নিজস্ব সংবাদদাতা
কারোর জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদ কখনও আনন্দের খবর নয় যে সেটাকে সেলিব্রেট করা যায়, আসলে সম্পূর্ণ বিষয়টি ভীষণ বেদনার। এরকমই মনে করে এ আর রহমান ও সায়রা বানুর বিবাহ বিচ্ছেদের সায়রার পক্ষের আইনজীবী বন্দনা শাহ। সংবাদ মাধ্যমের এক ইন্টারভিউতে তিনি এরকমই মন্তব্য করেন। তিনি আরও জানান তার মক্কেল ও রহমান সাহেব দুজনেই তাদের বিচ্ছেদের ঘটনার বিষয়কে ব্যক্তিগত স্তরেই রাখতে চান আর তিনিও এই সম্পর্কে কোনো কথা বলার অধিকার রাখেন না। অবশ্য তিনি এটা জানান, আপনারা সকলেই জানেন যে যখন কোনো বিবাহ যাপন সমাপ্তির দিকে যায়, সেটা ঊভোয় পক্ষেরই এক বেদনার দিক। কখনও কারোর জীবনে তা কাঙ্ক্ষিত বা সুখকর নয়।
এদিকে অন্য একটি মার্কের সাথে মোহিনীর দে-র ডিভোর্সের সংবাদকে রহমান দম্পতির বিচ্ছেদের সাথে সংযোগ স্থাপনের চেশষ্টা করেন কিছু মিডিয়া, যেই বিষয়টিকে আইনজীবী বন্দনা শাহ এক কথায় উড়িয়ে দেন, উক্ত বিচ্ছেদের সাথে রহমান দম্পতির বিচ্ছেদের কোনো সম্পর্ক নেই বলে ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্ত তাদের দুজনের এবং অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত। তিনি আরও বলেন, সেলিব্রিটিদের এই বিচ্ছেদর খবর অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সাধারণ বিচ্ছদের অপেক্ষায়। তবে সকলেরই একটা ব্যক্তিগত রাখার স্বাধীনতা আছে, তিনি তাদের আইনজীবী বলে তাদের সেই প্রাইভেসীকে মান্যতা দেওয়াকে সঠিক বলে মনে করেন।
তিনি সংবাদ মাধ্যমে আরও জানান, যে বেশ কিছু কাপল তার কাছে আসেন, যেখানে বিচ্ছেদ নিয়ে তাদের মধ্যে সমস্যা দেখা যায়, তিনি তাদেরকে ম্যারেজ কাউন্সেলরের সাহায্য নেবার কথা বলেন। এক্ষেত্রে এক জোড়া দম্পত্তির বিবাহ বিচ্ছেদ রোধ হয়েছিল।
মোহিনী দে ও রহমানকে বিভিন্ন কনসার্টে দেখা যাওয়ার অর্থ তারা দুজনে সঙ্গীত শিল্পী। আর দুজনেরই জীবনে যখন বিবাহ বিচ্ছদের ঘটনার কথা মিডিয়ার কাছে আসে, তখনই তা নিয়ে সস্তার সংবাদ চর্চা শুরু হয়ে যায়। যা আসলেই অসত্য। দুটি ভিন্ন ঘটনা। দুটি ভিন্ন পরিবার।
১৯৯৫ সালের ১২ মার্চ রহমান ও সায়রার বিবাহ হয়। এ আর রহমানের মা যখন পাত্রের জন্য মেয়ে খুঁজছিলেন, তখন প্রথমে সায়রার ছোট বোন মেহারকে পছন্দ করেছিলেন। কিন্তু তারপর সায়রার সাথে তাঁর দেখা হবার পর তাঁর মনে হয়েছেল যে ছেলের জন্য সায়রাই যোগ্য। সায়রা বানু আগে থেকেই এ আর রহমানের গানের ভক্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মায়ের পছন্দ করা সেই পাত্রীকে বিয়ে করার পরও দীর্ঘ ২৯ বছরের দাম্পত্য জীবন বিচ্ছেদের পথে এগোলো।
তাঁদের এই বিচ্ছেদের সংবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভাইরালও হয়ে যায়। বেশ কিছু মুখরোচক সংবাদ পড়লে বা শুনলে চমকে যেতে হয়। রহমান নাকি বিবাহের হনিমুনের রাতে স্ত্রীর সাথে না থেকে আলাদা ঘরে থেকেছেন আর সেখানে দীর্ঘক্ষণ বীণা বাজানোর অভ্যাসে মগ্ন ছিলেন। শিল্পের প্রতি তার নিবেদিতপ্রাণ এ বিষয়ে কারোরই কোনো সন্দেহ নেই, সেই রাতে তিনি যদি কোনো সময় তার সুর সৃষ্টির জন্য একান্তে সুরের সাগরে ডুবে থাকেন তাহলে নেটজেনদের কি করার আছে! কিন্তু এরকমই একটি কথা যদি দির্ঘ ২৯ বছর পর মিডিয়ায় চাউর করে দেওয়া যায়, তাহলে সেটা নেটিজেনরা হাপুস হুপুস করে গিলবনে, এমনটা ভাবাই যায়।
রহমান দম্পতির তিন সন্তান রয়েছে। দুই মেয়ের নাম খাতিজা ও রহিমা। আর ছেলের নাম আমিন রেহেমান। স্বাভাবিকভাবেই এই ডিভোর্সের কারণে তাদের পরিবার বেশ সমস্যাতেই দিন কাটাচ্ছেন। যদিও অস্কারজয়ী সুরস্রষ্টা রহমান পেশার কারণে তার কাজের প্রতি বেশী মনোনিবেশ করছেন। এখানে বলা যায়, বর্তমানে তিনি ‘ছাওয়া’, ‘থাগ লাইফ, ‘লাহোর ৪৭’ এবং ‘জিন্নির’ মতো প্রজেক্টে কাজ করছেন।
আইনজীবী বন্দনার কথায় ‘ অত্যন্ত সৌজন্য ও মর্যাদার সাথে ২৯ বছ্র তাঁরা দাম্পত্যজীবন অতিবাহিত করেছেন। শুধু শেষটা রূপকথার মতো হল না বলে তাঁরা কিন্তু তাঁদের আচরণ বদলাননি। সৌজন্য ও মর্যাদা অটুট রেখেছেন। আসলে কেউ বিচ্ছেদ করবেন বলে বলে বিবাহ করেন না’।
ঠিক তাই একটি বৈবাহিক সম্পর্কে টিকে থাকে দুজনের বিশ্বাস আর সমঝোতার ওপর ভিত্তি করে। সুরকার রহমান যখন তাদের বিচ্ছেদের কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন তখনও তারীক্স হ্যান্ডেল বয়ান ছিল আবেগমথিত। ‘ত্রিশ বছরের মেইল ফলক ছোঁয়ার আশায় ছিলাম আমরা। কিন্তু মনে হচ্ছে সব কিছুরই একটা অদৃশ্য সমাপ্তি থাকে।“