ে থেকেই বেঁচে আছেন।

নয়নের পরিবারে নয়নই প্রথম, যে থিয়েটারে এসেছে।তাই প্রথম দিকে বাড়ির মানুষদের বোঝাতে মুশকিল হলেও এখন কাজটা সহজ হয়ে গেছে। প্রথমদিকে বাড়ির মানুষজনের ধারণা ছিল, থিয়েটারের জগৎটা খুব ভাল নয়, কিন্তু এখন তাদের ধারণাটা পালটে গেছে। থিয়েটার করার জন্য এখন বাড়ি থেকে তাকে উৎসাহই দেওয়া হয়। তার অভিনীত নাটকগুলি হল : উদ্বাস্তু অকালবোধন, কিষাণ রাজ, কাবুল কে পরিন্দে, ঘর, লেটার্স টু দ্য আনবর্ণ চিলড্রেন অফ ফতেমা জাহান, বিরসা কা জঙ্গল, ইন সার্চ অফ গডেস শীতলা।

বাংলা সাহিত্যে স্নাতক উত্তীর্ণ নয়ন এখন থিয়েটারে নিয়োজিত। সরজিৎ সাধক ও প্রভাতী সাধকের দুই সন্তানের অন্যতম নয়ন এখন থিয়েটারের সাধক। গড়ফা ধীরেন্দ্রনাথ মেমোরিয়াল হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং নেতাজী সুভাষ ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular