বিজয়কুমার দাস
থিয়েটারের নতুন প্রজন্ম : পর্ব ২৯
টালিগঞ্জের মেয়ে দেবযানীর অভ্যাস ছিল থিয়েটার দেখা। সে প্রথম থিয়েটার দেখেছিল নান্দীকার দলের। থিয়েটার দেখার পর আশ্চর্য একটা ভাল লাগা তাকে আচ্ছন্ন করেছিল। সে ঠিক করেছিল, সুযোগ পেলে সে থিয়েটার করবে। সেই ইচ্ছাকে সামনে রেখেই রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক বিভাগে ভর্তি হয়েছিল। আসলে থিয়েটারের প্রতি তার একটা গভীর ভালবাসা তৈরি হয়েছিল।
আর হয়তো সেজন্যেই থিয়েটারে যুক্ত হওয়ার ইচ্ছেটাও পূরণ হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বন্ধুর সূত্রে জানতে পারে, পারমিক ব্যারাকপুর নাট্যদলের একটা নাটকে একজন অভিনেত্রীর প্রয়োজন। একথা জেনেই নিজের থিয়েটার করতে চাওয়ার ইচ্ছাপূরণের সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি দেবযানী। বন্ধুটি তাকে পারমিক ব্যারাকপুর দলে নিয়ে যায়। সেই নাট্যদলে তখন “ফাঁস” নাটকের প্রস্তুতি চলছিল। অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যায় দেবযানী। সেই “ফাঁস” নাটকটিই দেবযানীর অভিনীত প্রথম নাটক।
পারমিক ব্যারাকপুরের নাটকে প্রথম অভিনয় করার পর তার মনে হয়, সে পারবে। থিয়েটারের ইচ্ছাটা তাকে পেয়ে বসে। যোগাযোগ ঘটে গেল টেন্থ প্ল্যানেট নাট্যদলের সাথে। বলা বাহুল্য, এই দলের তরুণ পরিচালক শরণ্য দে বেশ কয়েকটি প্রযোজনার মাধ্যমে টেন্থ প্ল্যানেট থিয়েটার মহলে স্থান করে নিয়েছে। সেই দলের সাথে যোগাযোগ ঘটে গেল দেবযানীর। এখন সে টেন্থ প্ল্যানেট দলের একজন দায়বদ্ধ অভিনেত্রী। এই দলের কুশীলবরা প্রায় সকলেই বয়সে তরুণ তরুণী।তাই এই দল এখন দেবযানীর নিজের দল হয়ে উঠেছে। শুধু অভিনয় নয়,দলের সব কাজেই যুক্ত থাকে দেবযানী।

টেন্থ প্ল্যানেট দলে অভিনীত সাদাত হাসান মান্টোর “ঠান্ডা গোস্ত” নাটকে কালোয়ান্ত কাউর চরিত্রটি তার অভিনীত প্রিয় চরিত্র। কিন্তু কেন এই চরিত্রটি প্রিয়?… এই প্রশ্নের উত্তরে দেবযানী জানিয়েছে, এই চরিত্রটি একটু অন্যরকম। বেশ কিছু প্রসেসের মাধ্যমে চরিত্রটির সাথে একাত্ম হতে হয়েছিল। দলের নির্দেশক শরণ্য দে তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করে চরিত্রটি বুঝতে সাহায্য করেছিল। এমন একটি চরিত্রে মঞ্চে দর্শকের সামনে অভিনয় করতে তার অদ্ভুত একটা অনুভূতি হয়েছিল।একটা ভাল লাগার অনুভূতি। এই চরিত্রে অভিনয় করে নির্দেশক সহ দর্শকের প্রশংসা আদায় করে নিয়েছিল দেবযানী।তাই এই জটিল চরিত্রটি তার প্রিয় চরিত্র।চরিত্রটি নাটকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অভিনয়ের পরে সবার প্রশংসা পেয়ে অদ্ভুত একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছিল দেবযানীর।
এ পর্যন্ত দেবযানী অভিনীত নাটকগুলি হল : ফাঁস, থ্রী পেনি অপেরা, গ্যালিলিও, ঠান্ডা গোস্ত, ম্যাকবেথ, এপিটাফের মৃত্যু, সেলসম্যান। প্রতিটি নাটকেই দেবযানী খুব৷ দায়িত্বের সঙ্গে অভিনয় করেছে। দেবযানী জানিয়েছে, এখন থিয়েটার করতে করতে একটা আত্মবিশ্বাস জন্মেছে। এখন তার মনে হয়, যে কোন চরিত্রকেই সে চ্যালেঞ্জ হিসাবে গ্রহণ করে মঞ্চে তার অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করতে পারে।
অবশ্য দেবযানী বারবার জানিয়েছে, তার এই অভিনেত্রী হয়ে ওঠার পিছনে টেন্থ প্ল্যানেট এর নির্দেশক শরণ্য দে এর ভূমিকা স্মরণীয়। অভিনীত প্রতিটি চরিত্র তাকে বুঝতে সাহায্য করেছে নির্দেশক শরণ্য।
থিয়েটারে অভিনয় করলেও খুব বেশি দলের সঙ্গে তার যোগ নেই। তাছাড়া থিয়েটারকে কেন্দ্র করে খুব বেশি দলের সাথে তার যোগ ঘটেনি। তাই থিয়েটার জগৎ সম্পর্কে তার বিশেষ কিছু জানা হয়নি। তবু তার মনে হয়েছে, অভিনয় একটা শিল্পকলা। সেই শিল্পের সাথে সততার সাথে যুক্ত থাকতে পারলে খুব একটা খারাপ ধারণা গড়ে ওঠার কারণ নেই। নিজের দল, নিজের অভিনয়, দলের কাজ, সবার সাথে মিলেমিশে থাকতে তার ভালই লাগে বলে সে জানিয়েছে। এখনও পর্যন্ত খারাপ ধারণা গড়ে ওঠার কারণ খুঁজে পায়নি দেবযানী।
থিয়েটার করে কি বাঁচা যায়?… এই প্রশ্নের উত্তরে দেবযানী জানিয়েছে, এই নিয়েও সে খুব গভীরভাবে ভাবেনি। থিয়েটারকে ভালবেসেই সে থিয়েটার করছে। আরো মন দিয়ে সে থিয়েটারটা শিখতে চায়।তার পরে তার কাছে বাঁচার প্রশ্ন। সে মনে করে, অনেক কিছু শেখার আছে ভাল অভিনেত্রী হতে গেলে। আরো ভাল অভিনয়ের জন্য সে এখন শুধু শিখতে চায়।
দেবযানীর মা রমা চক্রবর্তী ও বাবা তাপস চক্রবর্তী তাকে উৎসাহই দেন বলে সে জানিয়েছে। ৪ বছরের থিয়েটার জীবনের ২ বছর সে যুক্ত টেন্থ প্ল্যানেটের সঙ্গে। কলেজে যেহেতু তার পড়াশুনো তার নাটক নিয়েই তাই বাড়িতে মা বাবা উৎসাহ দেন। পাশাপাশি নাটক নিয়ে পড়াশুনো করে নাটকটা করতে পারছে বলেই সে সন্তুষ্ট। বিসর্জন, রক্তকরবী, নবান্নর মত নাটকের সাথে তার যোগ সাধিত হয়েছে। তাই থিয়েটার তার কাছে প্রিয়। থিয়েটারে যুক্ত হয়ে সে যেন প্রতি মুহূর্তে নিজেকে আবিষ্কার করে চলেছে। তাতেই তার আনন্দ।