Tuesday, November 18, 2025
Tuesday, November 18, 2025
Homeনাটকনীলাঞ্জন থিয়েটারে মজেছে বালকবেলা থেকেই

নীলাঞ্জন থিয়েটারে মজেছে বালকবেলা থেকেই

বিজয়কুমার দাস

থিয়েটারে নতুন প্রজন্ম : পর্ব ৩৬

বীরভূমের লাভপুরে দিশারি সাংস্কৃতিক চক্র ৩৩ বছরের নাট্যদল। লাভপুর হল কথাসাহিত্যিক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্মৃতিবিজড়িত। তারাশঙ্কর নিজে লাভপুরে বহু থিয়েটারে অভিনয় করেছিলেন। সেই লাভপুরের দল দিশারির বৈশিষ্ট্য হল,তারা এ পর্যন্ত যতগুলি নাটক করেছে সবগুলিই তারাশঙ্কর আশ্রিত গল্প উপন্যাস কেন্দ্রিক। আর এই নাট্যদলের এক নাটকপাগল সদ্য যুবকের নাম নীলাঞ্জন সিংহ। ছোট থেকেই সে দেখেছে, বাবাকে থিয়েটার করতে, তাই অজান্তেই থিয়েটারের নেশায় মজে গেছে নীলাঞ্জন।

কেন থিয়েটার করতে আসা? এ প্রশ্নের উত্তরে সে অম্লানবদনে জানাতে পারে, থিয়েটার করে মনের আনন্দে। এই শিল্পটাকে সে ভালবেসে ফেলেছে, তাই থিয়েটার করতে আসা।

লাভপুরের যাদবলাল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ নীলাঞ্জন দিশারির কোন নাটকের রিহারসালে প্রথম দিন থেকে শেষদিন পর্যন্ত জড়িয়ে থাকে। মা মিলি সিংহ এবং বাবা পার্থপ্রদীপ কোনদিনই ছেলের আগ্রহে বাদ সাধেনি। নাটকের রিহারসালের প্রথম দিন থেকে মঞ্চায়ন পর্যন্ত প্রতিটা দিন নীলাঞ্জন জড়িয়ে থাকে। শুধু অভিনয় নয়, নাটকের মঞ্চসজ্জা, সেট তৈরি সব কিছুতেই হাত লাগায়। অভিনয় নিয়েও তার কোন বাছবিচার নেই। তাকে মানাবে এমন যে কোন একটা চরিত্র পেলেই সে খুশি।

দিশারি সাংস্কৃতিক চক্র ছাড়াও লাভপুরের তারাশঙ্কর সব পেয়েছির আসরের নাটকেও সে অভিনয় করেছে। যে কোন রকম একটা চরিত্রে অভিনয় করতে পারলেই সে খুশি। সে কোন ভিড়ের দৃশ্যে হোক বা দু চারটে সংলাপের চরিত্রই হোক – সবেতেই খুশি সে। সে মনে করে, দলের থিয়েটারে একজন নাট্যকর্মী হিসাবে জড়িয়ে থাকতে পারাটাই থিয়েটারের কাজ। এ পর্যন্ত যতগুলো নাটকে (প্রায় কুড়িটা) সে অভিনয় করেছে তার মধ্যে “রাধা” নাটকের গোকুলানন্দ তার প্রিয় চরিত্র। কেন প্রিয়? জানতে চাইলে সে বলেছে, “রাধা” নাটকের গোকুলানন্দ বৈষ্ণব ধর্মের ব্যভিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক প্রতিবাদী চরিত্র, তাই চরিত্রটি তার প্রিয়।

নীলাঞ্জন মনে করে, থিয়েটার করলে মানসিকভাবে সুস্থ থাকা যায়। তাছাড়া বিভিন্নরকম চরিত্রে অভিনয় করে নিজের অভিনয় দক্ষতার পরিমাপ করা যায় বলেই সে থিয়েটার করে।শুধু তাই নয়, থিয়েটার একজনকে আদর্শ মানুষ হয়ে উঠতে সাহায্য করে। কারণ, যে কোন নাটকই আদর্শ প্রতিষ্ঠা বা সত্যের জয় ঘোষণা করা নাটক। স্বভাবতই ভাল মন্দ চিনতে সাহায্য করে থিয়েটার, তাই সে থিয়েটারে জড়িয়ে থাকতে ভালবাসে। বাড়িতে যেহেতু বাবা থিয়েটারকর্মী, তার বাড়িতে এলাকার থিয়েটারকর্মীদের নিত্য যাওয়া আসা, তাই থিয়েটার করা নিয়ে তার কোন শাসন বারণ নেই। এ পর্যন্ত দিশারি দলে অভিনীত সব নাটকই সে করেছে তার বাবা পার্থপ্রদীপের নির্দেশনাতেই।  ডাকহরকরা, বাউল, জাগরণ, জটায়ু, স্থলপদ্ম, রাধা, শশে ডোম, মতিলাল, উত্তরণ, প্রতীক্ষা – দিশারির প্রযোজনায় তারাশঙ্কর আশ্রিত এইসব নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছে নীলাঞ্জন। নানা বাদ্যযন্ত্র বাজানো, সেট সাজানো ইত্যাদি কাজেও সে দক্ষ।

নীলাঞ্জন এক কথায় থিয়েটারকে মনে প্রাণে ভালবাসা এক নাট্যকর্মী। দলে রিহারসাল শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সে উপস্থিত থাকে। রিহারসালের ব্যবস্থাপনায় উদ্যোগী ভূমিকা নেয়। আসলে থিয়েটার তার কাছে অফুরন্ত আনন্দের এক জগৎ। তাই সে মনের আনন্দে মজেছে থিয়েটারে।

RELATED ARTICLES
- Advertisment -

Most Popular